হুমকিতে ডলফিন অভয়ারণ্য
কাজী মোতাহার রহমান / মুহাইমিন সৌরভ
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার ১৯৭২ সালের নৌ প্রটোকল চুক্তি বহাল থাকায় জাহাজ চলাচলে সুন্দরবনের ক্ষতি হচ্ছে। ভারতের চারটি নৌ বন্দর থেকে বনের ভেতর দিয়ে পণ্যবাহী জাহাজ মোংলা আসায় বন্যপ্রাণির আবাসস্থল হুমকির মূখে পড়েছে। সুন্দরবন বাঁচাতে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে নৌ যান চলাচলে বিকল্প রুট ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে বনবিভাগ। ঢাকাস্থ জাষ্টিস ওয়াচ ফাউন্ডেশন চলমান এ নৌ রুট ব্যবহার না করার জন্য বনবিভাগকে নোটিশ দিয়েছে। সুন্দরবন পশ্চিম বনবিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নোটিশের জবাব দিয়েছেন। জবাবে তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৭২ সালের ভারত বাংলাদেশর প্রটোকল অন ল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী শিবসা-আড়ুয়া শিবসা-আড়পাঙ্গাশিয়া হয়ে বজ বজ – আড়াইবেকী – দোবাকী – কাচিকাটা খাল দিয়ে রায়মঙ্গলের রুট ব্যবহার হবে। এতে বলা হয় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের চারটি বন্দরে বাংলাদেশ-ভারতের মালবাহী কার্গো চলাচল করবে। উল্লিখিত রুট দিয়ে কার্গো চলাচল করছে। ভারতের নৌ – বন্দর গুলো হচ্ছে কলকাতা, হলদিয়া, কুলপি ও ফারাক্কা। এ সব বন্দর থেকে কার্গো জাহাজ থেকে ফ্লাইওয়াশ নামক সিমেন্ট তৈরীর উপকরণ আসে। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৬শ’ ৭ টি জাহাজ আসা যাওয়া করে।এর আগের অর্থ বছরে ১ হাজার ৭০৮ টি জাহাজ উল্লিখিত দু’দেশের মধ্যে পণ্য আনা নেয়া করে। বন কর্মকর্তা নোটিশের জাবাবে উল্লেখ করেন, এই রুটটি শিবসা ডলফিন অভয়ারণ্য ও পানখালী ডলফিন অভয়ারণ্যের মধ্যে পড়েছে। এ রুটে জাহাজ চলাচলের কারণে বনের জীববৈচিত্রের ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অত্যাধিক জলযান চলাচলের কারণে শব্দ দূষণ ও পানি দূষণ হচ্ছে। বনের ভেতরের খালের দু’পাড় ভেঙ্গে যাচ্ছে। ফলে বন্যপ্রাণির আবাসস্থল হুমকির মূখে পড়েছে। বন্যপ্রাণির প্রজননের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়েছে। এ রুটটিতে সুন্দরবনের শিবসা ডলফিন অভয়ারণ্য ও পানখালি ডলফিন অভয়রণ্যের মধ্যে পড়েছে। বিপন্ন হয়ে পড়ে বনাঞ্চলে ইরাবতী ডলফিন অধ্যুষিত এলাকার ডলফিন। বাংলাদেশ- ভারতের মধ্যকার নৌ-রুট চুক্তি অনুযায়ী জাহাজ চলাচল বন্ধ করার এখতিয়ার বনবিভাগের নেই। সুন্দরবন বাঁচাতে মোংলা-পশুর-আকরাম পয়েন্ট হয়ে হাড়িভাঙ্গা-রায়মঙ্গল নদী দিয়ে ভারতের বন্দরগুলোতে যাতায়াতের জন্য বিকল্প নৌ রুটের প্রস্তাব উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। বিকল্প রুট বাস্তবায়নের জন্য একাধিক মন্ত্রণালয়ের যৌথ সিদ্ধান্ত প্রয়োজন হবে। মোংলা বন্দরের ৭৩ তম প্রতিষ্ঠাবাষির্কীতে উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বর শ্যালা নদীতে এক দুর্ঘটনা ঘটে। সাউদান স্টার -৭ অপার নামক একটি তেলবাহী ট্যাংকায় দুর্ঘটার পড়ে ৩ লাখ ৫৭ হাজার লিটার র্ফানেস তেল ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় জাহাজ দুটির মালিকের বিরুদ্ধে একশ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করে বন বিভাগ। বনের জীববৈচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দুর্ঘটনার পর থেকে বদলে গেছে করমজল, কটকা, হিরণ পয়েন্ট, কচিখালী ও টাইগার পয়েন্টের মত পর্যটন এলাকাগুলো।