জন্মভূমি ডেস্ক : গত তিন মাসে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে মিয়ানমারের জান্তাবাহিনীর প্রায় ৬০০ সেনা। তারা মিজোরামের লোয়াংলাই বিভাগে আশ্রয় নিয়েছেন। সরকারি বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের লড়াই তীব্র হয়ে ওঠার পর সেনারা পালাতে শুরু করেছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি ঘাঁটি দখল করে নিলে জীবন বাঁচাতে এসব সেনা ভারতে চলে আসেন।
এদিকে এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন ভারতের মিয়ানমার সীমান্তবর্তী রাজ্য মিজোরাম সেনাদের দ্রুত ফেরত পাঠাতে দিলির কেন্দ্রীয় সরকারকে তাগাদা দিয়েছে। কারণ মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। ওই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা বিঘিœত করতে পারে, এমন শঙ্কায় দুশ্চিন্তায় রয়েছে মিজোরাম।
ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা দেশটির গণমাধ্যম এনডিটিভিকে জানিয়েছেন, মিয়ানমারের অন্তত ৬০০ সেনা মিজোরামের লঙ্গটলাই জেলায় আসাম রাইফেলসের শিবিরে আশ্রয় নিয়ে আছে। মিয়ানমারের বিদ্রোহী আরাকান আর্মির (এ এ) যোদ্ধারা সেনাবাহিনীর শিবির দখল করার পর এসব সেনা ভারতে পালিয়ে আসে।এনডিটিভি জানিয়েছে, স¤প্রতি শিলংয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চীয় রাজ্যগুলোর কাউন্সিলের পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে মিজোরামের সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠক করেছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী লালডুহোমা।
বৈঠকে লালডুহোমা তার রাজ্যে আশ্রয় নিয়ে থাকা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সদস্যদের দ্রুত তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন।
আরাকান আর্মি মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনের সংখ্যালঘু নৃগোষ্ঠীর একটি সশস্ত্র বাহিনী। তারা রাখাইনের বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে।
কাউন্সিলের অধিবেশনের পর লালডুহোমা সাংবাদিকদের বলেন, লোকজন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আমাদের দেশে আশ্রয় নিতে চলে আসছে। মানবিক কারণে তাদের সাহায্য করছি আমরা। মিয়ানমারের সেনারা আসতেই আছে, এসে আশ্রয় চাইছে।
তিনি বলেন, এর আগে বিমানে করে তাদের নিজ দেশে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম আমরা। এ পর্যন্ত ৪৫০ জন সেনা সদস্যকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।
অক্টোবরে মিয়ানমারের তিনটি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর সশস্ত্র বাহিনী জোট বেঁধে সরকারি বাহিনীগুলোর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণ শুরু করে। তারপর থেকে তারা বেশ কয়েকটি শহর, সামরিক পোস্ট দখল করে নেয় আর সরকারি সেনাদের পালাতে বাধ্য করে।
স¤প্রতি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাত থেকে ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এবং ভৌগোলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ একটি শহর পালেতোয়া দখল নেওয়ার দাবি করেছে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এই গোষ্ঠীর টেলিগ্রাম চ্যানেলে জানানো হয়েছে, সমগ্র পালেতোয়া এলাকায় সামরিক বাহিনীর আর একটি ক্যাম্পও অবশিষ্ট নেই।
আরাকান আর্মি কারা : মিয়ানমারের অনেকগুলো জাতিগত সশস্ত্র গোষ্ঠী আছে। আরাকান আর্মি বা এএ এদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত নতুন কিন্তু সমরাস্ত্রের দিক থেকে সবচেয়ে সুসজ্জিত বাহিনী তাদের। সেনাবাহিনীর সাথে তারা গত কয়েক বছর ধরে লড়াই চালিয়ে আসছে এবং এই সময়ে রাখাইন রাজ্য ও পার্শ্ববর্তী চীন রাজ্যে নিজেদের অবস্থানকে সংহত করতে সমর্থ হয়েছে।
এমনকি সেনাবাহিনী ২০২১ সালের ফেব্র“য়ারিতে ক্ষমতা দখলের আগে থেকেই রাখাইনে তাদের ভিত মজবুত ছিলো। দুই বছর আগে তারা দাবি করে, রাজ্যটির ৬০ শতাংশ তাদের নিয়ন্ত্রণে।
কিন্তু, সেনা অভ্যুত্থানের সময় তারা যুদ্ধবিরতিতে ছিলো। আর সেনাবাহিনীও তাদের সাথে সংঘাতে যায়নি যাতে অন্য বিরোধীদের দমন করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করতে পারে।
গত অক্টোবরে আরাকান আর্মি সামরিক বাহিনী বিরোধী সশস্ত্র জোট ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্সের অংশ হিসেবে ব্যাপকতর লড়াইয়ে যোগ দেয়ার ঘোষণা দেয়। তারা ইতোমধ্যেই দেশজুড়ে বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর দৌরাত্ম্যে চাপে থাকা সেনাবাহিনীর ওপর সিরিজ আক্রমণ শুরু করে। এরপর গত ১১ সপ্তাহে চীনের সীমান্তবর্তী বিভিন্ন অংশে জোটের হাতে পর্যুদস্ত হয় মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।
সর্বশেষ গত শনিবার দেশের আারেকপ্রান্তে ভারত-ঘেঁষা পালেতোয়া শহরের মিওয়া ঘাঁটির শেষ সেনাচৌকিটি দখলে নেয় এএ। ২০২০ সালে একবার এই ঘাঁটিই ৪২ দিনের টানা লড়াইয়ের পর দখল করতে ব্যর্থ হয় তারা।
আরাকান আর্মি কী চায় : তবে, আরাকান আর্মির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এখনো স্পষ্ট নয়। তারা নিজেদের অর্জনকে আরও পোক্ত করতে পারে এবং আরও ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে পারে। তাদের ঘোষিত লক্ষ্য, ফেডারেল রাষ্ট্রব্যবস্থার মধ্যে একরকম স্বাধীনতা বা স্বায়ত্তশাসন।
সা¤প্রতিক কর্মকাণ্ড থেকে ধারণা পাওয়া যায় যে, যেটি সামরিক শাসনের বদলে নির্বাচিত সরকারের অধীনেই সবচেয়ে ভালোভাবে অর্জন করা যাবে বলে তারা এখন মনে করছে বলে ধারণা পাওয়া যায়।
জান্তা আবার তার বাহিনীকে উদ্বুদ্ধ করে বহুমুখী আক্রমণের বিপরীতে লড়াই চালিয়ে যেতে কতটা উদ্যোগী হতে পারে সেটিই পালেতোয়ার পতনের পর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিচ্ছে।