হুমায়ূন কবীর রিন্টু , নড়াইল : নড়াইল সদর উপজেলার হবখালী হামিদুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি সৈয়দ আনোয়ারুল আলম সেন্টু বেসামাল হয়ে পড়েছেন। তিনি নিয়োগ বাণিজ্যে ব্যর্থ হয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরূদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি’র সদস্যদের ভুল বুঝিয়ে এবং প্রভাবিত করে প্রধান শিক্ষককে নানা ভাবে হয়রানী করে চলেছেন। নিজের দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, অন্যায় অনিয়ম ঢেকে রাখতে নানা ধরনের কুটকৌশল করছেন।
জানা যায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি’র সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সিদ্ধান্ত সমুহ পাশ কাটিয়ে নিজের ইচ্ছামত রেজুলেশন লিখিয়েছেন। অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে তিনি বিদ্যালয়ের অফিস সহকারি উজ্জ্বল মোল্যাকে রাতের অন্ধকারে নিজ বাড়িতে ডেকে নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরূদ্ধে রেজুলেশন লিখতে বাধ্য করেন। পদ চলে যাওয়ার ভয়ে তিনি সময়মত নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠন করেননি। তাছাড়া একাধিক ব্যক্তি বিধি মোতাবেক দাতা ভোটার হওয়ার জন্য নির্ধারিত টাকা জমা দিলেও তিনি তাদের দাতা ভোটার করতে দেননি। তাদেরকে ম্যানেজিং কমিটিতে আসতে না দেয়ার জন্য কমিটি গঠনের কার্যক্রমে অনিহা প্রকাশ করেন। ফলশ্রুতিতে নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি গঠন চরম ভাবে বাঁধাগ্রস্থ হয়। অথচ ম্যানেজিং কমিটি গঠন প্রক্রিয়া না করার ব্যাপারে একক ভাবে প্রধান শিক্ষক মোঃ আবু ছামিন বিশ্বাসকে দায়ি করে রেজুলেশন লিখিয়েছেন।
এদিকে তিনি সহকারি প্রধান শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দিতে সর্বোচ্চ তৎপরতা অব্যহত রেখেছেন। ম্যানেজিং কমিটি’র মেয়াদ রয়েছে আগামী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে তিনি নিয়োগ ও বিদ্যালয় ফান্ডের টাকা দফারফা করতে সকল অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তার এহেন কর্মকান্ডে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি ও অভিভাবক মহলে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা পূর্বের শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগের অনুদানের টাকার হিসেব নেয়ার জন্য প্রকাশ্যে গণমিটিং করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
অভিযোগ রয়েছে কমিটি’র মেয়াদের শেষ মুহুর্তে সভাপতি সৈয়দ আনোয়ারুল আলম সেন্টু একাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। নামকাওয়াস্তে কিছু কাজ করে নিয়োগ বাণিজ্যের টাকা হজম করতে তিনি তৎপর হয়ে উঠেছেন। বিষয়টি সচেতন মহলে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছর তিনি একাধারে এ বিদ্যালয়ের সভাপতির পদ দখল করে সুকৌশলে নিয়োগ বাণিজ্য করে আসছেন।
জানা গেছে ধূর্ত সভাপতি ইতোপূর্বে প্রধান শিক্ষক, সহকারি প্রধান শিক্ষক, সহকারি শিক্ষক (ইসলাম শিক্ষা), সহকারি গ্রন্থাগারিক, সহকারি শিক্ষক (কম্পিউটার), অফিস সহকারি, নিরাপত্তাকর্মী, সহ আরোও কয়েকটি পদে নিয়োগ দিয়ে বিপুল পরিমান অর্থ পকেটস্থ করেন। বিদ্যালয়ের উন্নয়নের কথা বলে এ যাবতকাল ওই টাকা নিজের কাছে রাখেন। এলাকাবাসির চাপে কিছু কাজ করে ওই টাকা হজম করার চেষ্টা করছেন।
