জন্মভূমি রিপোর্ট
নগরীর খুলনা সদর থানার ৩ নং কাশেম সড়ক এলাকায় সন্ত্রাসীদের ধাঁরালো অস্ত্রাঘাতে ইয়াসিন আরাফাত (২০) নামে এক মাছ বিক্রেতা নিহত হয়েছেন। শুক্রবার সকালে এ নৃশংসতা ঘটেছে। তবে নিহতের মামা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে পুলিশকে বার বার বলেছেন তার বয়স ১৭ বছর। সে অর্থে নিহত ব্যক্তিও কিশোর। ঘটনার পর নিহতের শতাধিক বন্ধু খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালের মর্গে ভিড় জমায়। যাদের অধিকাংশই কিশোর বয়সের।
নিহত ইয়াসিন বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার সোনাখালি গ্রামের জনৈক ওবাইদুল্লাহ ফকিরের ছেলে। তিনি নগরীর সন্ধ্যা বাজারে মাছের ব্যবসা করে সংসার চালাতেন। ভিকটিম সপরিবারে সোনাডাঙ্গা থানাধীন পশ্চিম বানিয়াখামার ঈদগাহ মসজিদের পেছনে একটি বাড়িতে মামার সঙ্গে ভাড়া থাকতেন বলে জানা গেছে। তার মামা জানায়, তার গ্রামের বাড়ি মোরেলগঞ্জে হলেও তার জন্ম খুলনার পশ্চিম বানিয়াখামার এলাকায়।
পুলিশ জানায়, সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে ইয়াসিন কাশেম সড়কস্থ একটি হোটেল থেকে সকালের নাস্তা করে সেখানকার একটি মুদি দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তখন একটি ইজিবাইকে ১০ থেকে ১২ জনের একদল সন্ত্রাসী এসে তার সাথে বাত-বিতÐায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তাদের মধ্যকার দু’-একজন ইয়াসিনের বুকে ও পেটে ছুরিকাঘাত করে। একাধিক আঘাতে রক্তাক্ত জখম হয়ে তিনি রাস্তায় লুটিয়ে পড়েছিলেন। হামলাকারীরা দ্রæত ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। আশ-পাশের লোকজন গুরুতর জখম ওই যুবককে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানায়, ঘটনার অদূরে একজন ব্যাংক কর্মকর্তার বাসভবন রয়েছে। সেখানে সিসি টিভি রয়েছে। ওই ব্যক্তি সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় গ্রামের বাড়ি কেশবপুরে গেছেন। তাকে সংবাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি আসলে সিসি টিভির ফুটেজ দেখে আরো নিশ্চিত হওয়া যাবে ঘটনার সাথে কারা জড়িত ছিল।
খুলনা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হাসান আল মামুন বলেন, নিহত যুবক এবং আঁততায়ীরা পূর্ব পরিচিত। তাদের মধ্যকার আর্থিক লেনদেন কেন্দ্রিক পূর্ব শত্রæতার জের ধরে এ হত্যাকাÐ সংঘটিত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘটনাস্থলে পড়ে থাকা ইজিবাইকটি পুলিশ আটক করেছে। নিহতের সাথে থাকা দু’ যুবককে অকুস্থলের নিকটতম নিরালা পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছিল।
তিনি বলেন, আঁততায়ী দলের মূল হোতাসহ অন্যদের গ্রেফতারের জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে। তাদেরকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাÐের কারণ সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে জানা যাবে।
নিরালা ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই মোঃ আব্দুল হান্নান মোল্লা বলেন, সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত শেষে লাশ বিকেল সাড়ে তিন টার দিকে নিহতের পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। মরদেহের বুকে ও পেটে চার থেকে পাঁচটি জখমের চিহ্ন রয়েছে। হামলাকারীদের বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে।
নিহতের সঙ্গে থাকা তার বন্ধু একই নাম ইয়াছিন আরাফাত পুলিশকে জানায়, হামলাকারীরা প্রায় ১৫ জন হবে। যাদের মধ্যে সে ৫/৬ জনের নাম জানে। বাকীদের সে চেনে। তারা তাদের পূর্ব পরিচিত সেটিও বলে। সে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে পুলিশকে আরো জানায়, টাকা পাওনাকে কেন্দ্র করে বাক-বিতÐা হয়। একপর্যায় ইয়াছিনের উপর হামলা হলে সে তাদের ঠেকাতে গেলে তাকেও প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তবে তার শরীরের কোথাও কোনো আঘাত নেই। নিহত ইয়াছিনের অপর সঙ্গীরও তেমন কিছু হয়নি। দুই সঙ্গীর কথার মধ্যে মিল না থাকায় পুলিশ তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। এ সময় আরো একজনকে থানায় নেওয়া হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। নিহতের অপর এক বন্ধু জানায়, ইতিপূর্বে তাদের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হলে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দেওয়া হয়। সে অভিযোগ মোবাইলে সংগ্রহ করে রাখা আছে এবং তা এসআই আব্দুল হান্নান মোল্লাকে জানান। পুলিশের ধারণা পূর্ব থেকে শত্রæতার জের ধরে এ হামলা হয়েছে।
নগরীতে কিশোর গ্যাংয়ের হাতে মাছ ব্যবসায়ী খুন
Leave a comment