বিধান চন্দ্র ঘোষ, দাকোপ (খুলনা) : খুলনার দাকোপে চালনা পৌসভাসহ উপজেলার সর্বত্র বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রোব আশংকা জনক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে পথচারীসহ এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ইতি মধ্যে কুকুরের কামড়ে বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছে। এমনকি গরু ছাগল মাঠে ছেড়ে পর্যন্ত দিতে পারছে না বলে অনেকের অভিযোগ। এতে সরকারি ভাবে কুকুরের কামড়ের আরআইজি ভ্যাকসিনের সরবরাহ না থাকায় বিপাকে পড়ছেন দরিদ্র রোগীরা।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন যাবৎ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বেওয়ারিশ কুকুরের অবাধ বিচরন দেখা গেলেও সম্প্রতি ব্যাপক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে পৌর এলাকার বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে এসব কুকুরের দল বেশি দেখা যায়। রাত ৯টা পর লোকজনের চলাচল একটু ফাঁকা হলেই কুকুরগুলো জড় হয় এবং পথচারীদের উপর চিৎকার দিয়ে আক্রমন করতে দেখা যায়। এমনকি কুকুরের ভয়ে স্কুলগামী কোমলমতি শিশুরা পর্যন্ত স্কুলে যেতে পারছে না। কোন কোন সময় দেখা গেছে ছেলে মেয়েরা স্কুলে যাওয়ার সময় তাদের হাতে খাবার থাকলে এসব কুকুর আক্রমন করে এবং ভয়ে তাদের খাবার ফেলে পালাতে। এতে অভিভাবকরাও আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। আবার অনেক সময় দেখা গেছে এসব কুকুর বিভিন্ন খাবার হোটেলে প্রবেশ করতে।
তা ছাড়া কুকুরের কারণে মটর সাইকেল চালকরা দুর্ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছেন। এ ছাড়া যেখানে সেখানে কুকুরের মলত্যাগেও পরিবেশ মারাত্নক ভাবে দূষিত হচ্ছে। বেওয়ারিশ কুকুর নিধনে আইনগত বাধা থাকায় দিন দিন এদের বংশবৃদ্ধি পেয়ে ব্যাপক আকার ধারণ করছে। এদের সুনির্দিষ্ট খাবারেরও কোনো ব্যবস্থা নেই। সাধারনত কুকুরের শরীরে জলাতংক রোগের জীবানু বহন করে থাকে। কুকুরে কামড়ালে রোগীর জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লে¬ক্স বা পৌরসভায়ও সরকারী বরাদ্ধের কোন ভ্যাকসিন পাওয়া যাচ্ছে না। মাঝে মধ্যে আমদানী নির্ভর ও উচ্চ মূলের এ ভ্যাকসিন বাইরের ঔষুধের দোকানে পাওয়া গেলেও দোকানীরা ইচ্ছামতো দাম নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এখনই এ কুকুরের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে ভূক্তভোগিরা মনে করেন।
পানখালী এলাকার রুইদাস রায় জানান, কিছুদিন আগে তার ছাগল মাঠে ছেড়ে দিলে ২টি ছাগল কুকুরে কামড়ে মেরে ফেলেছে। একই এলাকার রনজিত রায় বলেন, তার গরুর ১টি বাছুর একই ভাবে কুকুরে মেরেছে। বর্তমানে ওই এলাকার প্রত্যেকের গরু, ছাগল, ভেড়া মাঠে ছেড়ে দেয়ার পর মাঝে মধ্যে পাহারা দিতে হচ্ছে। প্রত্যেক এলাকায় একই অবস্থা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
পৌরসভার নলোপাড়া এলাকার মিনারুল শেখ জানান, তাকে কুকুরে কামড়ানোর পর হাসপাতালে এবং পৌরসভায় গিয়ে ভ্যাকসিন না পেয়ে তিনি গ্রাম্য কবিরাজের চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনার পূর্বেও ওই এলাকার বেশ কয়েকজন কুকুরের কামড়ে আহত হয়েছে বলে তিনি জানান। বিষযটি তিনি পৌর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পায়নি।
চালনা সবুজ পল্লী এলাকার আনিচুর রহমান খানজাহান বলেন, কুকুরের আক্রমনের ভয়ে কোমলমতি শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না। ভয়ে তার মেয়েকেও অতিরিক্ত টাকা খরচ করে প্রতিদিন ভ্যানে স্কুলে পাঠাতে হচ্ছে।
তিলডাংগা এলাকার দুলাল চন্দ্র মন্ডল জানান, কয়েকদিন আগে তার শাশুড়ি শামেলা গোলদারকে কুকুর কামড়ালে হাসপাতালে ভর্তি করে। পরে স্থানীয় বাহিরের দোকান থেকে ৪০০ টাকা করে ৪টি ভ্যাকসিন কিনে দিতে হয়েছে। আর খুলনা থেকে ১টি ভ্যাকসিন ১০০০ টাকা দিয়ে কিনে আসতে হয়েছে। এতে তার ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এবিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচএ) ডাঃ সুদীপ বালা বলেন, বর্তমানে হাসপাতালে সরকারী বরাদ্ধের কোন ভ্যাকসিন নেই। ভ্যাকসিন পুরিয়ে যাওয়ায় চাহিদা পাঠানো হয়েছে। কুকুরে কামড়ানো কোন রোগী আসলে আমরা বাইরে থেকে ভ্যাকসিন এনে অথবা রোগীরা ভ্যাকসিন কিনে আনলে তা দিয়ে চিকিৎসা করছি। কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীদের র্যাবিস ভ্যাকসিনের পাশাপাশি কামড়ে ক্ষত সৃষ্টি হলে আরআইজি ভ্যাকসিন দিতে হয়। এছাড়া বিড়াল, ইঁদুরের কামড়ে আক্রান্ত রোগীকেও একই ধরনের ভ্যাকসিন দিতে হয়। সাধারত দুই ধরনের ভ্যাকসিন দিতে হয়। একটি ভ্যাকসিন চামড়ার নিচে। এটি একজন রোগীকে তিন ডোজ আর যেটি মাংসের ভেতর দিতে হয় সেটি চার ডোজ।
এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও চালনা পৌর প্রশাসক আসমত হোসেন জানান, আগামী মাসিক মিটিংয়ে কুকুরের উপদ্রোপের বিষয়ে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দাকোপে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রোবে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

Leave a comment