শেখ মোহাম্মদ আলী, শরণখোলা : বঙ্গোপসাগরে বৈরী আবহাওয়ায় চারদিন যাবৎ মাছধরা বন্ধ রেখে দুবলারচরে হাজার হাজার জেলে অলস সময় পার করছেন। আর্থিক লোকসানের শংকায় জেলে মহাজন ও আড়ৎদাররা। ঘূর্ণীঝড় মিগজাউমের প্রভাবে সাগরে এমন অবস্থা বলে জেলেরা জানিয়েছেন।
দুবলার আলোরকোল থেকে রামপাল জেলে সমিতির সভাপতি মোতাসিন ফরাজী শুক্রবার দুপুরে মোবাইল ফোনে বলেন, ঘূর্ণীঝড় মিগজাউমের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে গত চারদিন ধরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। সুর্যের দেখা নেই। আকাশ ভারী মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে। মাঝে মাঝে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়া বইছে। দুবলারচরের কয়েক হাজার জেলে মাছধরা বন্ধ রেখে আলোরকোলসহ সুন্দরবনের বিভিন্ন খালে ট্রলার নৌকায় অলস সময় পার করছেন বলে মোতাসিন ফরাজী জানিয়েছেন।
দুবলা ফিসারমেন গ্রুপের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও মৎস্য ব্যবসায়ী শাহানুর রহমান শামিম বলেন, দুবলার শেলারচর, নারিকেলবাড়[ীয়া, মাঝেরকেল্লা ও আলোরকোলে অবস্থানরত কয়েক হাজার শুটঁকি জেলে বৈরী আবহাওয়ায় সাগরে যেতে পারছেনা। মাছধরা বন্ধ থাকায় জেলে মহাজন ও আড়ৎদাররা আর্থিক লোকসানের সম্মূখীন হয়েছেন। এবারের শুটঁকি মৌশুমের শুরু থেকে ক্রমাগত জেলেরা সাগরে দূর্যোগের কবলে পড়েছেন ফলে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে মহাজন আড়ৎদাররা দুশ্চিন্তায় আছেন বলে শাহানুর রহমান শামিম জানান।
দুবলার মাঝেরকেল্লার জেলে ইউনুস ফকির, আলাল মিয়া, নারিকেলবাড়ীয়ার জেলে বেলাল হোসেন, চান মিয়া ও শেলারচরের জেলে ছগির হোসেন এবং আবুল কালাম বলেন, বর্তমানে দুবলারচরে দশ হাজারেরও বেশি জেলে অবস্থান করছেন। এদের প্রায় সকল জেলে মহাজনদের কাছ থেকে দাদন ( অগ্রিম টাকা) নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে এসেছে। মাছ ধরে মহাজনের দেনা শোধ করার কথা। বার বার আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় সাগরে মাছ ধরতে যেতে পারিনা। এভাবে আবহাওয়া খারাপ হলে আগামী দিনে কিভাবে আমরা মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধ করবো সেই চিন্তায় রাতে ঘুম আসেনা বলে জানালেন ঐ জেলেরা।
আলোরকোল অস্থায়ী ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেষ্টার দিলীপ মজুমদার বলেন, আবহাওয়া খারাপ থাকায় জেলেরা নৌকা ট্রলার নিয়ে আলোরকোলসহ আশেপাশের খালের মধ্যে আশ্রয় নিয়ে অলস সময় কাটাচ্ছে। একই অবস্থা জানালেন, শেলারচর ফরেষ্ট টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেষ্টার সাইফুল বারী। তিনি বলেন, চারদিন ধরে সুর্যের মুখ দেখা যাচ্ছেনা। জেলেরা মাছ ধরতে না পেরে কষ্টে আছেন।
জেলেপল্লী দুবলা ফরেষ্ট টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেষ্ট রেঞ্জার মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, এবারের শুঁটকি মৌসুমের শুরুটা ভালো যাচ্ছেনা। কয়েক দফা আবহাওয়া খারাপ হওয়ায় জেলেরা মাছ ধরতে পারছেনা। কয়েকদিন আগে বৃষ্টিতে কোটি কোটি টাকার মাছ ভিজে পচে গেছে। গত চারদিন যাবৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে গুমোটভাব ধরে আছে। ঘূর্ণীঝড় মিগজাউমের কারণে এমনটা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। এ সকল কারণে বর্তমানে বনবিভাগের শুটঁকি খাতের রাজস্ব ঘাটতির আশংকা থাকলেও আবহাওয়া আর খারাপ না হলে জেলেরা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে সে ক্ষেত্রে বনবিভাগের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পুরণ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ঐ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
বঙ্গোপসাগরে বৈরী আবহাওয়ায় চারদিন যাবৎ মাছধরা বন্ধ
Leave a comment