জন্মভূমি ডেস্ক : অনলাইন ট্রেডিংয়ের নামে বাংলাদেশিদের কাছ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া এমটিএফই’র প্রতারণা নিয়ে দেশজুড়ে আলোচনা চলছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের প্রতারণা নিয়ে চলছে বিভিন্ন বিশ্লেষণ। এরই মধ্যে এমটিএফই নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানিয়েছে, এমটিএফই’র ৪০০ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রয়েছে বাংলাদেশ। এই ৪০০ সিইও’র বিরুদ্ধে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করছেন গোয়েন্দারা। তাদের আটক বা গ্রেফতার করার জন্য গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি সাইবার ফুটপ্রিন্ট সংগ্রহ করছেন সংশ্লিষ্টরা।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, মেটাভার্স ফরেন এক্সচেঞ্জ গ্রুপ নামে ক্রিপ্টোকারেন্সি (যেমন- বিট কয়েন) ট্রেডিং প্ল্যাটফর্ম এমটিএফই’র প্রতারণা নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা ও তথ্য পেলেও এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ কিংবা মামলা পাওয়া যায়নি। তবে মামলা না পেলেও এ বিষয়ে ছায়াতদন্ত করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম ছিলো বায়বীয়। তারা প্রতারণার জন্য কোনো পণ্যের ব্যবহার করেনি অন্যান্য এমএলএম কোম্পানির মতো। তারা শুধু অ্যাপের মাধ্যমে এই প্রতারণা করেছে।
এমটিএফই’র প্রতারণায় জড়িত একটি ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম চক্র। তবে বাংলাদেশে এদের অনেক রিপ্রেজেনটেটিভ এবং ৪০০’র মতো সিইও’র সন্ধান পাওয়া গেছে। তাদের বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহ বাড়িয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা। তাদের গ্রেফতার বা আটকের জন্য বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযুক্তদের মামলার জন্য অপেক্ষা করছেন। এ বিষয়ে কোনো ভুক্তভোগীর অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পায়নি (এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত)।
এ বিষয়ে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের সাইবার ক্রাইম অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশনসের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এমটিএফই’র প্রতারণার বিষয়ে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে আমরা আমাদের কাজ করছি।
সাইবার পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা এমটিএফই’র অনেক গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের অধিকাংশই অ্যাপটির বিষয়ে জানতো না। তারা স্থানীয় সিইওদের সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণ করে অ্যাপটির বিষয়ে তথ্য জানতে পারে। প্রলোভিত হয়। এই দায় সিইওরা এড়াতে পারে না। তাই তাদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
এদিকে একটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ৪০০ জন্য সিইও’র বিষয়ে তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কেউ লিখিত অভিযোগ ও মামলা করলে জড়িতদের গ্রেফতার করা হবে।
সিআইডি ও ডিবি সূত্রে জানা যায়, এমটিএফই’র প্রতারণার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক ইউনিট কাজ করছে। পাশাপাশি এ বিষয়ে ডিবি এবং সিআইডিও কাজ করছে। তাদের প্রাথমিক তদন্তে এমটিএফই’র বেশ কয়েকজন রিপ্রেজেনটেটিভ ও মার্কেটিংয়ের লোকজনের সন্ধান পাওয়া গেছে।
সাইবার ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড রিস্ক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার রেজাউল মাসুদ বলেন, এমটিএফই একটি ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমচক্র। এর সম্পূর্ণ কার্যক্রম ছিল বায়বীয়। বাংলাদেশে এদের যারা রিপ্রেজেনটিভ বা মার্কেটিংয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল তাদেরকে আমরা আইনের আওতায় আনব।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ইন্টারনেটে একটি বিশাল জগৎ। এখানে লাখ লাখ অ্যাপ থাকে এবং কোটি কোটি মানুষ যুক্ত থাকে। আমি কী করে বুঝব যে এই অ্যাপস ক্ষতিকর। এটা যদি অবৈধ কোনো ব্যবসা হয় তাহলে এটা দেখবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। আর প্রতারণা হলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তো আমাকে বলেনি এখানে প্রতারণা হচ্ছে, স্যার এটা বন্ধ করেন।
বাংলাদেশে এমটিএফই’র কত গ্রাহক আছে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারেনি। তবে এমটিএফই’র হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে মোট ৮ লাখ অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে তাদের অ্যাপে। শুধু বাংলাদেশ নয়; দুবাই, ওমান, কাতার সৌদি আরবের মতো দেশগুলোতে কর্মরত বাংলাদেশিরাও এমটিএফইতে বিপুল পরিমাণে অর্থ বিনিয়োগ করেছেন। বাংলাদেশে তাদের কোনো অফিস নেই।
এমটিএফ’ই সিইও কারা: তারেক জামান (ছদ্মনাম) নামে এমটিএফই’র এক গ্রাহক বলেন, এমটিএফই’র ‘সিইও’ হতে হলে বিনিয়োগকারীকে প্রতি সপ্তাহে দুইজন নতুন গ্রাহক আনতে হবে। সেই নতুন বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগ থাকতে হবে কমপক্ষে ৫০১ মার্কিন ডলার। ‘সিইও’রা যাদের যাদের বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করেছেন, তাদের কাস্টমার সার্ভিসসহ সব ধরনের সাপোর্ট দিতেন। আমরা ভেবেছিলাম, ‘সিইও’রা এমটিএফই’র কর্মচারী। কিন্তু এখন জানলাম তারাও আমাদের মতোই। তারাও আমাদের মতো সর্বস্ব হারিয়েছেন।