দুর্গন্ধে ব্রিজ পারে ভোগান্তি
পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন
প্রতি মাসে দু’টন পলিথিন
শেখ আব্দুল হামিদ : মহানগরীর পশ্চিম সীমানা দিয়ে বয়ে যাওয়া ময়ূর নদ জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকীর কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নগরীর বর্জ্য আর মানব বর্জ্যে ভরা এ নদ প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে চলেছে রোগ জীবানু আর মশা মাছির উপদ্রব। প্রায় ১১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ নদে কোন প্রকার জলজ প্রাণি বেঁচে থাকার উপায় নেই। নগরী থেকে নর্দমার মাধ্যমে বয়ে আসা বিষাক্ত পানি নয়ূর নদের পরিবেশ বিপর্যস্ত করে তুলেছে। নদের পাড়েই গড়ে উঠেছে লিনিয়র পার্ক। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরা এখানেই প্রতি দিন ঘোরা ফেরা করতে আসে। তারা নদের তীরে মুক্ত হাওয়া উপভোগ করার বদলে দুর্গন্ধে দূরে সরে যায়। গল্লমারী জোড়া ব্রিজে বর্জ্য বেধে গোটা নদই এখন যেন মরে গেছে। তীব্র গন্ধে ব্রিজের উপর দিয়েও পারাপার হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। নদের দু’তীরের আবাস স্থল যেন দিন রাত গন্ধের মাঝে হাবুডুবু খায়। বিভিন্ন দোকান পাটে সারাক্ষণ মশা মাছি ভরে আছে। বর্ষার জলেও দূষণমুক্ত হলো না ময়ূর নদ। খুলনা জেলা শহরে প্রবেশ মুখে ব্রিজের পশ্চিম পারে পড়ে থাকে ময়লার স্তুপ। দুর্গন্ধে পথচারীরা প্রতিদিন নাখমুখ বন্ধ করে শহরে আসে।
জেলা শহরের প্রবেশ মুখ হিসেবে খ্যাত গল্লামারীর ময়ূর নদ দীর্ঘ দিন ধরে এ ভাবেই জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকী হয়ে থাকলেও যেন দেখার কেউ নেই। খুলনা সিটি কর্পোরেশন থেকে কয়েক দফা এ নদ খননের উদ্যোগ নিলেও তেমন কোন কাজে আসেনি। বর্জ্যে ভরে গেছে আলুতলা দশ গেট। গেট দিয়ে পানি সরবরাহের কোন সুযোগ নেই। প্রতিনিয়ত দু’তীরের মানুষ রোগ ব্যাধি আর ডায়রিয়া- কলেরায় ভুগছে। খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তর বিভিন্ন নদ-নদীর পানি পরীক্ষার প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে ময়ূর নদের পানি জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে নদের পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডিও) নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে কম। প্রতি মাসে শহর থেকে এ নদে ভেসে আসে প্রায় দু’টন পলিথিন। যে কারণে এ নদের পানি প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে। এ ছাড়া মানববর্জ্য নদের পরিবেশ বিপর্যস্ত করে তুলেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট তানভীন হায়দার জানান, বর্জ্য নিক্ষেপ বন্ধ ও অবৈধ দখলমুক্ত হলে ময়ূর নদকে বাঁচানো সম্ভব হবে। মহানগরীর স্বার্থেই নদকে বাঁচানো একান্ত প্রয়োজন। পরিবেশ অধিদপ্তরের এক প্রকাশনায় বলা হয়েছে, উপকূলীয় এলাকার ভূগর্ভস্থ পানিতে লবণাক্ততা বেড়েই চলেছে। পানিতে লবণাক্ততা উপকূলের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এরই সাথে যুক্ত হয়েছে ময়ূর নদীর বিষাক্ত আবহাওয়া।
কুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের খসড়া গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধ দখল ও ভরাটের কারণে ময়ূর নদ দিয়ে পানি নিস্কাশন হয় না। ফলে শহরের ১৫ লাখ লোকের মধ্যে এক তৃতিয়াংশের অধিক লোক জলাবদ্ধতার ফলে নানা সমস্যায় ভোগে। মাঝারি থেকে ভারি বর্ষণের ফলে নগরীর ৮৫ ভাগ রাস্তা পানিতে তলিয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সুপারিশমালায় বলা হয়েছে, ময়ূর নদে বর্জ্য নিক্ষেপ বন্ধ ও দখল মুক্ত হলে এখানকার পানি ব্যবহারযোগ্য হতো।