জীবনহানির আশঙ্কা, আইনের জটিলতায় অপসারণে বাঁধা
হারন-অর-রশীদ
নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে বসবাস করছেন ও ব্যবসা পরিচালনা করা হচ্ছে। ৪৮টি ভবনের মধ্যে মাত্র ৩টি ভবন অপসারণ করা হয়েছে। ২০১০ সালে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে জেলা প্রশাসন ও সিটি কর্পোরেশন লাল নোটিশ সাঠিয়ে দেয়। বিপদ জেনেও মানুষ ওর মধ্যে বসবাস ও ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ঘটতে পারে জীবনহানি। দীর্ঘ ১১বছরেও আর কোন জরিপ করা হয়নি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এর হালনাগাদ কোন তথ্য নেই। আইনী জটিলতার কারণে এই সব ঝুঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ করা হচ্ছেনা। চলতি বর্ষা মৌসুমে দুর্ঘটনার অশঙ্কা রয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের মধ্যে ঠাকুরবাড়ি গলিতে সত্যনারায়ন মন্দির রয়েছে। জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে শুধু বসবাসই নয় ব্যবসাও করা হচ্ছে।
সূত্র জানান, ২০১০ সালে কেসিসি, জেলা প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস, গণপূর্ত বিভাগ, কেডিএ ও কেএমপিকে নিয়ে সম্মিলিত ভাবে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি নগরীর বিভিন্ন এলাকায় খোজ খবর নিয়ে নগরীতে ৪৮টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। ওই বছর ২৯আগস্ট কেসিসির ২০তম সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ৪৮টি ভবন অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা ভবনগুলো মালিকদের নোটিশ প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ২৬টি সম্পূর্ণ ভেঙ্গ অপসারণ, ১৭টি অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ বাড়ির সম্প্রসারিত অংশ ভেঙ্গে প্রয়োজনীয় মেরামতের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় এবং নোটিশ প্রধান করা হয়। সে মোতাবেক খুলনা থানার মোড়ে সমবায় ব্যাংক ভবন এবং বড় বাজারের মধ্যে ওয়েষ্ট মেকট রোডে হোটেল আফগানিয়া ভেঙ্গে ৪তলা বিশিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান করা হয়েছে । এখানে জনতা ইন্টারন্যাশনাল মার্কেট করা হয়েছে। মামলা করার পর মালিক পক্ষের অনুকূলে আদালত রায় প্রদান করেন। সে মতে জেলা প্রশাসক মালিক পক্ষকে সম্পত্তি বুঝিয়ে দেয়। কেসিসির তালিকায় এই সম্পত্তি এখনো জেলা প্রশাসক মালিক রয়েছে। ক্লে রোডে একটি ভবন অপসারণ করা হয়েছে। আর কোন ভবন এই ১১ বছরেও মালিকগণ অপসারণ করেনি। আইনী জটিলতার কারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অপসারণ করতে পারছেনা। সরকারি ভবন অনেকে ব্যক্তি মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করেছেন। মামলা চলমান থাকায় অপসারণ হচ্ছেনা।
সূত্র জানায়, অধিক ঝঁকিপূর্ণ এবং বসবাসের অনুপযোগী ২৬টি ভবনের মধ্যে হেলাতলা,বড় বাজার ওয়েষ্ট মেকট রোড, কালিবাড়ি রোড, পুরাতন যশোর রোড, পুরাতন বাজার রোড, হাজী ইসমাইল রোড, ধর্মসভা রোড, স্যার ইকবাল রোড ও রামচন্দ্র দাস লেনে। এই ভবনগুলোক মালিক হ”েছ জেলা প্রশাসক, গণপূর্ত বিভাগ এবং ব্যক্তি মালিকানা।
অপেক্ষাকৃত কম ঝুঁকিপূর্ণ ১৭টি ভবনের মধ্যে বড় বাজার ভৈরব স্ট্যান্ড রোডের হাজী ইমান উদ্দিন এন্ড সন্স, খালিশপুর হাউজিং এষ্টেট, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, পশ্চিমবানিয়া খামার, শেরে বাংলা রোড ও সিমেট্রি রোড এবং ক্লে রোডে। ঝঁকিপূর্ণ ৫টি বাড়ির সম্প্রসারিত অংশ ভেঙ্গে প্রয়োনীয় মেরামতের সিদ্ধান্ত গ্রহীত হয় এবং মালিকদের নোটিশ দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে খুলনা সদর থানার মোড়ে কেডি ঘোষ রোডের সমবায় ব্যাংক ভবন ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে এবং বহুতল ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। বিএনপি অফিসের ৩য় তলার অংশ আজও ভাংগা হয়নি। ২য় তলায় বিএনপি কার্যালয়। আর নীচতলায় রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ক্লে রোডে একটি ভবনের ২য় ও ৩য় তলা অপসারণ করা হয়েছে। তবে মোট কতগুলো ভবন অপসারণ করা হয়েছে এর কোন সঠিক হিসেব নেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। এখন নতুন করে কিছু আবেদন আসছে বসবাসের অনুপযোগি ভবনের।
কলিবাড়ি রোডে ডেলটাঘাটে রয়েছে নগর ও জেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদ কার্যালয়। ৩তলা বিশিষ্ট এই ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। সিটি কর্পোরেশন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষনা করে লাল নোটিশ সেটে দিয়েছে। এই ভবনের ৩তলায় দিলীপ সাহা নামের একজন ব্যবসায়ী বসবাস করতেন। তিনি চলে গেছেন। তিনি বলেন, এখন একজন নৈশ প্রহরী বাসবাস করছেন। ৩তলায় রয়েছে তার ব্যবসায়িক গুদাম। ২য় তলার পূজা উদ্যাপন পরিষদের কার্যালয়। নীচ তলায় রয়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে বরাদ্দ নেয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন নগর শাখার সভাপতি শ্যামল হালদার বলেন, ওই ভবনটি তেমন সমস্যা নয়। পিছান থেকে একটু সমস্যা ছিল তা সমাধান করা হয়েছে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন’র সম্পত্তি বিভাগের কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, বসবাসের অনুপযোগি এমন নতুন করে কিছু আবেদন আসছে। আইনী জটিলতার কারনে বসবাসের অনুপযোগি এবং ঝঁকিপূর্ণ ভবন অপসারণ করা হ”েছন। মালিকানা দাবি করে অনেকে মামলা করছেন। ই”ছা থাকা স্বত্বেও ¯’ানীয় প্রশাসন ব্যব¯’া নিতে পারছেন না।