তৈরি পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বৃদ্ধির হার প্রায় ৫৬ শতাংশ। এর সঙ্গে বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্টসহ (বেতন বৃদ্ধি) নতুন বেতন কাঠামো ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। মঙ্গলবার সচিবালয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলনে ন্যূনতম মজুরির ঘোষণা দেন প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান। এ সময় তিনি বলেন, শ্রমিকদের রেশনের দাবির কথা বিবেচনায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী একটি পরিবারের জন্য একটি ফ্যামিলি কার্ড নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন। পরবর্তীকালে এ কার্ডের মাধ্যমে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষোভ-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের পথ পরিহার করে শ্রমিকদের কাজে যোগ দেওয়া উচিত।
সম্প্রতি ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধির দাবিকে কেন্দ্র করে শ্রমিকদের কারখানা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হামলায় হুমকির মুখে পড়ে দেশের তৈরি পোশাক খাত। হামলা ও ভাঙচুরের আশঙ্কায় অন্তত ৬৫০ কারখানা বন্ধ রাখা হয়। এতে ব্যাহত হয় উৎপাদন। এখন অবশ্য বন্ধ কারখানাগুলো খুলতে শুরু করেছে। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো নানা কর্মসূচি দিচ্ছে। বিরোধী দলগুলোর ডাকা অবরোধ কর্মসূচির কারণে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থা অচল হয়ে পড়ায় এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এ শিল্পে। বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা বলছেন, শ্রমিক আন্দোলনের নামে কোনো গোষ্ঠী এ খাতকে ধ্বংসের পাঁয়তারা করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার।
শ্রমিকদেরও বুঝতে হবে, নিজেদের কর্মক্ষেত্রে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর হঠকারিতা। কারণ কারখানা চালু এবং নিয়মিত কাজ থাকলে তা শ্রমিকদের জন্যই মঙ্গলজনক। উপার্জনের স্থানকে হুমকির মুখে ফেললে এর জের শ্রমিকদেরই টানতে হয়। আবার পোশাকশিল্পের কর্ণধারদেরও মনে রাখা প্রয়োজন, শ্রমিকরাই তাদের আয়ের মাধ্যম। একজন শ্রমিক যে উপার্জন করেন, বর্তমান বাজারে তা জীবনধারণের জন্য যথেষ্ট কিনা, অভিভাবক হিসাবে সেদিকে নজর রাখা উচিত। এটাও সত্য, করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব পোশাক খাতেও পড়েছে। বিশ্বের যে দেশগুলো নিয়মিত কার্যাদেশ দিয়ে থাকে, তারা আগের মতো তা দিচ্ছে না। এ অবস্থায় সরকার তৈরি পোশাক খাতকে বাঁচাতে যে ধরনের উদ্যোগ নিয়েছিল, এখনো তেমন কোনো পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা, তা ভেবে দেখা যেতে পারে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম উৎসে কোনো কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ুক, তা কাঙ্ক্ষিত নয়। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এমনিতেই ডলারের সংকট চলছে। আর দেশে ডলার আয়ের প্রধান দুটি খাতের অন্যতম রপ্তানি, যার বড় অংশ আসছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। বৈদেশিক রেমিট্যান্স প্রবাহে কিছুদিন ধরে নিুগতি লক্ষ করা যাচ্ছে। ব্যাংক ও আর্থিক খাতও নানা কারণে ভালো নেই। এমন অবস্থায় রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের গতি স্বাভাবিক রাখতে রপ্তানিযোগ্য তৈরি পোশাক খাতের চলমান সংকট নিরসনে মালিকপক্ষ, শ্রমিক সংগঠনগুলো ও সরকার ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে, এটাই প্রত্যাশা।