সভাপতির দাদী’র নামে বিদ্যালয়টি’র নামকরণ করা হলেও বিদ্যালয়ে তাদের কোন জমি বা অর্থ দান করার কোন প্রমান মেলেনি। এলাকার মানুষকে বোঝান হতো তাদের জায়গায় বিদ্যালয়টি স্থাপিত। বিদ্যালয়ের দলিলে দেখা যায় হিন্দু সম্প্রদায়ের জমিতে বিদ্যালয়টি স্থাপিত। হবখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক মেম্বর সৈয়দ তোর্শিদ তৌহিদ সাহিন সহ আরোও কয়েকজন বলেন, বিদ্যালয়ের সভাপতি আনোয়ারুল আলম সেন্টু সুকৌশলে প্রায় ৩০ বছর সভাপতির পদ দখলে রেখে বিদ্যালয়ে অরাজক অবস্থার সৃষ্টি করেছেন। কোন ভোট বা নিয়ম নীতির তোয়াক্কা ছাড়া কমিটি করেন। সভাপতির একান্ত ব্যক্তিগত ইচ্ছায় তার পছন্দের গণিতের শিক্ষক সুশান্ত কুমার স্বর ও বাংলা’র শিক্ষক নির্মল কুমার সরকার যুগ যুগ ধরে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির টিআর সদস্য হয়ে আসছেন। টিআর সদস্য নির্বাচনের ক্ষেত্রেও শিক্ষকদের মতামতের সুযোগ দেন না স্বেচ্ছাচারি এ সভাপতি। একইভাবে নিজের পছন্দের লোকজনদের অভিভাবক সদস্য করেন। বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে বসে প্রকাশ্যে ধুমপান করেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের তাকে স্যার বলতে বাধ্য করেন। তার থেকে বেশি শিক্ষিত,সামাজিক মর্যাদাবান ও সম্ভ্রান্ত পরিবারের শিক্ষক-কর্মচারীরা তখন বিব্রত বোধ করেন। কতিপয় উচ্ছৃংখল যুবক নিয়ে তার চলাচলের কারনে এবং অহেতুক হয়রানীর ভয়ে ও আত্নমর্যাদার জন্য শিক্ষকরা সবকিছু মুখবুজে সহ্য করেন। তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিদ্যালয় চলাকালিন সময়ে গণিতের শিক্ষক সুশান্ত কে বাড়িতে নিয়ে প্রাইভেট পড়াতে বাধ্য করেন। আর স্কুল ফাঁকি দেয়ার সুযোগ পেয়ে শিক্ষক সুশান্ত ক্ষমতাধর সভাপতির চামচামিতে ব্যস্ত থাকেন। বিদ্যালয়ের কর্মচারীদের দিয়ে অসময়ে ব্যক্তগত কাজ করান। নিজেকে বিশেষ বংশীয় উচ্চ শিক্ষিত ও ক্ষমতাবান ব্যক্তি হিসেবে জাহির করায় সদা ব্যস্ত থাকেন। বিদ্যালয়ের পাশের বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ঠিকাদার খন্দকার সুমন নুর বলেন, ১৯১৬ সালে এ বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। সেই থেকে সৈয়দ আনোয়ারুল আলম সেন্টু’র পরিবারের সদস্যরা এ বিদ্যালয়টি শাসন করে আসছেন। তাদের পরিবারের বাইরে কেউ কোন দিন এ বিদ্যালয়ের সভাপতি হওয়ার সুযোগ পায়নি। সৈয়দ আনোয়ারুল আলম সেন্টু দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে স্কুলের সভাপতির পদ দখল করে আছেন। অথচ নিজের কোন সন্তানকে এ স্কুলে পড়াননি। এ স্কুলের সামনে দিয়েই নিজের ছেলে মেয়েদের নড়াইল শহরের স্কুলে নিয়ে যান। যে ব্যক্তি নিজের সন্তান নিয়ে যান অন্য প্রতিষ্ঠানে পড়াতে, তার কাছ থেকে ভালো কিছু আশা করা যায় না। তার কাজ অহেতুক শিক্ষক-কর্মচারীদের উপর খবরদারি করা ও নিয়োগ বাণিজ্য করা। যে কোন মূল্যে আবারও স্কুলের সভাপতি হওয়ার জন্য সকল ধরনের কুটকৌশল করে চলেছেন। এ সভাপতির সকল কার্যক্রমের তদন্ত করে তার বিরূদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সভাপতি সৈয়দ আনোয়ারুল আলম সেন্টু তার বিরূদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন,এলাকার কিছু মানুষ অহেতুক মিথ্যাচার করছে। তারা স্কুলের ভালো চায় না।
নড়াইলের হবখালী হামিদুন্নেছা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি বেসামাল

Leave a comment