আর্থিকসহ বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্ণীতি, স্বেচ্চাচারিতার অভিযোগ
জন্মভূমি রিপোর্ট : আর্থিকসহ বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্ণীতি, স্বেচ্চাচারিতা, শিক্ষক-অভিভাবকদের সাথে খারাপ আচরণ, অনাধিকার চর্চাসহ বহু অপকর্মের কারণে নগরীর বানিয়াখামার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রবিউল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) একই সাথে সহকারী প্রধান শিক্ষক সাজেদা খানমকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বানিয়াখামার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দূর্ণীতি, স্বেচ্চাচারিতা, শিক্ষক-অভিভাবকদের সাথে খারাপ আচরণ, অহেতুক বেতন কর্তনসহ নানা অভিযোগ এনে ১৮ জন শিক্ষক ও কর্মচারি ম্যানেজিং কমিটির নিকট লিখিত অভিযোগ দেন।
লিখিত অভিযোগে বলা হয়, প্রধান শিক্ষক মোঃ রবিউল ইসলাম তার অত্র বিদ্যালয়ে কর্মকালীন মাত্র ৫ বৎসরের মধ্যে যে সকল কর্মকান্ড পরিচালনা করেছেন তা আচরণ বিধি ও নিয়মশৃংঙ্খলা পরিপন্থী। একজন প্রধান শিক্ষক শুধু বিদ্যালয়ের পাঠদানের ক্ষেত্রে নয় তিনি সকল ক্ষেত্রেই প্রধান। একজন প্রধান শিক্ষকের বুদ্ধিমত্তা, জ্ঞানের গভীরতা, বুদ্ধির প্রখরতা সহ সুদক্ষ পরিচালকের একনিষ্ঠ ভূমিকাই একটি বিদ্যালয়ের সুনাম ও শ্রীবৃদ্ধি নির্ভরশীল। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও বাস্তব সত্য যে, কথিত প্রধান শিক্ষক তার সম্পূর্ণ বিপরীত। যার ফলশ্রুতিতে বিদ্যালয়টি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। কারণ উক্ত প্রধান শিক্ষকের নিয়োগ পূর্ব বিগত বছর গুলিতে অত্র বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা কমপক্ষে ৭০০ জন ছিল। কিন্তু একমাত্র এই অদক্ষ প্রধান শিক্ষকের কর্মকান্ডের ফলে আজ ছাত্র- ছাত্রীর সংখ্যা কমে ২৫০ জনে দাড়িয়েছে। বানিয়াখামার মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি খুলনা শহরের অর্ধশতাধিক বছরের প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানটি একমাত্র প্রধান শিক্ষক মোঃ রবিউল ইসলামের প্রশাসনিক, আচরনিক, অদক্ষতা ও দুর্নীতির জন্য অচলবস্থার দ্বারপ্রান্তে উপনীত। তার আচরণ ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকমন্ডলী, অভিভাবকমন্ডলী এমনকি এলাকার বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিগণ কে ও মর্মাহত করেছে। বিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক অনিয়ম ও অন্যান্য দুর্নীতির কারণে ইতোমধ্যে একজন অভিভাবক সদস্য আদালতে তার নামে মামলা ও করেছেন।
প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় চলাকালীন বিভিন্ন কাজের মাঝে তিনি প্রায়ই শিক্ষক শিক্ষিকাদেরকে অযোগ্য অথর্ব পেটুক এবং মানসম্মানের হানিজনক ভাষায় গালিগালাজ করেন। অন্যান্য কর্মচারীদের প্রতি তিনি বিনা কারণে রূঢ় আচরণ করেন। যার ফলে শিক্ষক মন্ডলী ও অন্যান্য কর্মচারীগণ গভীর মর্মাহত। ভুক্তভোগী শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মচারীগণ চাকরি হারানোর ভয়ে প্রতিবাদ করেন না।
এই অর্থলোভী প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক-শিক্ষিকা যথা মিসেস রেবেকা খাতুন, প্রসেন কুমার মন্ডল, দিলারা খাতুন শ্রেণি শিক্ষকের দ্বায়িত্বে থাকাকালীন ছাত্র- ছাত্রীদের কাছ খেকে আদায়কৃত অর্থ নিজ হস্তে গ্রহণ করে পরবর্তীতে অর্থ গ্রহণের বিষয় অস্বীকার করেন। আবার যথোপযুক্ত প্রামাণাদি পেশ সাপেক্ষে ও সকলের চাপের মুখে উক্ত অর্থ প্রাপ্তির বিষয় স্বীকার করেন। বিদ্যালয়ের খরচকৃত ভাউচারে খরচকারী শিক্ষক-শিক্ষিকাকে প্রকৃত অর্থ না লিখে অতিরিক্ত বাড়তি টাকা ভাউচারে লিখে জমা দানের জন্য অন্যায় ভাবে চাপ প্রয়োগ করেন। ভাউচারের এই অতিরিক্ত অর্থ নিজ পকেটস্থ করেন। ইতোমধ্যে শিক্ষক সৌমেন বাবুর পেশকৃত ভাউচার তার প্রকৃত প্রমান। তিনি একই মাসে ২ বার পেপার বিল পরিশোধ দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, ক্যাশ খাতায় তার প্রমান মিলবে।
