জন্মভূমি ডেস্ক : ফজলুর রহমান ১৯৪৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি পেশোয়ারে পাকিস্তান শিক্ষা উপদেষ্টা বোর্ডের দ্বিতীয় অধিবেশনে দেওয়া বক্তৃতায় বলেন, একই জাতীয় দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠার পথে যেসব অসুবিধা আছে তার মধ্যে নানা রকম হরফের সমস্যাটি অন্যতম। এই প্রসঙ্গে তিনি আরবি বর্ণমালার উপযোগিতার কথা বর্ণনা করেন।
১৯৪৮ সালের মার্চের ভাষা আন্দোলন স্তিমিত হয়ে এলেও এর পরও পাকিস্তান সরকারের আরবি হরফ প্রচলনের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানে প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধ অব্যাহত থাকে। ১৯৪৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা এক সভায় আরবি হরফ প্রচলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। এতে সভাপতিত্ব করেন মুস্তাফা নূরউল ইসলাম।
এ সভায় বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি সংসদ গঠন করা হয়। মো. নুরুল ইসলাম সভাপতি এবং ইলা দাশগুপ্তা ও আশরাফ সিদ্দিকী যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এ ছাড়া নজরুল ইসলাম, মমতাজ বেগম, রিজিয়া খাতুন, খলিলুর রহমানসহ অন্যদের নিয়ে বর্ণমালা সাব কমিটি গঠিত হয়।
এদিকে বাংলা ভাষা আরবি হরফ প্রচলনের প্রতিবাদে ১৯৪৯ সালের ১২ মার্চ ছাত্র ফেডারেশন বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে একটি বিক্ষোভ মিছিল পরিষদ ভবনের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয় এবং আফজাল হোসেন, মৃণাল কান্তি, বাহাউদ্দীন চৌধুরী, ইকবাল আনসারী খান, আবদুস সালাম ও এ কে এম মনিরুজ্জামান চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
১৯৪৯ সালের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগের ভাষা কমিটির পক্ষ থেকে নঈমুদ্দিন আহমদ সংবাদপত্রে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষিত লোকের হার শতকরা ১২ থেকে ১৫ জন। কিš‘ পশ্চিম পাকিস্তানের শিক্ষিত লোকের হার শতকরা ৫ জনের কম; আরবি বর্ণমালার দোহাই দিয়ে এই ১৫ জন শিক্ষিতকে কলমের এক খোঁচায় অশিক্ষিতে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। এর ফলে গোটা পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষা ব্যব¯’াই বানচাল হয়ে যাবে।’
বাস্তবে ঘটছিলও তাই। পাকিস্তানের রাজধানী হলো পশ্চিম পাকিস্তানে। ব্যবসা-বাণিজ্য, অফিস আদালত সবই পশ্চিমাঞ্চলকে ঘিরেই গড়ে উঠছিল। শিল্পায়ন, আমদানি, বিদেশী সাহায্য কেন্দ্রীভুত হ”িছল পশ্চিমে। পূর্ব বাংলা যে ধীরে ধীরে অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ হয়ে উঠছে, সে বোধও গ্রাস করছিল এ অঞ্চলের মানুষদের। বাঙালি জাতিকে পঙ্গু করে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে- এই বোধটিও কাজ করছিল এ অঞ্চলের অধিবাসীদের। এই বোধ থেকেই পূর্ব বাংলার সর্বস্তরের মানুষ ভাষা আন্দোলনে অংশ নেওয়ার প্রেরণা পেয়েছিল।