হ্রাস পাচ্ছে আবাদি জমির পরিমাণ
শেখ আব্দুল হামিদ : পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর বিভাগীয় শহর খুলনার কৃষি জমিতে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। কৃষি জমির উপর দ্রুত গড়ে উঠছে মিল কলকারখানা দোকানপাট ঘর-বাড়ী, ইটভাটাসহ বিভিন্ন অকৃষি প্রকল্প। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা এখানে এসে জমি ক্রয় করছেন। ফলে প্রতিদিনই কমে আসছে এর পরিধি। গত এক যুগে খুলনায় ফসলের নিবিড়তায় উৎপাদন বাড়লেও উদ্বেগজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে কৃষিজমির পরিমাণ। জেলার ৯ উপজেলায় গত এক যুগে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ কমেছে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর। যদিও উন্নত প্রযুক্তি, উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন ও ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন প্রায়ই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, জেলার নয় উপজেলা দাকোপ, বটিয়াঘাটা, রূপসা, দিঘলিয়া, তেরখাদা, ফুলতলা, ডুমুরিয়া, পাইকগাছা ও কয়রায় ২০০৫-০৬ অর্থবছরে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫১ হাজার ১৮০ হেক্টর। ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে তা কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪৮ হাজার ১৭৩ হেক্টরে। ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে কৃষি জমির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ২২৫ হেক্টর। ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে কমে ১ লাখ ৩৫ হাজার ১১৭ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। আর ২০২০- ২১ অর্থ বছরে এর পরিমণ কমে ১ লাখ ২৭ হাজার ৯৭ হেক্টর হয়েছে। পদ্মা ব্রিজ চালুর পর ২০২২-২৩ অর্থবছরে আবাদযোগ্য কৃষি জমির পরিমাণ আরও কমে ১ লাখ ১৪ হাজার ৪২ হেক্টরে পৌঁছেচে।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইন্সটিটিউটের সর্বশেষ জরীপ অনুযায়ী খুলনা বিভাগে প্রতি বছর ২ হাজার ৮শ’ ৩১ হেক্টর জমি কমছে। যার হার দশমিক ২১ শতাংশ। বটিয়াঘাটার কৃষক নেতা প্রহ্লাদ চন্দ্র জোতদার বলেন, এ ভাবে কৃষি জমির পরিমাণ কমলে ভবিষ্যতে অল্প জায়গায় কীটনাশক আর সার দিয়ে উৎপাদন অস্বাস্থ্যকর খাদ্য খেতে হবে।
কৃষি বিভাগের এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে খুলনা জেলায় আবাদি জমির পরিমাণ কমলেও ফসলের নিবিড়তা বেড়েছে। অর্থাৎ এ এলাকায় এক ফসলি জমির পরিমাণ কমলেও বেড়েছে দো-ফসলি, তিন ফসলি ও তিনের অধিক ফসলি জমির পরিমাণ। এ ছাড়া আবাদযোগ্য স্থায়ী পতিত জমি ২০০৫-০৬ অর্থ বছরের তুলনায় কমেছে। সে হিসেবে নিট ফসলি জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তারের দেয়া হিসাব অনুযায়ী গত এক যুগে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ বেড়েছে ৩ হাজার ১৭৩ হেক্টর। পাশাপাশি জেলায় এক ফসলি বা কিছু দো-ফসলি জমির পরিমান সামান্য কমলেও বেড়েছে তিন ফসলি বা তিনের অধিক ফসলি জমির পরিমাণ। সে হিসেবে গত এক যুগে এ জেলায় ফসলের নিবিড়তা বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। গত ২০০৫-০৬ অর্থ বছরে ফসলের নিবিড়তা ছিল ১৭৮ শতাংশ। নিবিড়তার পরিমাণ বৃদ্ধিতে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২০৩ শতাংশে।
২০০৫-০৬ অর্থ বছরে জেলায় আবাদকৃত জমির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৩৪ হাজার ২০০ হেক্টর। এক যুগ পর ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে আবাদকৃত জমির পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এর পরিমাণ হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৮৩ হেক্টর। ৩৭৫১.৮৩ বর্গ কিলোমিটার এ জেলার আয়তন সমান থাকলেও দিনে দিনে কৃষি জমির পরিমাণ কমে আসছে। রূপসা উপজেলায় আবাদি জমির পরিমাণ ৮ হাজার ৪৭৮ হেক্টর, বটিয়াঘাটায় ১৯ হাজার ১২২ হেক্টর, দিয়লিয়ায় ৪ হাজার ৫০০ হেক্টর, ফুলতলায় ৫ হাজার ১৪৭ হেক্টর, ডুমুরিয়া ৩০ হাজার ৬০০ হেক্টর, তেরখাদা ১৪ হাজার ৫৬১ হেক্টর, দাকোপ ২০ হাজার ৪৩০ হেক্টর পাইকগাছায় ২৮ হাজার ৫৩০ ও কয়ারায় ১৬ হাজার হেক্টর। সূত্রমতে বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রনিত আবাদি এ জমির পরিমাণ গত এক যুগ আগে আরও অনেক বেশী ছিল।
খুলনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, খুলনাসহ জেলার সব জায়গায় কৃষি জমির পরিমাণ আশঙ্কাজনক ভাবে হ্রাস পাচ্ছে। এভাবে অপরিকল্পিত ভাবে মিল কলকারখানা ঘর-বাড়ি গড়ে উঠলে ভবিষ্যতে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিবে। খুলনার শহরতলী উপজেলা বটিয়াঘাটায় প্রতি বছর প্রায় ১০ ভাগ জমি অকৃষি হয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, এ অঞ্চলে নগরায়ন, চলমান উন্নয়নমূলক কাজ ইত্যাদি কারণে কৃষি জমি কমছে। ইটভাটার কারণে উর্বর জমি নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া অনেক জমিতে কৃষকরা একটি ফসল করে ফেলে রাখেন। আমরা সেখানে ডাল জাতীয় ফসল চাষের আলোচনা করছি। তবে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে ফসলের পরিমাণ বাড়ছে তবে হ্রাস পাচ্ছে কৃষি জমি।