জন্মভূমি ডেস্ক : বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসেনি ২০২৩ সালে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট তথা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত মানবাধিকার প্রতিবেদন-২০২৩-এ বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বছরজুড়ে (২০২৩ সালে) বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতিতে উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন আসেনি। এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে নির্বিচার বা বেআইনি বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, সরকারের নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক, অবমাননাকর আচরণ ও শাস্তি; কারাগারের করুণ অবস্থা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার বা আটক ইত্যাদিসহ নানা ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য খবর আছে।
এ ছাড়া, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে গুরুতর সমস্যা, রাজনৈতিক বন্দী, অন্য দেশে নাগরিকদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে দমপীড়ন, গোপনীয়তায় স্বেচ্ছাচারী বা বেআইনি হস্তক্ষেপ, ব্যক্তির অপরাধের জন্য তাঁর পরিবারের সদস্যদের শাস্তি, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বা সহিংসতার হুমকি, তাদের অযৌক্তিকভাবে গ্রেপ্তার বা বিচার, সেন্সরশিপ ও মত প্রকাশ সীমিত করার জন্য ফৌজদারি মানহানি আইন কার্যকরকরণ বা হুমকির মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর গুরুতর বিধিনিষেধ, ইন্টারনেট স্বাধীনতার ওপর গুরুতর নিষেধাজ্ঞা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা ও সংগঠন করার স্বাধীনতার ওপর উল্লেখযোগ্য হস্তক্ষেপসহ নানা ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য খবর রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চলাচলের স্বাধীনতার ওপর বিধিনিষেধ, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সরকার পরিবর্তনে নাগরিকদের অক্ষমতা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণের ওপর গুরুতর ও অযৌক্তিক বিধিনিষেধ, গুরুতর সরকারি দুর্নীতি, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর ওপর গুরুতর সরকারি বিধিনিষেধ বা হয়রানি, ব্যাপক লৈঙ্গিক সহিংসতা, যৌন সহিংসতা, কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা, শিশু, বাল্য ও জোরপূর্বক বিয়ে, স্বাধীন ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রমিকদের সংগঠনের স্বাধীনতার ওপর উল্লেখযোগ্য বিধিনিষেধ ও শিশুশ্রমের সবচেয়ে খারাপ রূপের অস্তিত্বও বাংলাদেশে আছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিপরীতে ব্যাপক দায়মুক্তির অসংখ্য খবর আছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী কর্মকর্তা বা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের চিহ্নিত করতে ও শাস্তি দেওয়ার জন্য বিশ্বাসযোগ্য কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকার বা সরকারি সংস্থা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ বিধিবহির্ভূত নানা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে খবর আছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হাতে মোট কতজন নিহত হয়েছে, সরকার সেই সংখ্যা প্রকাশ করেনি, আবার ঘটনাগুলো তদন্তে স্বচ্ছ পদক্ষেপও নেয়নি।
বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বিগত বছরের তুলনায় কমেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক) ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আটজনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থাকাকালে মৃত্যু হওয়ার কথা বলেছে।
অন্যদিকে আরেকটি মানবাধিকার সংগঠন একই সময়ে ১২ জনের বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার খবর দিয়েছে। রিপোর্টে ২৬ মার্চ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে গুম ও অপহরণের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে বলেও প্রতিবেদন উল্লেখ করা হয়েছে।