প্রতি মাসে চিকিৎসা নেয় ১৫ হাজার রোগী
শেখ আব্দুল হামিদ : বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অর্থোপেডিক, চক্ষু, চর্ম, যৌন, শিশু, নাক-কান গলা ও হৃদরোগ-বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকলেও থেমে নেই সেবা। বিভাগীয় শহর খুলনার নিকটবর্তী এ উপজেলায় প্রতি মাসে চিকিৎসা নেয় প্রায় ১৫ হাজার রোগী। হাসপাতাল প্রধানের বুদ্ধিমত্বা আর চিকিৎসকদের আন্তরিকতায় প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। অথচ এখানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী আছে মাত্র ১ জন। আউট সোর্সিংয়ের কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী বিষয়টি দেখভাল করেন।
২০২১ সালের পহেলা এপ্রিল হাসপাতালে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন ডা: মিজানুর রহমান। তার যোগদানের আগে এনেস্থিসিয়া চিকিৎসক না থাকায় বন্ধ ছিল সিজার, অ্যাপেন্ডিক্্রসহ বিভিন্ন রোগের অপারেশন। গর্ভবতী মায়েরা ডেলিভারির সময় এ হাসপাতালে ভর্তি হতে ভয় পেতেন । স্বাভাবিক ভাবে ডেলিভারির ব্যবস্থাও ছিল না। খুলনা যাবার পথে ভ্যানের উপর প্রসব করার দৃষ্টান্তও রয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে তিনি যোগদানের পর হাসপাতালের পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এবং চিকিৎসার মান উন্নায়নে চেষ্টা শুরু করেন। নতুন এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসেন। হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি করেন। ১৫ থেকে ২০ জন রোগীর স্থানে এখন ৬০-৭০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। বহি:বিভাগে প্রদিন ৪০০ থেকে ৪৭০ জন রোগী চিকিৎসা নেয়। এর সংখ্যা পূর্বে ছিল মাত্র ১০০ থেকে ১২০ জন। তিনি সংক্রামক রোগীদের চিকিৎসার জন্য এনসিডি কর্ণার স্থাপন এবং বিনামূল্যে ডায়াবেটিস ও প্রেসার পরীক্ষাসহ এক মাসের পূর্ণ কোর্স ওষুদ প্রদানের ব্যবস্থা করেন। আন্ত: ও বহি:বিভাগে আগত সকল রোগীদের এক্্র-রে, আল্ট্রাসনো, ইসিজি ও প্যাথলজিক্যাল প্রায় সকল পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। যেটা পূর্বে ছিল না। কোভিড ও ডেঙ্গু ওয়ার্ডে নিরবিচ্ছিন্ন অক্্িরজেন ব্যাংক ব্যবস্থা করেছেন। দীর্ঘ ১০ বছর বন্ধ থাকা অপারেশন থিয়েটার চালু করেন। প্রায় এক বছর চালু থাকার পর এনেস্থিসিয়া চিকিৎসক বদলি হওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় অপারেশন। বর্জব্যবস্থাপনার জন্য সেড নির্মাণ করেছেন, যা অন্য কোন উপজেলায় নেই। হাসপাতাল স্টাফদের যানবাহন রাখতে গ্যারেজ নির্মাণ হয়। ৩১ শয্যার পুরাতন ভবন সংস্কার করে সেখানে দাপ্তরিক কাজ. শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মেডিসিন স্টোররুম ও কনফারেন্স রুম করা হয়েছে। হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা চিকিৎসক, নার্স, ধাত্রী নার্স ও অন্যান্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের উপস্থিতি নিশ্চিত করেন। কমিউনিটি ক্লিনিক পূন:নির্মাণ ব্যবস্থাসহ নরমাল ডেলিভারি বৃদ্ধির ব্যবস্থা করেন। ডা. মিজানুর রহমান এর একান্ত প্রচেষ্টায়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল সার্ভিস স্ট্রেন্ডিনিং (এইসএসএস) স্কোরিং এ খুলনা জেলার মধ্যে পরপর তিন বার প্রথম স্থান লাভ করে। যক্ষা নির্মূল কর্মসূচিতে ২৩ সালে জেলার মধ্যে বেস্ট এওয়ার্ডে ভূষিত হয়। সর্বপরি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মিজানুর রহমান প্রতিদিন তার দপ্তরে বসে রোগী দেখেন এবং রাউন্ডে যান। তার এ আন্তরিকতায় রোগীদের মাঝে প্রাণচাঞ্চলাতা ফিরে এসেছে। বটিয়াঘাটায় স্থাপন হয়েছে এক নতুন দৃষ্টান্ত।
তার এই যাদুকরী সাফল্যের পিছনে থাকা রহস্য সম্পর্কে জানতে চাইলে ডা. মিজান বলেন, প্রচেষ্টা এবং উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতার ফলেই মানুষদের এ সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে। তিনি বলেন, চাহিদা মোতাবেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং জনবল পাওয়া গেলে প্রাণ খুলে চিকিৎসকরা সেবা দিতে পারেন। ঘুরে দাঁড়ায় হাসপাতাল। বৃদ্ধি পায় স্বাস্থ্য সেবা।