বিশেষ প্রতিবেদক
ঘনিয়ে আসছে জাতীয় নির্বাচনের সময়। নির্বাচনকে সামনে রেখে কথা ও কর্মসূচিতে রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়াচ্ছে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। রাজনীতির মাঠের দখল ধরে রাখতে আওয়ামী লীগ আর নতুন করে মাঠ দখল করতে মরিয়া বিএনপি। এই নির্বাচন টানা ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সামনে নতুন এক চ্যালেঞ্জ। বিগত দুটি নির্বাচন নিয়ে ছিল নানা আলোচনা-সমালোচনা। সামনে কেমন নির্বাচন হবে এ নিয়ে চলছে আগাম বিতর্ক।
নির্বাচন যাই হোক তার আগেই মাঠের পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চায় আওয়ামী লীগ। এজন্য নানামুখী কর্মসূচিও হাতে নেয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে সারাদেশে কাউন্সিল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। সহযোগী সংগঠনগুলোর কাউন্সিল করার চিন্তা করা হচ্ছে। লক্ষ্য হলো নির্বাচনের আগে দল ও সহযোগী সংগঠনকে সক্রিয় করে বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করা।
স¤প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলগুলিকে শান্তিপূর্ণ সভা সমাবেশ করতে বাধা না দেয়ার নির্দেশ দেন। এমনকি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদরে রাজনৈতিক মামলায় গ্রেফতার না কারার কথাও বলেন। এর পরপরই রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি রাজনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়ে দেয়। জ্বালানি তেল ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে সারাদেশে পালিত হচ্ছে বিভিন্ন কর্মসূচি। এসব কর্মসূচি ঘিরে বাড়ছে উত্তাপ। বিভিন্নস্থানে এসব সমাবেশে বাধা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে এ পর্যন্ত বিএনপি’র তিনজন র্কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন অনেকে। বিভিন্ন স্থানে মামলার আসামি হয়েছে হাজারো নেতাকর্মী। এমন পরিস্থিতিতেও দলটি মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়। এজন্য সারাদেশে নেতাকর্মীদের বার্তা দেয়া হয়েছে। ঘোষণা দেয়া হয়েছে এবার আঘাত আসলে পাল্টা প্রতিরোধ করা হবে। হামলা ও মামলা করে বিএনপি’র কর্মসূচি বানচাল করা যাবে না।
রাজধানীর পল্লবীতে বিএনপি’র সমাবেশে হামলার পর মিরপুর এলাকায় সমাবেশ করেছে দলটি। সমাবেশে ব্যাপক লোক সমাগমও হয়।
তবে সমাবেশ ঘিরে মুন্সীগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় দলটির নেতাকর্মীদের। সংঘর্ষে যুবদলের কর্মী শাওনের মৃত্যু হয়। পুলিশসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়। এর আগে বরগুনায় ছাত্রলীগ-পুলিশ, খুলনায় বিএনপি-যুবলীগ’র মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এছাড়া বিভিন্ন জেলাতে বিএনপি- পুলিশ- আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এমতাবস্থায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দলীয় এক সভায় নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে না জড়াতে নির্দেশনা দেন। পরের দিন অবশ্য তিনি বলেন, মাঠ কারও কাছে ইজারা দেয়া হয়নি। আমরা মাঠ ছেড়ে যাইনি। আর গতকাল বুধবার বলেছেন বিএনপি লাঠির সঙ্গে জাতীয় পতাকা বেধে রাস্তায় নামলে জবাব দেওয়া হবে। ‘লাঠি নিয়ে খেলা, আগুন নিয়ে খেলা চলবে না।
এ প্রেক্ষিতে দলীয় সূত্র বলছে, বিরোধীদের অবস্থান নজরদারিতে রাখার নির্দেশনা রয়েছে, যেন বিএনপি আবার সন্ত্রাস-সহিংসতা তৈরির যে পাঁয়তারা করছে তা করতে না পারে।
অপরদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ভয় দেখাতে তাদের তথ্য সংগ্রহ করছে পুলিশ। এটা তাদের কাজ নয়। শুধু আতঙ্কের পরিবেশ তৈরির জন্য এটা করা হচ্ছে।
সহিংসতা ও সন্ত্রাস সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বিএনপি:
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনের নামে রাজপথে আবারো সহিংসতা ও সন্ত্রাস সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে বিএনপি। বিএনপি নেতাদের প্রতি প্রশ্ন রেখে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকাল বিএনপি’র নেতাকর্মীদের হাতে বাঁশের লাঠির সঙ্গে জাতীয় পতাকা দেখা যাচ্ছে, এটা কিসের আলামত? সরকারের মেগা প্রজেক্ট বাস্তবায়নের সক্ষমতায় বিএনপি আত্মদহনে দগ্ধ হচ্ছে- এমন দাবি করে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতারা এখন মেগা হতাশায় ভুগছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, তারা একসময় বলেছিলেন জোড়াতালির পদ্মা সেতু যেকোনো সময় ভেঙে পড়বে, অথচ বিএনপি নেতারা এখন ঠিকই পদ্মা সেতু পার হচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি জন্মলগ্ন থেকেই প্রহসনের নির্বাচন জাতির ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছিল, হ্যাঁ-না ভোটের মাধ্যমে সামরিক উর্দি পরে, আবার কখনো ভোটারবিহীন নির্বাচন করে, কখনো গায়েবি ভোটার তৈরি করে জনগণের নির্বাচনের অধিকার হরণ করেছিল। তিনি বলেন, বিএনপি’র মুখে নিরপেক্ষ নির্বাচন ভ‚তের মুখে রাম নাম। বিএনপি সেসব অপকর্ম ভুলে থাকতে চাইলেও জনগণ কিন্তু তাদের অতীত অপকর্ম ভুলে যায়নি। বিএনপি’র সঙ্গে তৈরি হয়েছে জনগণের যোজন-যোজন দূরত্ব। বিএনপি এদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ও নির্বাচনে যেমন ব্যর্থ তেমনি আন্দোলনেও ব্যর্থ।
অপরদিকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফকরুল আলম বলেন ‘সরকার জনগণ থেকে দূরে সরে গেছে। তারা এখন আমরা ও পুলিশের উপর নির্ভর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। দেশ এখন পুলিশী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পুলিশ বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করার নামে হয়রানি করছে। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ রাজনৈতিক কর্মীদের একজনের কাছ থেকে অন্যজনের তথ্য সংগ্রহেও লিপ্ত রয়েছে। এমন কার্যক্রমে সংবিধান, ফৌজদারি কার্যবিধি, পুলিশ আইন বা পুলিশবিধি কিংবা অন্য কোনো আইনে সমর্থনযোগ্য নয়। এটি সংবিধানের ৩১, ৩২ এবং ৪৩ অনুচ্ছেদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
তিনি বলেন, শুধু নাম- ঠিকানা নয়, তাদের পেশা, সন্তান ও সম্পত্তির বিবরণসহ চৌদ্দ গোষ্ঠীর যাবতীয় বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে যা দেশে বিরাজমান আতঙ্কের পরিস্থিতিকে ভয়াবহ করে তুলছে। মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন করে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার পরও আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে ৯ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়ে জাতির সঙ্গে মশকরা করছে কমিশন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের সভায় যোগ দেয়ায় ভাবমূর্তি রক্ষায় লোক দেখাতে বিএনপি’র কর্মসূচিতে হামলা না করার কথা বলছে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। তবে দেশের সাধারণ মানুষ সকল দলের সহঅবস্থােেনর মাধ্যমে রাজনৈতিক সহিংসতা ও অপরাজনীতির অবসান চায়।
দুই দলই মাঠ দখলে মরিয়া
Leave a comment