তালা প্রতিনিধি : দীর্ঘ ৩৬ বছরেও সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ৫০টি ভূমি মৌজার ফাইনাল প্রিন্টপর্চা না হওয়ায় লাখো মানুষ চরম ভোগান্তির শিকার হয়ে দিনের পর দিন এসিল্যান্ড অফিসে গিয়ে ধর্ণা দিচ্ছেন। এ দিকে ফাইনাল প্রিন্টপর্চা না হওয়ায় সাধারণ মানুষ জমি রেজিষ্ট্রি করতে চরম বিড়ন্বার শিকার হচ্ছেন। অন্যদিকে সরকার বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
তালার পাটকেলঘাটায় অবস্থিত এসিল্যান্ড অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৮ সালে সরকার তালা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের ভূমি জরিপের কাজ শুরু করে। তালার মোট ১৫০টি মৌজার মধ্যে ১০০টি মৌজার কাজ শেষ হয়। বাকী ৫০টি জরিপের কাজ দীর্ঘ ৩৬ বছরেও শেষ হয়নি। ওই অবস্থায় লাল ফিতা দিয়ে ফাইল বন্দি অবস্থায় রয়েছে। আর সাধারণ দিন আনা দিন খাওয়া মানুষগুলো চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। এবিষয়ে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত নতুন ভূমিমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ-এমপির নিকট তদন্তপূর্বক দ্রত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে।
এ বিষয়ে খলিষখালী ভূমি কর্মকর্তা সিদ্দিকউল্লাহ জানান, খলিষখালী ও মাগুরা ইউনিয়ন মৌজার মধ্যে সবচেয়ে খলিষখালী মৌজা অনেক বড়। ১৯৬২ সালে এসএ রেকর্ড অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত ভূমি উন্নয়ন কর ও আদায় নাম জারির কাজ চলছে। এসএ রেকর্ডগুলো দীর্ঘ দিনের পুরাতন হওয়ায় ভলিউম বইগুলো ছেড়া ও জরাজীর্ণ হওয়ায় অফিসিয়াল কাজ করতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
তিনি আরও জানান, অবিলম্বে মৌজাগুলির গেজেট প্রকাশিত হলে অফিসিয়াল কাজ করতে সুবিধা হবে এবং জমির মালিকগণ উপকৃত হবে।
ভুক্তভোগি শাহিন আলম জানান, আমি জমি রেজিষ্ট্রি করার জন্য ভূমি অফিসে যাই। কিন্তু বাংলাদেশ সার্ভে যে রেকর্ড আছে তা দিয়ে রেজিষ্ট্রি হবে না। কারণ হিসেবে জানা গেছে, সরকার ২০২৩ সালের প্রথম মাসে উক্ত রেকর্ড দিয়ে জমি রেজিষ্ট্রি হবে না মর্মে সরকার আইন জারি করেছে। কিন্তু জমি রেজিষ্ট্রি করতে গেলে বর্তমান মিউটিশন ছাড়া সম্ভব নয়। আর মিউটিশন করতে গেলে এসএ খতিয়ানের সব দাগের ওয়ারিশদের নামে খাজনা দিয়ে চেক কাটতে মোটা অংকের টাকা গুনতে হয় পকেট থেকে। শুধু তাই নয়, মিউটিশন করতে গেলে সব মিলে প্রায় ৮-৯ হাজার টাকা নিয়ে মাঠে নামতে হয়। আর মাসের পর মাস নায়েব থেকে শুরু করে এসিল্যান্ড অফিসে হাঁটতে হাঁটতে পায়ের জুতা ক্ষয়ে যায়। তার পর মেলে একটি মিউটিশন রেকর্ড। তারপর জমি রেজিষ্ট্রি করতে পোহাতে হয় চরম ভোগান্তি। কারণ রেজিষ্ট্রি করতে যদি কোন কাগজের ক্রটি থাকে সেখানে গুনতে হয় মোটা অংকের টাকা। তাহলে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?
ইসলামকাটি সাব রেজিষ্ট্রি অফিসের দলিল লেখক রেজাউল করিম জানান, তালার খলিষখালী ও মাগুরা ইউনিয়নের প্রিন্টপর্চা না হওয়াতে সাধারণ মানুষ জমি রেজিষ্ট্রি করতে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। তিনি অবিলম্বে যেসব মৌজাগুলি প্রিন্টপর্চা হয়নি সেগুলি দ্রুত প্রিন্টপর্চা হওয়ার জন্য ভূমিমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এবিষয়ে তালা উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা মোঃ জাকারিয়া খান জানান, আমি মাত্র ৭-৮ মাস এই অফিসে যোগদান করেছি। এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। সরকার যখন প্রিন্টপর্চা আমার এখানে দিবে তখন আমি এটা বিলি করে দেব। তবে তিনি আরও জানান, এই প্রিন্টপর্চা নিয়ে সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
দীর্ঘ ৩৬ বছরেও ৫০টি মৌজার প্রিন্টপর্চা অন্ধকারে
Leave a comment