মামলা হয়নি, গ্রেফতার নেই, বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন ভিক্টিম
জন্মভূমি রিপোর্ট : জেলার পাইকগাছা উপজেলা ধর্ষিতা গৃহবধু (৪৫) এখনো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারেনি। মাঝেমধ্যে জ্ঞান আসছে আবার চলে যাচ্ছে। এলোমেলো কথা বলছেন। স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে না পারায় পুলিশ কোন তথ্য পাচ্ছেন না পুলিশ। মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত থানায় মামলা হয়নি।
সুস্থ না হওয়ায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারী ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ওই গৃহবধু।
জানতে চাইলে পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওবায়দুর রহমান বলেন, পাইকগাছায় আলোচিত ধর্ষণ ঘটনায় বিকাল পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। তবে রাতে মামলা হতে পারে। এছাড়া এঘটনায় কাউকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি। তিনি বলেন, ভিক্টিম এখনো গুরুতর অসুস্থ থাকায় কোন তথ্য দিতে পারেননি। আমরা তার সুস্থ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছি। তবে ঘটনাটি আমাদের নজরদারীতে রয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে গৃহবধূর স্বামী বলেন, আমার স্ত্রীর অবস্থা এখনো খুব খারাপ। মাঝে মাঝে তার জ্ঞান আসছে আবার চলে যাচ্ছে। আমার কোন শত্রু নেই। কিন্তু কেন যে এমন ঘটনা ঘটলো ভাবতেই পারছিনা। একথা বলে তিনি হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন মামলা করবো কিনা চিন্তাভাবনা করছি।
জানতে চাইলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ড-২- এর সহকারী রেজিস্ট্রার ডাক্তার মো. কনক হোসেন বলেন, ওই রোগীকে যখন ভর্তি করা হয় তখন তিনি অবচেতন অবস্থায় ছিলেন। চোখের পাতা ও দুই ঠোঁট শক্ত আঠা দিয়ে লাগানো ছিল। রোগীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঁচড়ের দাগ ও ছোট ছোট আঘাতের চিহ্ন ছিল। অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে আঠা অপসারণ করা হয়। এরপর রোগীকে পাঠানো হয় চক্ষু ওয়ার্ডে। এরপর চক্ষু ওয়ার্ড থেকে তাঁকে ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) পাঠানো হয়। সেখানে তার ধর্ষণের আলামত সংগ্রহ করে সার্জারী ওয়ার্ডে আবারো ফেরত পাঠানো হয়।
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেলের (ওসিসি) কো-অর্ডিনেটর ডাঃ সুমন কুমার রায়ের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোগী এখনও সার্জারী ওয়ার্ডের তত্তাবধায়নে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাকে ওসিসিতে আনা হয়েছিল। পরীক্ষা-নীরিক্ষার পর তাকে ওই ওয়ার্ডে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, তার সাথে কি হয়েছিলো তার সঠিক তথ্য দেওয়ার মতো শারিরীক অবস্থায় তিনি নেই। তিনি এলোমেলো কথা বলছেন, সবকিছু ভুলে যাচ্ছেন।
এদিকে হাসপাতালে উপস্থিত গৃহবধুর ছেলে জানান, মায়ের শরীর এখনো বেশ দুর্বল। সোমবার গভীর রাতে তাঁর মায়ের জ্ঞান ফিরলেও তিনি কথা বলতে পারছেন না। এদিক ওদিক তাকিয়ে ইশারা করছেন।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা বিভাগীয় কো-অর্ডিনেটর আ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মানবাধিকার কর্মী হিসেবে আমার ৪০ বছরেও এমন লোমহর্ষক ঘটনা দেখিনি। এঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা ভিক্টিমকে সবধরলের আইনি সহায়তা দেব।
ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, পাইকগাছার রাড়ুলী গ্রামে রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত ৩ টা থেকে ৪ টার মধ্যে এ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
ওই রাতে কে বা কারা মই দিয়ে ছাদে প্রবেশ করে সিড়ির দরজা শাবল দিয়ে ভেঙে গৃহবধূর বেডরুমে ডোকেন। ওই গৃহবধূর স্বামী ব্যবসার কাজে বাইরে থাকায় তিনি একা বাড়িতে ছিলেন। গৃহবধূকে হাত পা বেঁধে চোখে সুপারগ্লু আঠা লাগিয়ে মুখে টেপ লাগিয়ে রেখে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত করেন। এসময় ১ জোড়া স্বর্ণের কানের দুল এবং আনুমানিক ২ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় চোর। পরে গৃহবধূর চিৎকারে আশেপাশের লোকজন এসে তার স্বামীকে খবর দেন এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।