জি এম ফিরোজ, ডুমুরিয়া
ফিরোজা বেগম (৫৫) ভদ্রা নদীর পাড়ে মাথায় দিয়ে চিন্তামগ্ন এই বুঝি তার সবকিছু শেষ হয়ে গেল। আশ্রয় স্থলটুকু চলে যায় ভদ্রা নদীর পেটে। এক সময়ে ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়নের চাঁদগড় গ্রামের অবস্থাপন্ন ঘরের গৃহবধূ হিসেবে এই গ্রামে এসেছিলেন তিনি। গ্রামের হোমিও চিকিৎসক মো: মতলেবুর রহমান চিকিৎসা দিয়ে বেড়াতেন। তাদের গোয়াল ভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ, বাড়ির উঠোন চরে বেড়াতো হাঁস-মুরগি। আজ সেসব অতীত। এখন তাদের ঠাই হয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেঁড়িবাধে। প্রায় তিনযুগ ধরে ভদ্রা নদীর ভাঙ্গনে ২৯ নম্বর পোল্ডারের জালিয়াখালী, বারোআড়িয়া, শরাফপুর, চাঁদগড় গ্রামের দেড়শতাধিক পরিবার আজ গৃহহীণ।
মো: হাবিবুর রহমান বলেন, নদী ভাঙ্গণ রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড অর্থ লুটপাট করছে বলে মনে হয়। না হলে যেনতেনভাবে বাঁধ কেন আটকানো হবে। দীর্ঘদিন ভাঙ্গণ চলে আসলেও প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা কেন নেয়া হয় না। কয়েকবছর আগে চাঁদগদের এই স্থানে ভেঙ্গে গিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। সে সময়ে ৫০ এর অধিক পরিবার ভিটেমাটি হারা হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। অনেকে এখ নপর্যন্ত বেড়িবাঁধের উপর আশ্রয় নিয়ে রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, ১৯৬৭-৬৮ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন নির্মাণ করা ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় ২৯ পোল্ডার এর বেহাল দশার কারণে প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রায় ৫৫টি গ্রাম নদী ভাঙ্গন ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতি বছর বর্ষা মওসুম এলে ৩-৪ বার বাড়িঘর, জমি, গাছপালা ও বেড়িবাঁধ ধসে নদীতে চলে যায়। তখন সকলের শোরগোল পড়ে ভাঙন রোধের জন্য। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্তৃপক্ষের নজর পড়ে। তড়িঘড়ি করে নুতন করে বাঁধ দেয়ার কাজ হয়। কিন্তু নদীর প্রবল ¯্রােতে পানির চাপে বাঁধগুলো নদীগর্ভে চলে যায়।
ইতোমধ্যে ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর ইউনিয়নের দেড় কিলোমিটার জালিয়াখালি গ্রাম ভদ্রা নদীর ভয়াল গ্রাসে নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সেখানকার প্রায় ১২শ’ মানুষ। শতাধিক কাঁচাপাকা ঘরবাড়িসহ কয়েক একর জমা-জমি নদী ভাঙণে হারিয়েছে এখানকার মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডুমুরিয়া উপজেলা উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: মিজানুর রহমান জানান, চাঁদগড়সহ ২৯ নম্বর পোল্ডারের ভাঙ্গণ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেয়া হযেছে। এছাড়া ভেঙ্গে যাওয়া বাঁেধর অংশে নতুন করে বাঁধ দেয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে মাটি বালিযুক্ত তাই এটি পানির চাপ তেমন ধরে রাখতে পারে না।