জন্মভূমি ডেস্ক : বিভিন্ন পণ্যের পাশাপাশি ব্রয়লার মুরগির দাম বাড়তে শুরু করেছে। এর আগে গত বছরও রোজার আগে ঠিক এমন সময়ে ব্রয়লারের দাম বাড়তে দেখা গিয়েছিল। সে সময় একপর্যায়ে তা পৌঁছেছিল প্রতি কেজি প্রায় ২৬০-২৭০ টাকায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজার নিয়ন্ত্রণে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি এখনই তদারকি কার্যক্রম জোরদার না করলে গত বছরের মতো এবারো ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়ার বড় আশঙ্কা রয়েছে।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২১০ টাকায়। কোথাও কোথাও তা ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুদিন আগেও এ দাম ছিল ১৯০-২০০ টাকা। এছাড়া বর্তমানে সোনালি ২৮০-৩০০ টাকা, দেশী মুরগি ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা এবং লেয়ার মুরগি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব মুরগিরও দাম বেড়েছে কেজিতে ২০-৩০ টাকা। এছাড়া বাজারে এখন প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকায়। খুচরায় প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩ টাকায়।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি ব্রয়লারের দাম ছিল ১৮৫-১৯৫ টাকা। আর প্রতি হালি ডিম বিক্রি হয়েছে ৪৫-৪৮ টাকায়। অর্থাৎ একটি ডিমের দাম ছিল ১২ টাকা। মূলত গত দুদিনে বাজারে মুরগির মাংস ও ডিমের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ী মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রয়লার প্রতি কেজি ২১০ টাকায় বিক্রি করছি। দুদিন আগেও ১৯০ টাকা ছিল। দাম বাড়তির দিকে। বেশি দাম দিয়ে কিনলে বেশি দামে বিক্রি করতে হয়। কী কারণে বাড়ছে তা জানা নেই। মুরগির সংকটও নেই।’
গতকাল থেকে ডিমের দামও বেড়েছে বলে জানান আরেকজন বিক্রেতা। তিনি বলেন, ‘গতকাল ১৩৫ টাকা ডজন বিক্রি করেছি। কিন্তু আজ ৫ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে। এ কারণে ১৪০ টাকায় বিক্রি করছি।’
গত বছরেও ঠিক এ সময়ে বাড়তে শুরু করে মুরগি ও ডিমের দাম। গত বছরের জানুয়ারিতে প্রতি কেজি ব্রয়লারের দাম ছিল ১৪০-১৫৫ টাকা। আর প্রতি হালি ডিমের দাম ছিল ৪০ টাকা। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকেই বাড়তে শুরু করে দাম। মার্চে প্রতি কেজি ব্রয়লার বিক্রি হয় ২৫০-২৬০ টাকায়। আর প্রতি হালি ডিম বিক্রি হয় ৫০ টাকায়। মূলত রমজানকে সামনে রেখেই ব্রয়লারের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন ক্রেতারা।
শিক্ষক মো. আকরাম হোসেন বলেন, ‘বাজারে সব জিনিসের দাম বাড়ছে। সবজির দাম আকাশছোঁয়া। গরুর মাংস বা মাছের দামও অনেক। নিম্ন মধ্যবিত্তরা ব্রয়লার আর ডিমের ওপর বেশি নির্ভর করে। কিন্তু কোনো উপলক্ষ এলে হঠাৎ করে দেখা যায় ডিম-মুরগির দাম বেড়ে যায়। গত বছর রমজানের আগে দামে অস্থিরতা দেখা গিয়েছিল। এবারো যেভাবে বাড়ছে, তাতে দাম কোথায় গিয়ে ঠেকে কে জানে!’
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার বলেন, ‘ডিম-মুরগির ক্ষেত্রে সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। একটি সময়কে টার্গেট করে যদি বাচ্চার সরবরাহ কমিয়ে দেয়া হয় বা দাম বাড়িয়ে দেয়া হয় তখন প্রান্তিক খামারিরা বাচ্চা তোলেন না। এক মাস পর দেখা যায় এর প্রভাবে বাজারে সরবরাহ কমে যায়। এতে মুরগি ও ডিম দুটোর দামই বেড়ে যায়। করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো একই সঙ্গে বাচ্চা, খাদ্য ও ডিম-মুরগি উৎপাদন করছে। আবার কন্ট্রাক্ট ফার্মিংও করছে। এ কারণে তারা সহজেই বাজারে দাম বাড়ানো বা কমানোকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।’
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে কনজিউমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, ‘দাম বাড়বে কিনা, সেটা ব্যবসায়ীদের মর্জির ওপর নির্ভর করছে। দাম বাড়ার কোনো মৌলিক কারণ নেই। তাদের ইচ্ছে হলে দাম বাড়াবে বা তাদের ইচ্ছে হলে দাম কমাবে। কারণ তারা তো কোনো নিয়ম মানছে না। আবার তদারকিও ঠিকভাবে হচ্ছে না বা তার প্রভাব পড়ছে না। একসময় ছোট খামারিদের নিয়ন্ত্রণে ছিল পোলট্রি খাত। কিন্তু এখন ছোট খামারিরা লোকসানে পড়ে বসে গেছে, যার ফলে করপোরেট বড় প্রতিষ্ঠানগুলো বাজারে প্রভাব রাখছে। গত সপ্তাহেও ব্রয়লারের কেজি ১৮০ টাকা ছিল। এক সপ্তাহে দাম বেড়েছে। অযৌক্তিক অজুহাতে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন। সব পণ্যের দামই এখন বাড়তি। বাজার ভালোভাবে তদারকি না করলে বাজার আরো অস্থিতিশীল হবে। কারণ অপরাধ করে পার পেয়ে গেলে তারা তা আবার করবে।’