ব্রাক্ষণ্যবাদিতায় আচ্ছন্ন সমাজে যখন জাত-পাত ছিল প্রধান বিবেচ্য বিষয়, নারীদের চূড়ান্ত রকমের অসম্মান করা হতো, শিশু বয়সে বিয়ে দিয়ে মেয়েরা অকাল বৈধব্য বরণ করতো, নারী শিক্ষাকে খারাপভাবে দেখা হতো; তেমনি একটি সমাজে ঈশ্বরচন্দ্র খুবই ব্যাতিক্রম, একরোখা, যুক্তিপূর্ণ, কুসংস্কারমুক্ত একজন অনন্য মানুষ। যিনি সমাজের মধ্যে থেকেই সমাজকে ভেঙ্গেছেন। নতুনভাবে সমাজকে বিনির্মাণ করেছেন। তাঁর কাজে বেশীরভাগ সময়েই কাউকে তিনি পাশে পাননি, বরং বিরোধিতা করেছে বিপুল সংখ্যায়; তাতে তিনি দমে যাননি, বরং একাই লড়াই করেছেন।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকীতে বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ খুলনা শাখার আয়োজনে একক বক্তৃতামালার বক্তা সালেহ মোহম্মদ শহিদুল্লাহ বিদ্যাসাগরের চরিত্র বর্ণণা করতে গিয়ে এসব কথা বলেন। উমেশচন্দ্র পাবলিক লাইব্রেরি মিলনায়তনে শুক্রবার সন্ধ্যায় এ বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রফসর ড. মনিরুল ইসলাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রোমেল রহমান।
একক বক্তা সালেহ মোহম্মদ শহীদুল্লাহ প্রায় দুই ঘন্টা ধরে কথা বলেন। এ সময়ে বিদ্যাসাগরের পাশাপাশি সেই বঙ্গসমাজের কথাও আসে। তবে স্বাভাবিকভাবে বিদ্যাসাগরের কর্মজীবনের সমাজ ভাবনা ও বাস্তবে রূপায়নের দিকটি বেশী আলোচিত হয়। মেয়েদের জন্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং শিক্ষায় কুপমন্ডুকতার পরিবর্তে যুক্তিবিদ্যা পড়ানোর উপর গুরুত্ব দেয়ার প্রসঙ্গটিও আসে। আর অবশ্যম্ভাবী হিসেবে বিধবা বিবাহ প্রবর্তন করতে গিয়ে যে সামাজিক বাধা ও তা অতিক্রম করার চেষ্টা তা আলোচিত হয়। বাল্য-যৌবন-পূর্ণ বয়স্ককালে একাকী লড়াই করা মানুষটি শেষ পর্যন্ত স্বজনদের উপর বিরক্ত হয়ে সাওতালদের মধ্যে কাটিয়েছেন বলে কথা শেষ হয়।