জনকল্যাণে সরকার নানা ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করে। কিন্তু সেসব প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি, স্বচ্ছতা ও মান নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন থাকে। অনেক সময় প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি জনদুর্ভোগের কারণ হয়ে ওঠে। ধীরগতির কারণে প্রকল্পের খরচও বাড়ে। রাষ্ট্রের ক্ষতি হয়। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বহু আলোচনা-সমালোচনা হয়। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে চলমান অনেক প্রকল্পই নির্ধারিত সময়ে শেষ হচ্ছে না। একের পর এক প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব পাঠানো হচ্ছে। আর তা নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। বৈঠক থেকে প্রকল্পের কাজ দ্রুত শেষ করতে অর্থছাড়ের পাশাপাশি মনিটরিং জোরদারের সুপারিশও করা হয়। একই সাথে কোনো পক্ষের গাফিলতি ধরা পড়লে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি ও মান কোনোটারই অগ্রগতি হয় না।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরাখবরে দেখা গেছে, নির্ধারিত সময়ে অনেক প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণসহ প্রাথমিক কাজই শেষ হয় না। অভিযোগ আছে, প্রকল্প পরিচালক বা পিডি সাহেবরা দামি গাড়িসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে ঢাকায় বা অন্য কোনো বড় শহরে অবস্থান করেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে বিনোদন বা পর্যটনকেন্দ্রে ঘুরে বেড়ান, কিন্তু প্রকল্প এলাকায় যান না। এসব নিয়ে খোদ পরিকল্পনামন্ত্রী অনেকবার প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা প্রকল্প বাস্তবায়নের মান ও গতি বাড়ানোর জন্য তাগাদা দিয়ে চলেছেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না, এমন একটা অবস্থা বিরাজমান। সেদিক থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির উদ্বেগ প্রকাশ যৌক্তিক ও সময়োপযোগী। শুধু অর্থ দিলে হবে না, অর্থ প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে মনিটরিং জোরদার করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতিবেদন যথাসময়ে আইএমইডি বরাবর পেশ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কারো কোনো গাফিলতি আছে কি না তা খুঁজে দেখতে হবে। গাফিলতি পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
দেশে উন্নয়নের যে ধারা সূচিত হয়েছে, তা আরো বেগবান ও স্থায়ী করতে হলে প্রকল্প বাস্তবায়নের ওপর অনেক বেশি জোর দিতে হবে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় (এডিপি) শত শত উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হলেও সেগুলোর বাস্তবায়নের গতি খুবই কম, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। শেষ মুহূর্তে তাড়াহুড়া করতে গিয়ে বাস্তবায়নে কাঙ্খিত মান থাকে না। এই প্রবণতা থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে।