
জন্মভূমি রিপোর্ট : গত কয়েক বছরে দেশে ঘটে গেছে বেশ কয়েকটি আলোচিত ঘটনা। যা টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। এইসকল ঘটনা ও ঘটনার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের কোন না কোনভাবে খুলনার সাথে সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এমন কিছু ঘটনার সাথে জড়িতদের নিয়ে রিপোর্ট:
সেফুদা
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেলিব্রেটি বনে যাওয়া একজন অস্ট্রিয়া প্রবাসী সিফাত উল্লাহ ওরফে সেফুদা। দীর্ঘ ২৫ বছর থেকে রয়েছে পরবাসে। নিজেকে তিনি মুক্তিযোদ্ধাও দাবি করেন। তবে তার এ মুক্তিযোদ্ধা দাবিটি নিয়েও সন্দেহ রয়েছে লোকসমাজে। জানা যায়, ২০১৩-১৪ সালে বাংলাদেশে একের পর এক ব্লগার তথা মুক্তচিন্তার মানুষদের হত্যার ঘটনায় ক্ষুদ্ধ হয়ে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন সেফুদা। সেফুদা খুলনার সোনাডাঙ্গায় ৫ নভেম্বর ১৯৪৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। সেফাত উল্লাহ ১৯৭৯/১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে ভিয়েনায় এক স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসর হিসেবে রয়েছেন। পাশাপাশি একটি অনলাইন শপে পার্টটাইম কাজ করেন। ১৯৮৫ মতান্তরে ১৯৮৮ সালে প্রথম সৌদি আরব যান এবং সেখান থেকে ১৯৮৮ সালে মতান্তরে ১৯৯১ সালে অস্ট্রিয়ায় যান। এরপর আর তিনি কখনো দেশে ফিরে আসেননি। বিদেশের মাটিতে স্বেচ্ছায় নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। বর্তমানে তিনি অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় বসবাস করেন। সেফুদার স্ত্রী এবং এক সন্তান রয়েছে। যদিও বর্তমানে তার স্ত্রী-সন্তান কিংবা পরিবারের সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই। পারিবারিক সম্পর্কবিহীন সিফাত উল্লাহ দেশের ওপর রাগ করে একাকী প্রবাস যাপন করছেন দীর্ঘদিন।
রহিমা অপহরণ
গত ২৭ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে পানি আনতে বাড়ি থেকে নিচে নামেন রাহিমা বেগম । এরপর আর বাসায় ফেরেননি। খোঁজ নিতে গিয়ে সন্তানরা মায়ের ব্যবহৃত জুতা, গায়ের ওড়না ও কলস রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। রাতে সম্ভাব্য সব স্থানে খোঁজ নিয়েও তার সন্ধান মেলেনি। এরপর সাধারণ ডায়েরি ও পরে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে দৌলতপুর থানায় মামলা করেন তার সন্তানরা। এ মামলা তদন্তকালে পুলিশ ও র্যাব ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয়জনকে আটক করে। নিখোঁজের ২৮ দিন পর ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে ফরিদুরের বোয়ালমারীর সৈয়দপুর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে রহিমাকে উদ্ধার করে পুলিশ। আলোচিত খুলনার রহিমা বেগম অপহরণ নাটকের মাস্টারমাইন্ড ছিল তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান। তদন্ত শেষে আজ সকালে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন মহানগর হাকিম আদালতে দাখিল করা হয়েছে।
ভোর থেকে দিনভর ‘নিখোঁজ’ থাকা কবি ও বুদ্ধিজীবী ফরহাদ মজহারের হদিস মিলেছে। তাকে যশোরের অভিয়নগর উপজেলার একটি সড়কে হানিফ পরিবহনের বাস থেকে উদ্ধার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ফরহাদ মজহার
