জন্মভূমি ডেস্ক
দুর্যোগ মানেই মানবিক বিপর্যয়। দুর্যোগকালে নারী-শিশু, প্রতিবন্ধী ও প্রবীণরাই সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েন। বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ। ঋতুবৈচিত্র্যের এই দেশে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ¡াস, খরা, শৈত্যপ্রবাহসহ নানা দুর্যোগের সঙ্গে পরিচিত মানুষ।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, যেহেতু দুর্যোগ আগাম বার্তা দিয়ে আসে না, সে কারণে সব ধরনের দুর্যোগ মোকাবিলায় সবসময় সতর্ক অবস্থানে থাকার কোনও বিকল্প নেই। বাংলাদেশকে দুর্যোগ সহনশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে সরকার প্রণীত আগামী ১০০ বছরের জন্য গৃহীত সরকারের ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-তে উপক‚ল ও বন্যাপ্রবণ কয়েকটি এলাকাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে এবং প্রতিটি হটস্পটের বাজেট ধরা হয়েছে ৩৭ বিলিয়ন ডলার। দুর্যোগ প্রশমনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
জানা গেছে, ইতোমধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রতিষ্ঠিত ‘ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) ৫০ বছরে পদার্পণ উদযাপন করেছে বাংলাদেশ। আগের যেকোনও সময়ের তুলনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় জনবল, উদ্ধার সামগ্রী এবং দক্ষতা বেড়েছে। বেড়েছে দুর্যোগের কবল থেকে মানব ও সম্পদ রক্ষায় সংশ্লিষ্টদের কমিটমেন্ট। যে কারণে দুর্যোগ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্টদের আহত ও নিহত হওয়ার ঘটনাও কম ঘটছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, নদীভাঙনের শিকার ৯ হাজার ৪৪৫টি পরিবারকে দুই শতাংশ জায়গাসহ পাকাঘর করে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, যার কাজও শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে এই গৃহহীনদের তালিকা করা হয়েছে। নদীভাঙন রোধে টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য ডেল্টা প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। ডেল্টা প্ল্যানের মধ্যে একটি হটস্পট হচ্ছে নদী ব্যবস্থাপনা। সেই ব্যবস্থাপনার আওতায় রয়েছে নদীতে টেকসই বাঁধ দেওয়া, নদী খনন করে নাব্য সৃষ্টি করা। ২০৩১ সালের মধ্যে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৩৭ বিলিয়ন ডলার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া জাপান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার প্রতিনিধিরা কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ ও কক্সবাজারের নদীগুলো শাসন করে বন্যা ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু করেছে। সব দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সফলতা অর্জন করেছে। সরকার বিল্ডিং কোড করেছে। এই কোড মেনে আগামীতে বাড়িঘর নির্মাণ করলে তা ভ‚মিকম্প সহনীয় হবে। ৭ দশমিক ৫ মাত্রার ভ‚মিকম্প সহনীয় মাত্রায় বিল্ডিং কোড তৈরি করা হয়েছে। পুরনো ভবনগুলো ভ‚মিকম্প সহনীয় করতে জাইকার সঙ্গে একটি সমঝোতা হয়েছে। এ লক্ষ্যে ৫০ বছর মেয়াদি একটা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে সরকার। ভ‚মিকম্প সহনীয় না হলে সংস্কারের মাধ্যমে তা ভ‚মিকম্প সহনীয় করা হবে। বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ৪৫৬টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন করা হয়েছে। এটাকে ৫৫০টি উন্নীত করতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সিভিল ডিফেন্সের জনবলকে আরও দক্ষ করে তোলার জন্য বঙ্গবন্ধু ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি নামে একটি প্রতিষ্ঠান করার জন্য মুন্সীগঞ্জে ১০০ একর জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সেটির কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশকে দুর্যোগ সহনশীল রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সরকার বহুমুখী উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি জানান, ডেল্টা প্ল্যান ২১০০-তে উপক‚ল ও বন্যাপ্রবণ কয়েকটি এলাকাকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর সূত্র জানায়, দেশে বজ্রপাত এখন বড় দুর্যোগ। গত ছয় মাসে বজ্রপাতে ২৮২ জন মারা গেছেন, আহত হয়েছেন ৭৮ জন। বজ্রপাতে মৃত্যু হওয়া ২৮২ জনের ২৭৮ জনই প্রান্তিক কৃষক। তারা জমিতে কাজ করার সময় মারা গেছেন। কৃষকদের নিরাপত্তা না দিতে পারলে কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
দুর্যোগ প্রশমনে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল
Leave a comment