শেখ আব্দুল হামিদ
বৃষ্টি হলেই প্লাস্টিক ও ই-বর্জ্যরে প্রভাব নগর জীবনকে করে তোলে বিপর্যস্ত। অধিকাংশ ড্রেন আর ময়ূর নদের মত বদ্ধ জলাশয়ের তলদেশ এসব বর্জ্যে ভরাট হওয়ায় মারাত্মক দূষণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে করছে ব্যাহত। ড্রেন আর নদ-নদীর তলদেশের গভিরতা ভরাট করেছে প্লাস্টিক আর ই-বর্জ্য। তাই সামন্য বৃষ্টিতেই নগরীর সড়ক মহাসড়ক সহজেই তলিয়ে যায়।
মানুষের বেঁচে থাকার জন্য প্লাষ্টিকের ব্যবহার আজ অপরিহার্য্য। জীবন চলার পথে প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিকল্প সামগ্রী হিসেবে পলিমারের ব্যবহার হয়ে আসছে। ক্যারি ব্যাগ থেকে শুরু করে ওষুধের বোতল, খাদ্য পরিবেশনের পাত্র, ফুলের টব, বিভিন্ন ক্ষেত্রে চটের ব্যাগ কিংবা কাঁচের শিশি, কাঠের চেয়ার টেবিল অথবা চিনেমাটির থালা কিংবা মাটির টব্ এ সবের বিকল্প হিসেব এখন ব্যবহৃত হচ্ছে প্লাস্টিক। এসব ব্যবহারের পর যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এসব সামগ্রী সহজেই মাটিতে মিশে যায় না। এসব বর্জ্য জমা হচ্ছে লোকালয়ের বিভিন্ন স্থানে। আর তা থেকেই ছড়াচ্ছে দূষণ। নদ-নদী কিংবা সাগরের পানিতে ফেলে দেয়া প্লাস্টিক তলদেশ ভরাটে সাহায্য করছে। ভেসে আসা প্লাস্টিকও ক্ষতির কারণ হয়ে উঠছে। যেখানে নির্দেশ রয়েছে ৫০ মাইক্রনের কম প্লাস্টিকের ব্যাগ কেউ উৎপাদন বা ব্যবহার করতে পারবেনা কারণ তা পুনর্ব্যবহারযোগ্য হয় না। সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে কম মাইক্রনের সামগ্রী তৈরী হচ্ছে। পরবর্তীতে তা বর্জ্য হিসেবে জমে উঠছে আমাদের পরিবেশেই। ফেলে দেয়া প্লাস্টিক সংগ্রহ করে আবারও যে সামগ্রী তৈরী হচ্ছে তাও একইভাবে পরবর্তীতে দূষণের কারণ হচ্ছে।
বিভিন্ন প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সাথে সাথে মানুষের জীবনে নানান ইলেকট্রনিক্্র পণ্য হয়ে উঠেছে নিত্য ব্যবহারের সঙ্গী। টিভি, ফ্রিজ, ওভেন, কম্পিউটার, মোবাইলসহ বিভিন্ন পণ্য মানুষের জীবনকে সহজ করে তুলেছে। তবে এসব ব্যবহারের পর একসময় ফেলে দেয়া হয় যত্রতত্র। যা পরিবেশের জন্য হয়ে উঠছে হুমকি স্বরূপ।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. দিলিপ কুমার দত্ত দৈনিক জন্মভ‚মিকে বলেন, প্লাস্টিক এবং ই-বর্জ্যরে ব্যবহার মানুষের জীবন চলার পথকে যেমন সহজ করেছে, তেমনি অসচেতনতার কারণে পরিবেশের উপর হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহারের পর যত্রতত্র ফেলে দেয়া হয়। ড্রেনেজ ব্যবস্থায় বাধার সৃষ্টি করছে। বুড়িগঙ্গা নদীর তলদেশে পড়ে থাকা প্লাস্টিক স্তুপের ন্যায় খোঁজ করলে রূপসা নদীর নীচেও মিটার খানেক পাওয়া যাবে। ময়ূন নদের তলদেশ ভরাট হয়ে আছে প্লাস্টিক আর ই-বর্জ্য।ে
তিনি বলেন, দেশে প্রতিবছর প্রায় ১০ মিলিয়ন মেট্রিকটন ইলেক্ট্রনিক্স বা ই-বর্জ্য তৈরী হয়। যেগুলো ব্যবস্থাপনার অভাবে পরিবেশ ও মানুষের শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। তিনি বলেন, খুলনার বিভিন্ন রাস্তার পাশে রিপিয়ারিংয়ের অপেক্ষায় পড়ে আছে এসব ব্যবহার অনুপযোগী পণ্য। শেখপাড়া বাজারে ভাঙ্গাড়ির দোকানে ব্যবসায়ীরা ফ্রিজ, কম্পিউটার, টেলিভিশনের মত সামগ্রী ভেঙ্গে আলাদা করেন। এসব হাত দিয়ে ভাঙ্গার কারণে শরীরে বিভিন্ন রোগ বা অসুবিধা দেখা দিতে পারে। তারা প্রয়োজনীয় প্লাস্টিক এবং লোহা রেখে বাকীটা ফেলে দেয় ড্রেনে বা নদী-নালায়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: রবিউল হাসান বলেন, যেহেতু ইলেকট্রনিক্স পণ্য তৈরীতে প্লাস্টিক, লোহা, তামা বা কঠিন ধাতব পদার্থের পাশাপাশি ব্যবহার করা হয় সিসা, ফাইবার, কার্বন, সিলিকন, পারদসহ পণ্যে প্রয়োজন অনুযায়ী আরও উপাদান। তাই প্রশিক্ষণ ছাড়া এসব খালি হাতে ভাঙ্গলে দুই ভাবে মানুষের শরীরে প্রভাব ফেলে। প্রথমত ত্বকের বিভিন্ন রোগ এবং পরবর্তীতে কিডনি, ফুসফুস ও ব্রেনের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। তিনি বলেন এসব পুরাতন ইলেকক্ট্রনিক্স পণ্য ধবংস বা পুনর্ব্যবহারের জন্য স্থান বা অবকাঠামো গড়ার প্রয়োজন আমাদের দেশে রয়েছে।
নগরীতে জলাবদ্ধতার উপকরণ প্লাস্টিক ও ই-বর্জ্য!
Leave a comment