ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁর সময়ে সামাজিক অনেক অসঙ্গতির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। প্রায় একক চেষ্টায় বিধবা বিবাহ আইন চালু, বহু বিবাহ রোধ, বাংলা বর্ণমালা সংস্কার, নারী শিক্ষা প্রসারে নিরলস চেষ্টা করেছেন; তবে ওই সময়ে গণমানুষের অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম হয়েছে, যাতে তাঁর কোন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা দেখতে পাওয়া যায় না। অবশ্য, এই সীমাবদ্ধতা শুধুমাত্র বিদ্যাসাগরের মধ্যে নয়, উনিশ শতকের বিদ্ব্যৎ সমাজের মধ্যেই গণ-মানুষের আন্দোলন-সংগ্রামে একটি নিস্পৃহ মনোভাব ছিল।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের দ্বিশত জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ খুলনা শাখার আয়োজনে একক বক্তৃতামালার বক্তা সালেহ মোহম্মদ শহিদুল্লাহ তাঁর চতুর্থ ও সমাপনী বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। শেষ দিনের বক্তব্যের বিষয় ছিল ‘উনিশ শতকের সাঁওতাল-কৃষক-নীল ও সিপাহী বিদ্রোহ এবং তৎকালীন বিদ্বৎ সমাজ’। অরোতীর্থ বিদ্যাপীঠে শুক্রবার সোয়া ছটায় এ বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন লেখক-সাংবাদিক গৌরাঙ্গ নন্দী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রোমেল রহমান।
একক বক্তা সালেহ মোহম্মদ শহীদুল্লাহ সোয়া ঘন্টারও বেশী সময় ধরে কথা বলেন। তিনি অষ্টাদশ ও উনিশ শতকে ইংরেজ কোম্পানী শাসনামলে বাংলার কৃষকদের উপর নিপীড়নের ফল হিসেবে ফকির, তিতুমীর, সাঁওতাল, নীল ও সিপাহী বিদ্রোহের কারণ ও প্রেক্ষাপট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্যি, কলকাতাকেন্দ্রিক বিদ্বৎসমাজ এসব বিষয়ে কোন ভূমিকা রাখেননি। এমনকি বিদ্যাসাগরকেও এসব বিষয়ে নিস্পৃহ থাকতে দেখা যায়।
সভাপতির বক্তব্যে গৌরাঙ্গ নন্দী বলেন, একটি মানুষ সময়ের সৃষ্টি। বিদ্যাসাগরের সময়টি অশিক্ষা ও নারী নিপীড়ন-অসম্মাণের কাল; তিনি খুবই দৃঢ়ভাবে এই দুটো বিষয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। বলা চলে, এক্ষেত্রে তিনি এক নি:সঙ্গ শেরপা। একারণেই তিনি অনন্য। তবে এটি ঠিক, বৃহত্তর বঙ্গ সমাজের শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলন-সংগ্রাম তাঁকে বিচলিত করেনি।