বিশেষ প্রতিবেদক
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের প্রাণ বাংলায় বাঘ, যা রয়েল বেঙ্গল টাইগার নামে বিশ্বখ্যাত। চোরাশিকারী ও খাদ্য সংকটের কারণে প্রতিনিয়ত কমছে বাঘের সংখ্যা। ভারত ও বাংলাদেশ সুন্দরবনে বাঘ রক্ষা করতে নিয়েছে নানা পদক্ষেপ। দুইদেশ মিলিয়ে সুন্দরবনের মোট আয়তন ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। এরমধ্যে ছয় হাজার কিলোমিটার বাংলাদেশে। বাকি চার হাজার কিলোমিটার ভারতে।
সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক দাবি করেছেন, বাংলাদেশের অংশে বাঘের খাবারের অভাব রয়েছে। তাই বাঘ এদেশে (ভারতে) চলে আসছে। বাদাবনে বাঘের খাদ্যের যাতে টান না পড়ে, সেই লক্ষ্যে গভীর জঙ্গলে হরিণ ও শূকর নিয়মিত ছাড়া হচ্ছে। তিনি বলেন, গত বছরের শুমারি অনুযায়ী, ভারতে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ছিল ৯৬। তার দাবি বাঘের এর সংখ্যা ১২৩টির মতো, ফলে অন্তত ২৭টি বাঘ বেড়েছে। যদিও চলতি বছরের শুমারির তথ্য ও ছবির রিপোর্ট এখনো আসেনি।
তার এই দাবিকে প্রত্যাখ্যান করে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মহসিন বলেছেন, খাদ্যাভাবে বাংলাদেশের বাঘ ভারতে যাওয়ার তথ্য সঠিক নয়। রেকর্ড আছে দুটি বাঘ ২০১১ ও ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাংলাদেশের হলদিবুনিয়া চলে এসেছিল। যা পশ্চিমবঙ্গের গবেষকরা স্যাটেলাইটে দেখেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের বাঘ পশ্চিমবঙ্গে গেছে, এমন নজির নেই।
তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে সুন্দরবনে বাঘের একটা টেরিটোরি আছে। যা সাধারণত ১৫-১৭ বর্গ কিলোমিটার। এই এলাকায় দুই-তিনটা বাঘিনী থাকবে। কিন্তু বাঘ থাকবে একটাই। কেউ যদি বাঘের বিজ্ঞান বোঝে, তাহলে সে বুঝবে বাঘ নিজের নির্দিষ্ট এলাকা অতিক্রম করে অন্য এলাকায় যাবে না। এক টেরিটোরির বাঘ অন্য টেরিটোরিতে গেলে মারামারি হবে। এটাকে বলে টেরিটোরি ফাইট। বাঘ যার যার টেরিটোরিতে একাই থাকে। পশ্চিমবঙ্গে যে বাঘগুলো আছে তারও টেরিটোরি আছে। অতএব বাংলাদেশের বাঘ পশ্চিমবঙ্গে বা পশ্চিমবঙ্গের বাঘ বাংলাদেশে আসবে না। এখন কেউ যদি বলে বাংলাদেশের বাঘ পশ্চিমবঙ্গে যায়, আর পশ্চিমবঙ্গের বাঘ বাংলাদেশে আসে, এটি কোনোদিনই সম্ভব নয়। পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের সীমানায় রায়মঙ্গল নদী আছে। এই নদীতে কোথাও কোথাও বাঘ এপাশ-ওপাশ করে। কিন্তু তারা তাদের টেরিটোরির মধ্যেই থাকে, এর বাইরে যায় না।
ড.আবু নাসের মহসিন বলেন, সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে গত চার বছরে হরিণ ও শূকর বেড়েছে। যা খাবার হিসেবে গ্রহণ করে বাঘ। ফলে সুন্দরবনে বাঘের খাদ্য সংকট নেই। পর্যটকরা এখন সুন্দরবনে গেলে পর্যাপ্ত হরিণ দেখতে পান। চার-পাঁচটি বাঘ একত্রে দেখেছেন পর্যটকরা। ২০২২ সালের জরিপে বাঘ বাড়বে বলে আশা করছি।
বাংলাদেশের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন জানিয়েছেন, ২০১৫ সালে সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘ পাওয়া যায়। সর্বশেষ ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা ১১৪টি। আমরা এবছর বাঘ জরিপ করবো। তখন দেখা যাবে, বাঘের সংখ্যা কত বেড়েছে। এরপর গত চার বছর সুন্দরবন যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে ধারণা করছি হরিণ ও বাঘের সংখ্যা বেড়েছে।
বাঘ নিজের নির্দিষ্ট এলাকা অতিক্রম করে না
Leave a comment