প্রধান শিক্ষক যোগদানের সময় বিদ্যালয়ের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত কোন চার্জ পেপার গ্রহণ করেননি। যার বদৌলতে বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ/প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি তিনি কর্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতে বিক্রয় করত; বিক্রয় লব্ধ অর্থ জেনারেল ফান্ডে জমা দেননি।
তার যোগদানকালীন সময় তার অদ্যাবধি তিনি পুরানো কাগজ, পরীক্ষার উত্তরপত্র, ছাড়পত্র ফিস ইত্যাদি অনেক কিছুই বিক্রয় করত; বিক্রয় লব্ধ অর্থ জেনারেল ফান্ডে জমা না দিয়ে নিজ পকেটস্থ করেছেন।
অভিভাবক মন্ডলীর সাথে অসৌজন্য ব্যবহারের কারণে আজ বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী কাম্য সংখ্যার নিচে ধাবমান। ভর্তি সংক্রান্ত ব্যাপারে তিনি যেমন উদাসীন তেমনি ছাড়পত্র প্রদানে অতি উৎসাহী। যার বদৌলতে বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যার পরিমাণ ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। বিদ্যালয়টি ধ্বংসের পথে নেওয়াই তার একমাত্র লক্ষ্য হয়ে দাড়িয়েছে।
অনেক শিক্ষক ও কর্মচারীর সহকারী বেতন ভাতার অংশ কর্তৃপক্ষের অগোচরে এ বিনা অনুমতিতে একক ক্ষমতা বলে কর্তন করেছেন যা আপত্তিকর। অনেক শিক্ষকের সরকারী বেতনের অংশ প্রাপ্যতার বেশী অর্থ বিল করে বেআইনিভাবে উত্তোলন করেছেন।
অভিযোগ প্রদানকারীরা হলেন, সহকারী প্রধান শিক্ষক সাজেদা খানম, সিনিয়র শিক্ষক মোঃ শাহজামাল, সিনিয়র শিক্ষক মিলন কান্তি সানা, সিনিয়র শিক্ষক সাবিনা রহমান, সিনিয়র শিক্ষক দিলআরা রহমান, সিনিয়র শিক্ষক সৈয়দা শামীমা ইয়াসমিন, সিনিয়র শিক্ষক মমতাজ খাতুন, সিনিয়র শিক্ষক মীর শাহআলম, সিনিয়র শিক্ষক রেবেকা খাতুন, সিনিয়র শিক্ষক প্রসেন কুমার মন্ডল, সিনিয়র শিক্ষক জেসমিন আক্তার, সিনিয়র শিক্ষক মোঃ আবু বকর সিদ্দিক, সিনিয়র শিক্ষক মারুফা খাতুন ও আইসিটি শিক্ষক সৌমেন বেপারী। এছাড়া কর্মচারিদের পক্ষে অভিযোগ দিয়েছেন বিকাশ চন্দ্র রায়, মুসলিমা আক্তার, উত্তম মন্ডল ও ফজলে রাব্বি শেখ।
জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শেখ আব্দুল আজিজ বলেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে। শুধু শিক্ষক-কর্মচারিই নয়, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অনেক অভিযোগ রয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ম্যানেজিং কমিটির সিদ্বান্ত মোতাবেক গত ২৪/১২/২৩ ইং এবং ৩০/০১/২৪ ইং তারিখে পৃথক দুটি প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শাও নোটিশ পাঠানো হয়। প্রধান শিক্ষক গত ২৮/১২/২৩ইং এবং ০৮/০২/২৪ইং তারিখে নোটিশের জবাব দেন। কিন্তু তর জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় ১৫/০২/২৪ ইং তারিখের ম্যানেজিং কমিটির সভায় (০১/২৪) ৩নং আলোচ্য বিষয়ে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০/০২/২৪ ইং তারিখে প্রধান শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
শেখ আব্দুল আজিজ বলেন, কমিটির সকল সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে পরিচালনা পর্ষদের ১১ ও ১৩ (১) (২) ধারা মোতাবেক সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সাথে সহকারী প্রধান শিক্ষক সাজেদা খানমকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।