জন্মভূমি ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধকল সামলে এবার দল গোছানোর উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিভাগভিত্তিক দায়িত্বপ্রাপ্ত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের দ্রুত সময়ের মধ্যে সব জেলা, উপজেলা ও মহানগর, পৌর আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন সম্পন্ন করা, সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত কমিটিগুলো পূর্ণাঙ্গ করা এবং তৃণমূলে অভন্তরীণ কোন্দল বা বিরোধ মিটিয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই তৎপরতা চলতি ফেব্রুয়ারি মাস ও আগামী মাস মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক সূত্র।
সূত্রমতে, যেসব জেলা, উপজেলা ও মহানগর ও পৌর আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন হয়নি, সেগুলোর সম্মেলন দ্রুত করার নির্দেশ দিয়েছেন দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা। সম্মেলন হলেও এগুলোর যেসব কমিটি পূর্ণাঙ্গ হয়নি, সেগুলোও দ্রুত পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া অভ্যন্তরীণ কোন্দল বা বিরোধে মিটিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে।
শুক্রবার কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ শাখা, ঢাকা জেলা শাখা এবং সব সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের সঙ্গে যৌথসভা করেন দলটির শীর্ষ নেতারা। এতে মেয়াদ উত্তীর্ণ কমিটি নতুন করে গঠনসহ দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ মেটাতে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্তদের দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনা জানিয়ে দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
কাদের বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ বিভিন্ন শাখার সম্মেলন, সহযোগী সংগঠনের প্রত্যকের অসমাপ্ত সম্মেলন, কমিটি গঠন প্রক্রিয়ায় বিলম্বসহ সাংগঠনিক সমস্যার সমাধান করা জরুরি। সমস্যা ও বিরোধ থাকলে তা সমাধানে অবিলম্বে কাজ শুরু করতে নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা, ৪৯৫টি উপজেলা রয়েছে। এরমধ্যে ৩০টির বেশি জেলা-উপজেলায় কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও যথাসময়ে সম্মেলন হয়নি। ২৭টি জেলা ও মহানগরে কোন্দল বা বিরোধ রয়েছে। আর ১৮টি জেলা ও মহানগরে সম্মেলন হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই।
এ বিষয়ে উপদফতর সম্পাদক সায়েম খান জানান, নির্বাচনের আগে ৬৯ জেলা এবং ৩৫০টির বেশি উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়েছে। এসব জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি রয়েছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি ৪-৫টির মতো জেলায়। উপজেলার সংখ্যা কিছুটা বেশি হবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ২০১৯ সালের ৩০ নভেম্বর। পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয় ২০২০ সালের ১৯ নভেম্বর। নিয়ম অনুযায়ী, ২০২২ সালের নভেম্বরে সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও তা এখন পর্যন্ত হয়নি। এর আগে ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের অধীনে ২৪টি থানা, ৭৫টি ওয়ার্ড, ৫টি ইউনিয়ন এবং ৪০০টি ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে ইউনিটগুলোতে প্রথমবারের মতো সম্মেলন করে কমিটি দেওয়া হয়েছে। তবে সম্মেলন হলেও কোনও ওয়ার্ড ও থানায় নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের অধীনে থাকা ৮০২টি ইউনিট, একটি ইউনিয়ন, ৬৪টি ওয়ার্ড ও ২৬টি থানায় সম্মেলন হলেও কোথাও কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি বড় সংগঠন। সব সময়ই গোছালো থাকে। কমিটির মেয়াদ শেষ হলে সম্মেলন হয়। এসব সম্মেলন, কমিটি দ্রুত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’
‘দলকে নতুন করে সংগঠিত করা হচ্ছে তৃণমূল পর্যায় থেকে’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তৃণমূলের যেখানে যেখানে সমস্যা আছে, সেখানকার নেতাদের ঢাকায় ডেকে বা এলাকায় গিয়ে তা সমাধান করা হবে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কারণে এই প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। এখন আবার নতুন করে শুরু হয়েছে।’
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান বলেন, ‘আমাদের মহানগরের সম্মেলন আগেই হয়ে গেছে। থানাগুলোর সম্মেলনও হয়েছে। এখন কেবল কমিটি দেওয়া বাকি আছে। প্রস্তাবিত নামও জমা দেওয়া আছে, নেত্রী অনুমোদন করলেই ঘোষণা করা হবে। ’