আন্তর্জাতিক ডেস্ক : রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধবিরতিকে ‘ভণ্ডামি’ বলে অভিহিত করেছে ইউক্রেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অর্থোডক্স ক্রিসমাস সময়কালে যুদ্ধবিরতির জন্য রুশ নির্দেশনাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, এ প্রস্তাবিত রুশ যুদ্ধবিরতির লক্ষ্য হলো পূর্ব ডনবাস অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর অগ্রগতি রোধ করা এবং মস্কোকে আরও সৈন্য আনার অনুমতি দেওয়ার একটি কৌশল।
বৃহস্পতিবার রাশিয়ান অর্থোডক্স চার্চের প্রধান প্যাট্রিয়ার্ক কিরিলের ক্রিসমাস যুদ্ধবিরতির আহ্বানের পরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ৩৬ ঘন্টার যুদ্ধবিরতির নির্দেশ দিয়েছেন। এটা শুক্রবার মধ্যাহ্ন থেকে শনিবার পর্যন্ত চলবে।
পুতিন বলেছেন, কিরিলের আবেদনকে বিবেচনায় নিয়ে আমি রাশিয়ান ফেডারেশনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে ইউক্রেনীয় ফ্রন্ট লাইনে একটি যুদ্ধবিরতি চালু করার নির্দেশ দিচ্ছি।
এ যুদ্ধবিরতি রাশিয়ার আক্রমণাত্মক এবং প্রতিরক্ষামূলক অভিযানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে কিনা তা উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে গেলে রাশিয়া পাল্টা আঘাত করবে কিনা তাও এখানে স্পষ্ট নয়।
এ বিষয়ে জেলেনস্কি বলেন, মস্কো বারবার কিয়েভের শান্তি পরিকল্পনাকে উপেক্ষা করেছে। তারা এখন ক্রিসমাসকে একটি আবরণ হিসেবে ব্যবহার করতে চায়। তারা পূর্ব ডনবাস অঞ্চলে ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর অগ্রগতি রোধ করতে এবং রুশ সেনাবাহিনীর জন্য সামরিক সরঞ্জাম, গোলাবারুদ এবং আরও সৈন্য নিয়ে আসার কৌশল হিসেবে যুদ্ধবিরতিকে ব্যবহার করবে।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট বলেন, পুরো বিশ্ব জানে কীভাবে রাশিয়া নতুন শক্তির সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য যুদ্ধবিরতিকে ব্যবহার করে।
উল্লেখ্য,গত বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি তারিখে ইউক্রেনের মাটিতে আক্রমণ চালায় রুশ বাহিনী। প্রায় এক বছর ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের যুদ্ধ চলছে। কিন্তু, যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণই দেখা যায়নি। বরং যত দিন যাচ্ছে, দু’দেশের মধ্যে যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে। রুশ বাহিনীর আক্রমণে ইউক্রেনের বিস্তীর্ণ এলাকা কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। যুদ্ধে মৃত্যু হয়েছে বহু মানুষের। ইউক্রেনের বহু মানুষই ঘর ছেড়ে অন্য দেশে আশ্রয় নিয়েছেন।
গত কয়েক দিন ধরে ইউক্রেনের ওপর আগ্রাসীভাবে আক্রমণ চালাচ্ছে রাশিয়া। এ সময় একের পর এক ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে।
সম্প্রতি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়া একের পর এক ড্রোন হামলা চালিয়ে ইউক্রেনকে বিধ্বস্ত করার পরিকল্পনা করেছে। আমাদের অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা যেন হার না মানি। এছাড়া আমাদের মনোবল যাতে না কমে। আমরা দেশের জন্য সব কিছু করব।
এরপর রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন রুশ অর্থোডক্স চার্চের প্রধান প্যাট্রিয়ার্ক কিরিল। এ সময় তিনি বলেন, আমি (রুশ ও ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষকে) ৬ জানুয়ারি বেলা ১২ টা থেকে ৭ জানুয়ারি রাত ১২টা পর্যন্ত ক্রিসমাস যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠা করার জন্য আবেদন করছি। যাতে করে খ্রিস্টান অর্থোডক্স শাখার লোকেরা তাদের ধর্মানুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারে এবং ক্রিসমাস ইভ ও ক্রিসমাস ডে-এর পরিষেবায় অংশগ্রহণ করতে পারে।
প্যাট্রিয়ার্ক কিরিলের আহ্বানে সাড়া দিয়েই আগামী দু’দিন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছেন পুতিন। এর মাধ্যমে দু’দেশের মধ্যে গত ১০ মাস ধরে চলা যুদ্ধের আবহে এই সাময়িক বিরতি ঘোষণা করলেন রুশ প্রেসিডেন্ট।