পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল, পাইকগাছা : পাইকগাছায় পৌরসভা ও গদাইপুর ইউনিয়নের আংশিক লবণ পানি উত্তোলন বন্ধে ৪টি স্লুইস গেট তালাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আইনি নোটিশ ও এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা পৌরসভার সব কয়টি ও গদাইপুর ইউনিয়নের বয়রা স্লুইসগেটে পানি উত্তোলন বন্ধ করে দেন। খবরটি ছড়িয়ে পড়লে এলাকার ধান চাষি সহ অন্যান্য কৃষকদের মধ্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস দেখা দেয়।
প্রাপ্ত তথ্যে ও সরজমিনে জানা যায়, খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৬ নং পোল্ডারের পাইকগাছা পৌরসভার ও গদাইপুর ইউনিয়নের আংশিক বয়রা স্লুইসগেট দিয়ে পানি সরবরাহ করে থাকে। এর মধ্যে পৌরসভার শিববাটি, সরল ও বাতিখালী এবং গদাইপুর ইউনিয়নের গোপালপুর, বান্দিকাটি ও ঘোষাল গ্রামের একটি অংশে ইরি বোরো ধান আবাদ হয়ে থাকে। কিন্তু ওই সকল মৌজায় কিছু লোক স্লুইসগেট দিয়ে লবণ পানি তুলে মাছ চাষ করে থাকেন। তারা স্লুইসগেটের খালে নাম মাত্র দুই তিন জায়গায় বাঁধ দিয়ে লবণ পানি উত্তোলন করে থাকে। যে কারণে কোথাও বাঁধ উপচে, কোথাও ভেঙে লবণ পানি ঢুকে ইরি বোরো আবাদ নষ্ট হচ্ছে। এ ছাড়া বৃষ্টি এলেই বাঁধের কারণে ইরি আবাদ ও বিভিন্ন ঘর বাড়ি তলিয়ে যায়। এসব নানাবিধ সমস্যা
নিয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জনৈক আব্দুস সবুর গাজী পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেন। এছাড়া পাইকগাছা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. অজিত কুমার মন্ডল পানি উন্নয়ন বোর্ড সহ স্থানীয় প্রশাসনের নামে লবণ পানি উত্তোলন বন্ধের জন্য আইনি নোটিশ প্রদান করেন। এতেই নড়ে চড়ে বসে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। ওই সকল অভিযোগের ভিত্তিতে পানি উন্নয়ন বোর্ড পাইকগাছা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী উপ সহকারী কর্মকর্তা শাহ জালাল রবিবার সকালে গণমাধ্যমে কর্মী ও তার অধীনস্থ লোকদের নিয়ে এ অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময়ে তিনি পৌরসভার মধ্য ৩টি ও পৌর সীমান্তবর্তী এলাকায় বয়রা স্লুইস গেটটি বন্ধ করে দেন। এলাকায় আর ইরি-বোরো ধান আবাদ ব্যাহত হবে না।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ধান চাষি অখিল মন্ডল, এনায়েত আলী, নুর আলী, আব্দুল গাজী, মিঠু সরদার সহ এলাকাবাসী স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অভিবাদন জানান। পাউবো উপ সহকারী কর্মকর্তা মো. শাহাজালাল জানান, এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই সকল স্লুইস গেট দিয়ে লবণ পানি উঠতে না পারে সে জন্য গেটগুলো বন্ধ করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, ৮০ দশকে উপকূলীয় পাইকগাছার সমতলভূমি তে লবণ পানি উঠিয়ে চিংড়ি চাষ শুরু হয়। অল্প সময়ে অধিক মুনাফার লোভে এ ব্যবসা অতিদ্রুত প্রসার লাভ করে। ১৯৯৭ সালে পাইকগাছা পৌরসভা ঘোষণা হলে পৌর অভ্যন্তরে লবণ পানি উত্তোলন বন্ধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ঘের মালিকরা বিভিন্ন অসাধু উপায়ে চিংড়ি চাষ অব্যাহত রাখলে এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করে।
পাইকগাছায় লবণ পানি উত্তোলন বন্ধে আইনি নোটিশ: চাষিদের স্বস্তির নিঃশ্বাস
Leave a comment