মৎস্য অধিদপ্তরে জনবল সংকট
শেখ আব্দুল হামিদ
সকল প্রকার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জেলার বিভিন্ন নদ-নদীতে অবৈধভাবে চলছে রেনু ও বাগদা চিংড়ির পোনা আহরণ। প্রতিনিয়ত মেরে ফেলা হচ্ছে বিভিন্ন প্রাজাতির লাখ লাখ মাছের পোনা। মৎস্য অধিদপ্তরের নিষেধ অমান্য করে এ ভাবে পোনা নিধনযজ্ঞে নামলেও যেন দেখার কেউ নেই। রাতের অন্ধকারে এবং প্রকাশ্যে দিনের আলোয় এক শ্রেণির অসাধু নারী পুরুষ এ কাজে সর্বদা নিয়জিত রয়েছেন।
রাতের আঁধারে কাজীবাচা নদী তীরে দেখা যায় চিংড়ি পোনা আহরণকারীদের ব্যস্ততা। একই ভাবে সুন্দনবন সংলগ্ন নদ-নদীতে আড়াআড়ি সারিবদ্ধ ভাবে জাল ফেলে ধরা হচ্ছে রেনুপোনা। শতাধিক নারী-পুরুষ নেট দিয়ে তৈরী পোনা ধরার জাল নিয়ে গলা জলে নেমে টানতে থাকে। এ সময় রেনু এবং বাগদা পোনার সাথে হাজার হাজার প্রজাতির মাছের পোনা জালে জড়িয়ে যায়। পরে নদীর চরে মাটির চাড়ি বা বালতির মধ্যে অন্যান্য ময়লাসহ ঢেলে দেয়। পাত্রের পানিতে রেনু এবং বাগদা চিংড়ির পোনা ভেসে ওঠে। তখন চামচ অথবা ঝিনাই দিয়ে সে গুলো তুলে নেয়। পরে পাত্রে থাকা হাজারও প্রজাতীর মাছের পোনা নদীর চরে ঢেলে দেয়। সেখানেই মৃত্যু ঘটে সকল প্রজাতীর মাছের বংশের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে দাকোপ, বটিয়াঘাটা, রূপসা, দিঘলিয়া, পাইকগাছা, ডুমুরিয়া, কয়রা উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রতিটি নদ-নদীতে মৎস্য নিধনের এ দৃশ্য নিত্য দিনের। সুন্দরবনের বিভিন্ন নদ-নদী এবং বদ্ধ জলাশয়ে ছাড়া চিংড়ি মাছের বাচ্চা ফাল্গুন-চৈত্র মাসে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারে বেরিয়ে আসে। তারা ছড়িয়ে পড়ে জোয়ারের সাথে বিভিন্ন নদীতে। তখন শিকারীরা জালে আটকিয়ে এসব ঘের মালিকদের নিকট বিক্রি করে। প্রতি পিচ বাগদা চিংড়ি এবং গলদার রেনু বিক্রি হয় ২ থেকে ৩ টাকা মূল্যে। প্রতিজন শিকারী দেড় থেকে দু’হাজার পোনা ধরে প্রতিবারে বিক্রি করে। তারা সকাল এবং সন্ধ্যায় রেনু শিকার করে থকে। প্রতিজন শিকারী দিনে দু’থেকে আড়াই হাজার টাকা আয় করে থাকেন।
চিংড়ি ঘের মালিকদের নিকট হ্যাচারীর পোনার চেয়ে প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেয়া রেনুর চাহিদা অনেক বেশী। তাই তারা বিভিন্ন এলাকায় লোক ছড়িয়ে দিয়ে তাদের মাধ্যমে এসব পোনা সংগ্রহ করেন। চিংড়ি পোনা ক্রয়ের জন্য প্রতিদিন রাস্তা দিয়ে তারা ঘোরা ফেরা করেন। বিক্রেতারা তাদের দেখে পাত্রে থাকা পোনা নিয়ে হাজির হয়। পরে একটি একটি করে গণনার মাধ্যমে বিক্রি করে দেয়। হাতে পায় নগদ টাকা।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় বটিয়াঘাটা উপজেলা মৎস্য অফিসার মনিরুল মামুনের সাথে। তিনি বলেন রেনু পোনা ধরা স্থায়ী ভাবে নিষিদ্ধ। তার পরও এক শ্রেণির অসাধু নারী পুরুষ আইন ভঙ্গ করে নেট নিয়ে নদীতে নামছে। দ্রæত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মৎস্য অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো: তোফাজ উদ্দিন আহমেদ দৈনিক জন্মভ‚মিকে বলেন, উপজেলা গুলোতে জনবল সংকটের কারণে অসাধু কিছু ব্যক্তি রেনু পোনা নিধন করছে। সুন্দরবন উপক‚লবর্তী এলাকায় গোপনে এসব ব্যক্তি নেট ধরে থাকে। তবে আমাদের অভিযান সার্বক্ষণিক চলছে। কোস্ট গার্ড, র্যাব, নৌপুলিশ, পুলিশ এব্যপারে সর্বদা সহযোগিতা করে থাকে। কিছু অসাধু লোক লুকোচুরির মাধ্যমে রেনু ধরার চেষ্টা করে। যারা নেট দিয়ে এভাবে পোনা নিধন করছে তাদের বিরুদ্ধে জেল জরিমানা হতে পারে। তাছাড়া নেট ধরে পুড়িয়েও দেয়া হয়।
ধ্বংসের মুখে অসংখ্য প্রজাতির মাছ
Leave a comment