জন্মভূমি ডেস্ক
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশসহ ১৬টি দেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নীত হওয়ার পথে। তবে ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক সংকট আমাদের টেকসই উত্তরণের পথে গুরুতর প্রতিকূলতা সৃষ্টি করেছে। আমাদের উন্নয়নের অংশীজনদের কাছে বর্ধিত ও কার্যকর সহযোগিতার আহ্বান জানাই।
যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশন দেওয়া ভাষণে এ আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান জটিল বৈশ্বিক সংকট অনেক উন্নয়নশীল দেশের বিগত কয়েক দশকের উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে স্থবির করে দিচ্ছে। এই মুহূর্তে ২০৩০-এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা তাদের অনেকের কাছেই একটি অধরা স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে। তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং কৃষিসহ মারাত্মকভাবে প্রভাবিত ক্ষেত্রগুলোতে সুনির্দিষ্ট সহায়তা প্রয়োজন। এখন বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা দেখছি, কীভাবে নিত্য-নতুন প্রযুক্তি বিশ্বকে দ্রুত পরিবর্তন করে ফেলছে। এই প্রযুক্তিগুলো ব্যবহারের সকলের ন্যায্য ও সমান সুযোগ পাওয়া অপরিহার্য। ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তিগত বিভাজন অবশ্যই দূর করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ নিষ্পত্তির পর সুনীল অর্থনীতি বাংলাদেশের উন্নয়নের নতুন দুয়ার খুলে দিয়েছে। আমরা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে আমাদের সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার, সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার জন্য বিশ্বব্যাপী অংশীজনদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য সমুদ্র আইন সম্পর্কিত জাতিসংঘের কনভেনশনের বিধানগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন অপরিহার্য। এ বিষয়ে যেকোনো দুর্বলতা উত্তরণের জন্য ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার এবং জাতীয় এখতিয়ারের বাইরের অঞ্চলে সামুদ্রিক জীববৈচিত্রের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহারের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক আইন যা ‘বিবিএনজে’ নামে পরিচিত, সেটি প্রণয়নে আরও তৎপর হওয়ার জন্য সদস্য দেশগুলোকে আহ্বান জানাই।
শেখ হাসিনা বলেন, পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তাররোধসহ সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণের জন্য আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা ২০১৯ সালে পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণ বিষয়ক ঐতিহাসিক চুক্তি অনুস্বাক্ষর করি।
তিনি বলেন, আমরা ধারাবাহিকভাবে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আমাদের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করে আসছি। আমাদের শান্তি-কেন্দ্রিক পররাষ্ট্রনীতির প্রতিফলন হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সৈন্য ও পুলিশ প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে আমরা বর্তমানে শীর্ষে অবস্থান করছি।
তিনি আরও বলেন, শান্তিরক্ষাসহ, জাতীয় ও স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি, বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা প্রদান, নারী ও অন্যান্য পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর ক্ষমতায়নের মাধ্যমে একটি টেকসই সমাজ গঠন করতে এ সকল অঞ্চলের জনগণকে তারা সাহায্য করে যাচ্ছেন। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আমাদের অনেক শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিশ্বাস করি যে, দ্বন্দ্ব সংঘাতের মূল কারণগুলোর সমাধান ব্যতীত টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। জাতিসংঘ শান্তি বিনির্মাণ কমিশনের বর্তমান সভাপতি হিসেবে আমরা সংঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে সহযোগিতার উদ্দেশ্যে বহুমাত্রিক অংশীজনদের একসঙ্গে কাজ করার একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরিতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। নারী, শিশু, শান্তি ও নিরাপত্তা এজেন্ডাকে আরও শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতেও আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রপন্থার বিষয়ে আমরা ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি গ্রহণ করেছি। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে কোনোরূপ সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বা জনগণের ক্ষতি হয় এমন কোন কর্মকাণ্ড সংঘটিত হতে দেই না। এছাড়া সাইবার-অপরাধ ও সাইবার সহিংসতা মোকাবিলার লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক বাধ্যতামূলক চুক্তি প্রণয়নে একসঙ্গে কাজ করার জন্য আমি সদস্য দেশগুলোকে আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, একটি দায়িত্বশীল সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে, বাংলাদেশ তার জনগণের মানবাধিকার সংরক্ষণ ও উন্নয়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ। জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য আমরা একটি সামগ্রিক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পন্থা অবলম্বন করেছি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আমরা হিজড়া জনগোষ্ঠীর (তৃতীয় লিঙ্গের) প্রয়োজনীয় অধিকার ও কল্যাণ সাধনের জন্য সংশ্লিষ্ট আইনি বিধি-বিধান প্রণয়ন করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সকল ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারের জন্য বিনামূল্যে আবাসন প্রদানের লক্ষ্যে ‘আশ্রয়ণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প আমরা বাস্তবায়ন করছি। ১৯৯৭ সাল থেকে আমার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে বিগত ১৮ বছরে প্রায় ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অধিকৃত ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি আমাদের সমর্থন অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ১৯৬৭ সালের পূর্বের সীমান্তের ভিত্তিতে দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান ও রাজধানী হিসেবে পূর্ব জেরুজালেমকে নির্ধারণ করে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি বাংলাদেশের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করছি।