জন্মভূমি ডেস্ক : আবারো আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে আমদানীকৃত আলু দেশে প্রবেশ করতেও শুরু করেছে। পুনরায় আমদানির খবরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার বাজারে এরই মধ্যে দাম কমতে শুরু করেছে কৃষিপণ্যটির। নিম্নমুখী হলেও বাজারে আলুর দাম এখনো অন্যান্য বছরের এমন সময়ের চেয়ে বেশি। বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক মাসে আলুর বাজার পরিস্থিতি ছিল অস্বাভাবিক। এ দাম আরো আগেই কমার কথা ছিল। আগাম জাতের আলুর উত্তোলনও এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এক দফায় পণ্যটির আমদানিও হয়েছে কিছুদিন। তার পরও কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছিল না আলুর বাজার।
এ সম্পর্কে হিমাগার মালিক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের বক্তব্য হলো গত বছর দেশে আলুর উৎপাদন হয়েছে প্রত্যাশার চেয়ে কম। আবার চলতি বছরও বিরূপ আচরণ করছে আবহাওয়া। ফসলে রোগ-বালাইয়ের আক্রমণও হয়েছে তুলনামূলক বেশি। মূলত এসব কারণেই নানা পদক্ষেপ সত্ত্বেও বাজারকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়নি।
তবে সর্বশেষ আমদানির খবরে বাজারে আবারো দাম কমতে শুরু করেছে কৃষিপণ্যটির। পাইকারি বাজারে দুদিনের ব্যবধানে আলুর দাম কমেছে কেজিতে অন্তত ৬-৮ টাকা। বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২০-২২ টাকায়। এ দাম দুদিন আগেও ছিল ২৮-৩০ টাকা। খুচরা পর্যায়ে পণ্যটির দাম নিম্নমুখী হলেও তা পাইকারির তুলনায় বেশ শ্লথ। বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখানে মানভেদে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪৫-৫০ টাকা।
ব্যবসায়ী শামসুল ইসলাম বলেন, ‘আমদানির খবরে দাম কমছে। এখন পাইকারিতে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০-২২ টাকায়। দাম কমেছে কেজিতে প্রায় ৮ টাকা। ভারত থেকে এরই মধ্যে আলু আসতে শুরু করেছে। সামনে দাম আরো কমতে পারে।’
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার আলু আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। সেদিন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে মোট ৯৪ হাজার টন আলু আমদানির অনুমতি দেয়া হয়। এসব আলু আমদানিতে ব্যবহৃত স্থলবন্দরগুলোর অন্যতম হিলি। গতকালই এখান দিয়ে চারটি ট্রাকে করে আমদানীকৃত ১০০ টন আলু দেশে প্রবেশ করেছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, ‘এখান দিয়ে সর্বশেষ আলু আমদানি হয়েছিল গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর। এর পর তা বন্ধ ছিল দেড় মাসের বেশি সময়। এখন আবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে কৃষিপণ্যটির আমদানি শুরু হয়েছে।’
স্থলবন্দরটি ব্যবহার করে আলু আমদানি করা ব্যবসায়ীদের অন্যতম শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘দেশে এখন আলুর মৌসুম চলছে। বিভিন্ন স্থানে বাজারে নতুন আলু উঠছে। এর পরও দাম না কমে উল্টো বাড়তির দিকে ছিল। সরবরাহ স্বাভাবিক করার পাশাপাশি দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আলু আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। ভারত থেকে আলু আমদানির ফলে দেশী কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। তবে মধ্যস্বত্বভোগী বা সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে মনে করছি।’
হিলি স্থলবন্দর এলাকার বাজারগুলোয় এরই মধ্যে আলুর দাম কমতে শুরু করেছে। বর্তমানে এখানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি সাদা আলু বিক্রি হচ্ছে ২২-২৫ টাকায়। আর লাল আলু বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩০ টাকায়। যদিও দুদিন আগেও এখানে সাদা আলু বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৩৫ টাকায়। আর লাল আলুর দাম ছিল কেজি ৪০ টাকা।
শুল্ক হ্রাস করা হলে এ আলুর আমদানি আরো বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি দাম আরো কমবে বলে মনে করছেন স্থলবন্দরটিতে আলু খালাসের সঙ্গে জড়িত সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট ব্যবসায়ীরা। তাদের অন্যতম আহমেদ কবির বাবু বলেন, ‘ভারত থেকে এখন প্রতি টন আলু ১৫০ ডলারে আমদানি করা হচ্ছে। আর দেশে আলুর শুল্ক পরিশোধে আমদানিকারকদের ব্যয় হচ্ছে কেজিতে ৭ টাকা। আমদানির খবরে আলুর দাম কোনো কোনো জায়গায় কেজিতে ১০-১২ টাকা করে কমেছে বলে জানা গেছে। তবে কৃষিপণ্যটির ওপর আরোপিত শুল্ক কিছুটা কমানো হলে আমদানি আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর আলুর আবাদ হয়েছে সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ১৬ লাখ টন। এর মধ্যে উচ্চফলনশীল (উফশী) আলু আবাদ করা হয়েছে ৩ লাখ ৯৩ হাজার হেক্টর জমিতে। আর স্থানীয় আলু আবাদ করা হয়েছে ৫৬ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে।
প্রসঙ্গত, দেশের বাজারে আলুর দামে অস্থিরতা দেখা দিলে গত বছরের ৩০ অক্টোবর আলু আমদানির অনুমতি দেয় সরকার। ২ নভেম্বর থেকে হিলি স্থলবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে আলু আমদানি শুরু হয়। দুই দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ আমদানির সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়। পরে আমদানিতে অনুমোদিত সময়সীমা শেষ হয়ে যাওয়ায় ১৫ ডিসেম্বর থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে যায়।