জন্মভূমি রিপোর্ট
দৈনিক জন্মভূমির প্রতিষ্ঠাতা আক্তার জাহান রুমার ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার । ১৯৮৪ সালের ১৯ মে তিনি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে যান। মাত্র ৩৩ বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করা রুমা একুশে পদকপ্রাপ্ত শহীদ সাংবাদিক হুমায়ূন কবীর বালুর সহধর্মিনী ছিলেন। মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক প্রথিতযশা সাংবাদিক হুমায়ূন কবীর বালু ২০০৪ সালের ২৭ জুন তার সম্পাদিত পত্রিকা দৈনিক জন্মভূমি অফিসের সামনে ঘাতকদের বোমা হামলায় শাহাদাৎবরণ করেন।
আক্তার জাহান রুমা ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তাঁর গবেষণাপত্রের নাম ছিল “বাংলাদেশের লোক সংস্কৃতি সমাজতত্ত¡। জীবদ্দশায় তিনি সাংবাদিকতা ও শিক্ষকতা পেশায় জড়িত ছিলেন। তাঁর প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের নাম “নিরুদ্দেশের পথিক। ১৯৮৫ সালে তার স্বল্পায়ু জীবনের রচনাসমূহের সংকলন প্রকাশিত হয়। “অবরুদ্ধ বৈরুত ও “আত্মনিবেদিত ফিলিস্তিনীদের জন্য তাঁর রচিত ১৯৮১ সালের কবিতা পুনঃ প্রকাশ করা হলো।
।। অবরুদ্ধ বৈরুত ।।
ভূ-মধ্যসাগরের বাতাস এখন বারুদের গন্ধে ভারী।
জয়তুন গাছের সবুজে আজ জীবনের বিবর্ণতা
কমলা বনে বসেছে হানাদারদের ঘাঁটি।
সুন্দরী বৈরুত নগরী আজ নি:স্ব।
ঘাতকের রক্তাক্ত ছোবলে নগরীর পথ প্রান্তর প্লাবিত।
মৃত নগরীর পথে মৃতপুরীর স্তদ্ধতা।
বুলডোজার গুম করছে শবদেহ।
এত মৃত্যু : এত হত্যার ফলশ্রুতি তো স্বাধীনতা।
কোন মৃত্যুই বৃথা নয়-কোন ত্যাগই বিফল হবার নয়।
শতাব্দীর এই বিপ্লব আত্মত্যাগের বিপ্লব :
স্বাধিকারের বিপ্লব।
আজও শাশ্বত ধারার সকাল সন্ধ্যা হয়।
ভূ-মধ্যসাগরে অস্ত যায় রক্তাক্ত সূর্য্য।
ঘরহারা স্বজন হারা ফিলিস্তিনীদের হৃদয়ের
সূর্য্যরে রঙ খুব : খুব লাল।
সব স্বাধীনতার উপলব্ধি তো এক ও অভিন্ন আনন্দের।
মানবতার এ লাঞ্ছনা, বিবেকহীনতার শিকার।
অসহায় নারীশিশু। ভিন্ন শুধু দেশ : কাল।
তবুওতো লড়ে যাচ্ছে : ক্ষোভে ফেটে পড়ছে।
হৃদয় নামক অস্ত্র দিয়ে।
ঘরে ফেরার দিন গুনছে। দ্রাক্ষা-ক্ষেতে আবার।
বইবে মুক্ত বাতাস। কমলা বলে উঠবে সূর্য্য।
যার মূল্য পঁচাত্তর হাজার জীবন।
১৮ই জুন, ১৯৮১
।। আত্মনিবেদিত ফিলিস্তিনীদের জন্য ।।
(ক)
এতগুলো লোক যখন জড়োই হয়েছেন তখন
আসুন আমরা শোকসভা করি।
অথচ দেখুন কি রকম ঘৃণ্যতম হত্যা :
ঘাতকের নির্লজ্জ স্পর্ধায়
কবিতার মত সুন্দর জীবনকে
হিংসার থাবায় করেছে ক্ষতবিক্ষত।
(খ)
আপনারা প্রতিবাদ-মুখর হোন
ভালবাসারই মতো কবিতা ও জীবন
অথচ কবিতা ও শিশু আজ ঘাতকের কাছে সমর্পিত:
আমার অনুরোধ : এ হত্যায়
সঠিকতা নিরূপণে তৎপর হোন।
(গ)
আসুন অত:পর আমরা ফিলিস্তিনীদের রক্তাক্ত মানচিত্রে
স্বাধীনতার পারাবত ওড়াই।
প্রশ্ন করি বিশ্ববিবেকের কাছে :
।। কেন এই হত্যা-যজ্ঞ : হত্যা ।।
(ঘ)
আমরা কণ্ঠে কণ্ঠ মেলাই এ হত্যা আর নয়।
সভ্যতার নামে এ হীনতা বন্ধ কর বন্ধ কর।
আসুন স্লোগান মুখর হই
ফিলিস্তিনী জনতা তোমাদের স্বাগত
মুক্তিযুদ্ধে তোমাদের পাশে আছি আমরা।
আসুন স্বাধীনতার জন্য শান্তির জন্যে প্রস্তাব করি ।
২০শে সেপ্টেম্বর, ১৯৮১