ট্যাংকিতে জন্ম নেয়া পোকা মারতে ছাড়া হয় মাছ
শেখ আব্দুল হামিদ : উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের ১৪ গ্রামের মানুষ বছরে ৮ মাস শুধুই বৃষ্টির পানি পান করেন। চলতি বছর বৃষ্টির পরিমাণ কম হওয়ায় সেখানে সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে। পানির স্তর নেমে যাওয়ায় গত ১০ বছওে প্রায় ২০০টি সুপেয় পানির উৎস বন্ধ হয়ে গেছে। গভির নলকূপ রয়েছে ১ হাজার ৭৯৭টি। ইতোমধ্যে তার ৯০টি সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়ে আছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দেয়া সূত্রমতে, সুরখালী ইউনিয়নের বারআড়িয়া, সুন্দরমহল, কোদলা, শম্ভুনগর, কল্যাণশ্রী, বুনারাবাদ, রায়পুর, বারভূঁইয়া, গঙ্গারামপুর ইউনিয়নে কাশিয়াডাঙ্গা, গোন্দামারী, বরণপাড়া এবং ভান্ডারকোট ইউনিয়নের পশ্চিম হালিয়া গ্রামে মাটির গভিরে সুপেয় পানির স্তর নেই। বছরের প্রায় ৭-৮ মাস তারা বৃষ্টির পানি ধরে রেখে পান করেন। পানি ধরে রাখার জন্য সরকারী ভাবে মাত্র আড়াই হাজার পরিবারকে একটি করে ট্যাংকি দেয়া হয়। প্রতিটির ধারণ ক্ষমতা ৩ হাজার লিটার। অন্যান্যরা ব্যক্তিগত ভাবে মাইট বসিয়ে বৃষ্টির পানি ধরে রাখেন। এ বছর বৃষ্টির পরিমাণ কম হওয়ায় অর্ধেক পরিমাণও পানি তারা ধরতে পারেনি। এসব এলাকায় পুকুর খননসহ পানি সদন করে খাওয়ার সিস্টেম রয়েছে মাত্র ৩টি। ট্যাংকি ব্যবহারকারীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, বৃষ্টির সময় টিনের চাল থেকে পড়া পানি বিশেষ পদ্ধতিতে ট্যাংকিতে ধরে রাখা হয়। ট্যাংকি ভরে গেলে ভালো ভাবে মুখ বন্ধ করে দেয়া হয়। বর্ষাকাল শেষ হলে তারা এ পানি পান করেন। গঙ্গারামপুর ইউনিয়নে মোট ট্যাংকি স্থাপন করা হয়েছে ২০০টি, সুরখালী ১,৮২২টি এবং ভান্ডারকোট ইউনিয়নের হালিয়া গ্রামে ১০০টি।
ট্যাংকি ব্যবহারকারী গঙ্গারামপুর ইউনিয়নের দীপবরণপাড়া গ্রামের বিধান রায় ও সুরখালী ইউনিয়নের সুন্দরমহল গ্রামের বিভূতি কুমার মন্ডল বলেন, ট্যাংকি ব্যবহারের পূর্বে মাটির মাইটে পানি ধরে রেখে পান করতাম। বৃষ্টির পানি ৩/৪ মাস পান করার পর এক প্রকার পোকা জন্ম নেয়। তখন কৈ বা খলিসা মাছ তার মধ্যে ছেড়ে দিলে আর পোকা থাকে না। তখন ফিটকারী দিয়ে পানি পান করা হয়। এ পানি ব্যবহারে শিশুদের মাঝে মধ্যে ডায়রিয়া দেখা দিলেও পরে সহ্য হয়ে যায়। তারা বলেন প্রায় ২ হাজার ফিট গভিরে নলকূপ বসান গেলে হয়ত সুপেয় পানি পান করা যেত।
বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা: মো. মিজানুর রহমান বলেন, বৃষ্টির পানি ধরে রেখে মাসের পর মাস পান করা মোটেই স্বাস্থ্য সম্মত নয়। পানি বাহিত বিভিন্ন রোগ বিশেষ করে ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরাসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। শিশুদের সার্বক্ষণিক ঝুঁকি থেকে যায়।
বটিয়াঘাটা উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌলী রুনা আক্তার সুমী বলেন, তার এলাকায় গঙ্গারামপুর, ভান্ডারকোট ও সুরখালী ইউনিয়নের ১৩-১৪টি গ্রামে নলকূপে পানি ওঠেনা। সেখানে আরও গভিরের স্তরে নলকূপ বসালে হয়ত পানি উঠবে। তিনি বলেন, বর্ষাকালে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য তিন গ্রামে প্রায় তিন হাজার ট্যাংকি দেয়া হয়েছে। আরও ট্যাংকির প্রয়োজন আছে।