শেখ আব্দুল হামিদ
ব্যাঙের ছাতার ন্যায় খুলনা মহানগরীসহ জেলায় গজিয়ে উঠছে অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব ক্লিনিকে বসে চলছে চিকিৎসার নামে রমরমা ব্যবসা। সরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অধিকাংশের লাইসেন্স নেই। গত ২৬ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সারা দেশের সব অবৈধ ক্লিনিক-হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধ করার নির্দেশ দেয়। নির্দেশ দেয়ার পরেও যারা বন্ধ করেনি তাদের বিরুদ্ধে দেশ ঝুড়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অভিযান পরিচালনা করে। এসময় খুলনা নগরীর লাইসেন্সবিহীন ৩৯টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
অভিযোগ উঠেছে সকল প্রকার নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে খুলনায় বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বাণিজ্য। খুলনা মহানগরী ও তার আশপাশের এলাকায় চিকিৎসার নামে চলছে ভয়াবহ প্রতারণা। বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে রোগীদের ভুল বুঝিয়ে এবং প্রলোভন দেখিয়ে বাণিজ্য চলছে। সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে কমিশন পাচ্ছে দালাল চক্র। তবে এ দালাল চক্রের বিরুদ্ধে র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ মাঝে মধ্যে অভিযান পরিচালনা করলেও তারা থেমে নেই। কতিপয় দালালকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হলেও জামিনে বের হয়ে আবারও একই কাজে নেমে যায়। এসব দালাল নিয়ন্ত্রণকারী বেসরকারি লাইসেন্স বিহীন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার মালিকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে।
মহানগরী ও আশপাশের উপজেলায় রয়েছে অগণিত ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট হাসপাতাল। দেখা যায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ম নীতি কোনো প্রকার মানছেন না। প্রতিদিন সকালে খুলনা মেডিকেলের বহির্বিভাগ থেকে শুরু করে ভেতরে ভর্তি রোগীদের সামনে দেখা যায় দালালদের আনাগোনা। তবে মহিলা দালালের সংখ্যা বেশি চোখে পড়ে।
খুলনা মেডিকেলের আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা খুলনার দাকোপ উপজেলার রাশেল মোল্ল্যা (৬০) বলেন, তিনি শ্বাসকষ্ট, গা, হাত পায়ে ব্যথার চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। তাকে এক মহিলা বলেন, এখানে অনেক সময় লাগবে। আপনি দুইশ’ টাকা দিয়ে ভালো ডাক্তার দেখাতে পারবেন। এভাবে তাকে নিয়ে যায় সুগন্ধা ডায়াগনস্টিকে। চিকিৎসক তাকে দেখে বিভিন্ন পরীক্ষার নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, আপনার ৩০% ছাড় দিয়ে মোট ৪২০০ টাকা লাগবে। এ রকম প্রতিদিন সরকারি হাসপাতালের সামনে দালাল কর্তৃক অসহায় গরিব রোগীদের প্রতারণার দৃশ্য দেখা যায়।
খুলনা নাগরীক সমাজের সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, বর্তমান সময়ে চিকিৎসা সেবায় একটি বড় বাণিজ্য রয়েছে। যাদের মনিটরিং করতে ব্যর্থ খুলনার স্বাস্থ্য বিভাগ। ব্যাঙের ছাতার মতো এ সব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোয় সরকারি হাসপাতালের ৯৮ ভাগ চিকিৎসক প্রভাবিত হচ্ছে। এদের বিরুদ্ধে সরকারিভাবে মনিটরিং করে এবং তালিকা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
নীতিমালার শর্তানুযায়ী ডাক্তার নার্স-প্যাথলজিক্যাল লাইসেন্স কিংবা নবায়ন না করেই স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চলছে জমজমাট ব্যবসা। বিধি অনুযায়ী প্রতিটি ১০ শয্যা ক্লিনিকের জন্য নির্ধারিত ৩ জন ডাক্তার, ডিপ্লোমাধারী ২ জন নার্স ও ৩ জন সুইপার থাকা বাঞ্ছনীয়। একই সাথে ৮শ’ বর্গফুট জায়গা, সার্বক্ষণিক একজন ডাক্তার, নার্স ও সুইপার থাকতে হবে। অন্যদিকে প্যাথলজি বিভাগ চালু করতে হলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিপ্লোমাধারী প্যাথলজিস্ট ও ১ জন সুইপার রাখার বিধান। আর মাইক্রোস্কোপ, ফ্রিজ, মেডিকেল যন্ত্রপাতি, অপারেশন থিয়েটার ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। অথচ অধিকাংশ ক্লিনিকে নির্ধারিত ডাক্তার নেই। তারা চুক্তি অনুযায়ী ডাক্তার ডেকে রোগীর অপারেশন বা অন্যান্য চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। তাছাড়া সব ডাক্তাররা একাধিক ক্লিনিকে চুক্তিবদ্ধ। তাই ঠিকমত সেবাও দিতে পারেন না। রোগীদের সঙ্কটকালীন সময়ে ডাক্তার পাওয়া যায় না। অনেকে ক্লিনিক ব্যবসার সাথে ডায়াগনস্টিক ব্যবসা জমজমাট করে তুলেছেন। এ ক্ষেত্রে নিয়ম নীতি মানা হচ্ছে না। ফলে সাধারণ মানুষের হয়রানির শেষ নেই।
খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: মো: মনজুরুল মুরশিদ বলেন, আমরা অবৈধ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা অব্যাহত রেখেছি। জনবল সঙ্কট থাকার কারণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে সমস্যা হয়।
ব্যাঙের ছাতার মত গজিয়ে উঠছে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টার
Leave a comment