কলামিষ্ট ফরহাদ মজহারকে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই রাত সাড়ে ১১টার পর অভয়নগরের বেঙ্গল গেট সংলগ্ন সড়কে হানিফ পরিবহনের ওই বাস (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৯৮০১) থেকে উদ্ধার করা হয়। যাত্রীবাহী বাসটি ছিল ঢাকাগামী। এর আগে রাত সাড়ে ৮টার দিকে খুলনার নিউমার্কেট এলাকার গ্রিল হাউস নামে একটি রেস্টুরেন্টে ফরহাদ মজহারকে দেখা যায় বলে দাবি করেন রেস্টুরেন্টটির মালিক। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ফোনের অবস্থান শনাক্ত করে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারে খুলনা মহানগরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তল্লাশি চালায় র্যাব-৬। সেখানে তাদের অভিযান স্থগিত ঘোষণার আধঘণ্টা পর অভয়নগর থেকে ফরহাদ মজহারকে উদ্ধারের খবর পাওয়া যায়। এর আগে সোমবার সকালে ফরহাদ মজহারকে ঢাকার আদাবরের নিজ বাসা থেকে ডেকে নিয়ে অপহরণ করা হয় বলে অভিযোগ করেন তার পরিবারের সদস্যরা।
মামুনুল হক
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের রয়েল রিসোর্টের দ্বিতীয় স্ত্রীসহ অবরুদ্ধের পর থেকে আলোচনায় হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগরীর সাধারণ সম্পাদক মামুনুল হক। এবার বন্ধুত্ব ও বিয়ে ভাঙা নিয়ে কথা বলেছেন তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রথম স্বামী হাফেজ শহীদুল ইসলাম। মামুনুলের সঙ্গে তার প্রথম স্ত্রী জান্নাত আরার বিয়ে সম্পর্কে তার জানা ছিলো না। তাই এ ঘটনার আগ পর্যন্ত মামুনুলের সঙ্গে তার সম্পর্ক অটুট ছিলো।
হাফেজ শহীদুল জানান, বর্তমানে খুলনার সোনাডাঙ্গা থানার গোবরচাকা এলাকার শাহীনুর মসজিদের সামনে একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। আর চাকরি করেন তালিমুল মিল্লাত মাদ্রাসার অন্তর্ভুক্ত জরিনা বেগম হাফেজী মাদ্রাসার প্রধান হাফেজ হিসেবে। তিন বছর আগে ফরিদপুর জেলার আলফাডাঙ্গা থানার কামারগ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ওয়ালিউর রহমান ওরফে ওলি মিয়ার মেয়ে জান্নাত আরা ঝর্ণার সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর তিনি (হাফেজ শহীদ) দ্বিতীয় বিয়ে করেন বাগেরহাটের চিতলমারী থানা এলাকায়। ওই স্ত্রীকে নিয়ে ভাড়া থাকেন খুলনার গোবরচাকা এলাকায়। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে তার এক বছর বয়সী একটি ছেলে আছে। প্রথম স্ত্রীর দুই ছেলে।
হাফেজ শহীদ বলেন, ‘প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে সুখেই সংসার চলছিল। আল্লামা মামুনুল হকের মামার বাড়ি আর আমার বাড়ি একই উপজেলায়। সেই সুবাদে তার সঙ্গে আগে থেকেই পরিচয় হয়। সেই পরিচয় আরো গাঢ় ও ঘনিষ্ঠতায় রূপ নেয় রাজনীতি করতে গিয়ে। আমি খেলাফত মজলিশ করি। মামুনুল খেলাফত মজলিশের মহাসচিব। তিনি খুলনা অঞ্চলে সফরে এলে আমি তার সঙ্গে থাকতাম। তিনি বহুবার একা বা সপরিবারে আমার বাসায় অতিথি হয়ে এসেছেন। আমি নিজেও সপরিবারে তার বাসায় বহুবার গিয়েছি। আমাদের বন্ধুত্ব অত্যন্ত গভীর। যাতায়াতের সুযোগে আমার স্ত্রী সন্তানদেরও তিনি চেনেন জানেন।’
হাফেজ শহীদ বলেন, বছর তিনেক আগে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। খুলনার শেখপাড়া জামে মসজিদে হওয়া ওই বিয়ে মাওলানা মামুনুল নিজেই পড়িয়েছেন।’ হাফেজ শহীদুল জানান, তালাক দেওয়ার পর একজন নারী তার প্রথম স্বামীর জন্য ‘বেগানা নারী’ হিসেবে পরবর্তীকালে আর তার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেননি।