জন্মভূমি ডেস্ক : উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার চেষ্টার নেপথ্যে ছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিশেষ ষড়যন্ত্র। আর সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের হাতিয়ার করা হয়েছিল ধর্মের অপব্যবহার। তাই দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মেনে নেয়নি ক্ষমতাসীনরা। রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে ক্ষমতাসীনরা। রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে ধর্মের দোহাই দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ধর্মের ভিত্তিতে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি দেশের ভাগ হওয়া তৎকালীন রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছিল ব্যাপকভাবে।
এ কথা সত্যি আরবি হরফের প্রতি মুসলমান মাত্রেই দুর্বলতা ছিল মূলত ধর্মের প্রতি আনুগত্য ও বিশ্বাস থেকেই। পাকিস্তান আমলে এসে বাংলা ভাষায় আরবি হরফ প্রবর্তনের পক্ষে একদিকে ছিল ধর্মীয় আবেগ, অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় সংহতির খোঁড়া যুক্তি। বলা হয়েছিল, উর্দু ছাড়া পশতু, সিন্ধি, পাঞ্জাবি ভাষায় আরবি হরফ যেহেতু ব্যবহৃত হ”েছ সেহেতু বাংলায় এই হরফের প্রবর্তন করলে পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ও সাংস্কৃতিক সংহতি দৃঢ় হবে। তবে এটা বুঝতে কষ্ট হয় না এসব কথার আড়ালে ধর্মীয় আবেগের চেয়ে রাজনৈতিক কারসাজিই ছিল বেশি। এর প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ফজলুর রহমান। এ বিষয়ে তিনি পূর্ব বাংলার শিক্ষাবিদদের সহযোগিতা নেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন।
১৯৪৮ সালে ফজলুর রহমান এই কাজে সহযোগিতার জন্য সৈয়দ আলী আহসানকে এ বিষয়ে সাহায্য করতে বলেন। সৈয়দ আলী আহসান বলেন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এ বিষয়ে উপযুক্ত ব্যক্তি। ফজলুর রহমানের নির্দেশে তৎকালীন কেন্দ্রীয় শিক্ষা উপদেষ্টা মাহমুদ হাসান চিঠি দেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে। চিঠিতে উল্লেখ ছিল, ‘সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন পাকিস্তানকে ইসলামী মতে গঠন করতে এবং সেই উদ্দেশ্যে তারা বাংলা ভাষায় উর্দু অক্ষর প্রবর্তন করতে চান। এর জন্য মুহম্মদ শহীদুল্লাহর সাহায্য পেলে সরকার উপকৃত হবে।’
সেই চিঠির জবাব না দিয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ তার ভাবনার কথা মেলে ধরেন সংবাদপত্রে। যা কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পরে ১৯৪৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসভবনে এক অনুষ্ঠানে মাহমুদ হাসানের সঙ্গে দেখা হয় মুহম্মদ শহীদুল্লাহর। সেই সময় মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে দেশদ্রোহী বলে উল্লেখ করেন মাহমুদ হাসান।