আহাম্মদ ইব্রাহিম অরবিল, দশমিনা(পটুয়াখালী) : পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার প্রধান ২টি নদী তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ তীরবর্তী গ্রামগুলোর জেলেরা হতদরিদ্র। জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে দাদন ব্যবসায়ীদের লাল খাতায় লিখিয়ে তাদের চড়া সুদে ঋণ নিতে হয়। জেলেদের কষ্টের আয়ের টাকার সবটাই দাদন ব্যবসায়ীদের পকেটে চলে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর বাঁশবাড়িয়া বগী খালগোড়া, বাঁশবাড়িয়া লঞ্চঘাট, আমবাড়িয়া, হাজিরহাট তেঁতুলিয়া নদীর তীরে অবস্থিত। গোলখালী, সৈয়দ জাফর, কাঁলারানী, আউলিয়াপুর, পাতারচর, সেন্টার বাজার, পাগলা বাজার, বউ বাজার, শাহজালাল বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর তীরে অবস্থিত। দয়াময়ী খালের পাশে রণগোপালদী হাট, সুতাবাড়িয়া খালের পাশে আলীপুর হাট ও দশমিনা সদর বাজারে রয়েছে শতাধিক মাছের গদি। গদি মালিকরা সাধারণ জেলেদেরকে দাদন দিয়ে থাকে।
উপজেলায় মানতা জেলে হজু, বাদশা, হামেলা, স্থানীয় জেলে নজরুল, ইব্রাহিম ও আনোয়ার জানায়, জেলেরা যে পরিমাণ টাকা দাদন নেন, প্রতিদিন সেই টাকার ১৫ শতাংশ দাদন ব্যবসায়ীদের দিতে হয়। পাশাপাশি জেলেদের নিজ নিজ দাদন ব্যবসায়ীর গদিতে (আড়তে) এনে মৌখিক নিলামে মাছ বিক্রি করতে হয়। আর নিলামে উঠার আগেই জেলেদের মজুত মাছের এক-দশমাংশ গদিদার সরিয়ে রাখেন। সরিয়ে ফেলা মাছ পরে আবার নিলামে তুলে বিক্রি করা হয়। আর সবটাই লিখে রাখা হয় লাল খাতায়। একবার এক গদি থেকে দাদন নিয়ে কোন জেলে পরিশোধ করতে পারে না নিজ আয়ে। এক গদির দেনা মিটাতে হাত পাততে হয় আরেক গদিতে। চরবোরহান গ্রামের বশার মাঝি বলেন, গদিতে প্রথমে মাছ, এরপর নগদ টাকা কেটে নেন। এভাবে মাছ বিক্রির অর্ধেক টাকা তাঁদের পকেটে চলে যায়। এই কারণে দিনরাত পরিশ্রম করেও আমাদের সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকে। বাঁশবাড়িয়া লঞ্চঘাট বাজারের গদি মালিক মিরা খাঁ জানায়, গদি থেকে দাদন নিয়ে নদীতে মাছ ধরেন। জেলেদের মাছ ধরা জালের পূনঃ বুনন করতে অনেক টাকার দরকার হয়। জেলেরা এত টাকা জোগার করে জালের পূনঃ বুনন করতে পাওে না বলে দাদন নিতে বাধ্য হয়। সেন্টার বাজার গদি মালিক মোঃ ফরহাদ খলিফা জানায়, জেলেরা আমাদের কাছ থেকে দাদন নিয়ে মাছ ধরেন। আমরা কাউকে জোর করে দাদনের টাকা দিই না। জেলেরা গরিব। নিজেদের প্রয়োজনে আমাদের কাছে এসে তাঁরা টাকা নেন। সারা দেশের মতো একই নিয়মে আমরা জেলেদের কাছ থেকে মাছ ও টাকা আদায় করি। সরকারিভাবে জেলেদের জন্য সুদবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করা হলে হয়তো দাদন ব্যবসা বন্ধ হয়ে হবে।
দশমিনায় দাদন ব্যবসায়ীদের লাল খাতায় জেলেদের টাকা

Leave a comment