উপজেলায় কাগজে ১০ বেড থাকলেও বাস্তবে নাই, একমাত্র পাইকগাছা উপজেলায় চলতি মাসে চালু হয়েছে একটি ওয়ার্ড
অভিজিৎ পাল
করোনা সংক্রমণের দেড় বছরে উন্নত হয়নি খুলনার উপজেলা পর্যায়ের করোনা চিকিৎসা। ফলে উচ্চসংক্রমণের এই সময়ে উপজেলা পর্যায়ে গুরুতর রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ভর করতে হচ্ছে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটের উপর। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলছেন পর্যাপ্ত বরাদ্দ ও সরঞ্জাম না থাকায় এই অবস্থা। আর সিভিল সার্জন বলছেন রোগীরা নিজের ইচ্ছায় জেলা শহরে চলে যায় আর করোনা চিকিৎসায় উপজেলা পর্যায়ের বরাদ্ধের ব্যাপরে তার জানা নাই।
খুলনার ফুলতলা উপজেলার দামোদর ইউনিয়নের ০৬নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা তুষার সরকার। গত ০২ জুন করোনা আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা না পাওয়ায় তাকে যেতে হয় খুলনাতে
করোনা আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থদের একমাত্র চিকিৎসাস্থল খুলনা মেডিকেল কলেজের করোনা ডেডিকেটেড
হাসপাতাল।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বলছেন করোনা চিকিৎসার উন্নয়নে নেই বরাদ্দ, সিভিল সার্জন জানেন না কত খরচ হয়েছে।
মৃত তুষার সরকারের ভাইপো তপু সরকার জানান, আমার কাকা যেদিন করোনা পজিটিভ হন তখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক কোন রকম একটি ব্যবস্থাপত্র দিয়ে ছেড়ে দেন। পরে তার অক্সিজেন সংকট হলে নিরুপায় হয়ে আমাদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার কাকি এখনও করোনা পজিটিভ হয়ে বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
একই অভিযোগ উপজেলার অন্য বাসিন্দাদেরও। করোনাকালীন সময়ে তিক্ত অভিজ্ঞতা হচ্ছে তাদের। একই এলাকার বাসিন্দা অনুপ জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পর্যাপ্ত চিকিৎসা নেই। ওখানে করোনা রোগী গেলে তাকে পাঠানো হয় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অপর একজন বাসিন্দা সাংবাদিক খোকন জানান, তিনি একজন করোনা উপসর্গ থাকা রোগী নিয়ে হাসপাতালে যান। চিকিৎসক করোনা উপসর্গ যেনে তার সাথে খুব বাজে ব্যবহার করেন। পরবর্তীতে দেখা যায় সেই রোগী করোনা পজিটিভ নন।
উপজেলাবাসীর এই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা ইউনিটে। উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের পিছনে জরাজীর্ণ তিন তলা ভবনে করা হয়েছে করোনা ইউনিট। ভিতরের ওয়ার্ড গুলোতে ময়লা আবর্জনা ভরপুর। ১০ বেডের কথা থাকলেও সরোজমিনে পাওয়া যায় ০৬ বেড। বেসিনে ময়লা হলুদ পানি জমে আছে। ভবনের পলেস্তরা খুলে পড়ছে। নেই লাইন ও ফ্যানও। অথচ বর্তমানে এই উজেলায় করোনা সংক্রমণের ৩৬%। মোট রোগী-৩৯৫ জন মোট সুস্থ-৩০২ মোট মৃত্যু ০৪ জন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ জেসমিন আরা বলেন, করোনা ইউনিট আমাদের হাসপাতালের যে জায়গা ছিল সেখানে অন্য জিনিস সরিয়ে করত হয়েছে। এ কারণে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব রয়েছে। তিনি আরো বলেন, করোনা রোগীদের চিকিৎসার উন্নত ব্যবস্থা না থাকায় গুরুতর রোগীদের আমাদের খুলনা মেডিকেলে পাঠাতে হয়।
তার কাছে করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থায় এ পর্যন্ত সরকারর বরাদ্দ এসেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, না করোনা চিকিৎসার জন্য আলাদা করে কোন বরাদ্দ তিনি পাননি। তারপরও তারা তাদের স্বাধ্যের মধ্যদিয়ে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন।
এই অবস্থা খুলনার অন্যান্য উপজেলা গুলোতেও। নয় উপজেলার মধ্যে একমাত্র পাকইগাছা উপজেলায় চলতি মাসে করোনা চিকিৎসা ওয়ার্ড চালু করা হয়েছে। অন্যান্য উপজেলাতেও রয়েছে মাত্র ০৫টি বেড। করোনা সংক্রমণের দেড় বছর পার হলেও কেন এই অবস্থা? ও কত বরাদ্দ এসেছে করোনা চিকিৎসার জন্য? তার তথ্য দিতে পারছেন না সিভিল সার্জন। আর সীমাবদ্ধতার কারণেই গুরুতর রোগীদের চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় খুলনাতে বলছেন তিনি।
সিভিল সার্জন ডাঃ নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, করোনা আক্রান্ত রোগী গুরুতর অবস্থায় আসলে তাকে খুলনায় রেফার্ড করা হয়। কিন্তু মানুষ তাদের স্বভাবসুলভ ভাবেই উপজেলায় চিকিৎসা না করে খুলনায় চিকিৎসা করতে চলে আসেন বলছেন তিনি।
খুলনার নয় উপজেলার মধ্যে উচ্চ সংক্রমণের হার রয়েছে ফুলতলা, দিঘলিয়া, তেরখাদা ও দাকোপে। যা ২৬ শতাংশ থেকে ৫২ শতাংশ।