জন্মভূমি ডেস্ক
বাংলাদেশের অগ্রগতি মূলত যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় সরকার যোগাযোগ ব্যবস্থার সার্বিক উন্নয়নে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। এখন আমরা দাবি করতে পারি, দেশের সমগ্র এলাকার মাঝেই যেন যোগাযোগ স্থাপিত হয়, সেই কাজ আমরা করতে সক্ষম হয়েছি।
সোমবার দুপুরে নড়াইলে মধুমতি নদীর ওপর নির্মিত দেশের প্রথম ছয় লেন বিশিষ্ট মধুমতি সেতু এবং নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমান সেতু উদ্বোধনকালে ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী তার কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি সেতু দুটি উদ্বোধনকালে বলেন, ‘নতুন উদ্বোধন হওয়া সেতু দুটি বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতিকে ব্যাপকভাবে জোরদার করবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমবার সরকারে এসেই যমুনা বহুমুখী সেতু নির্মাণ করে তার সরকার। এছাড়াও আরও অনেক সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করে। যার মধ্যে রয়েছে ধরলা সেতু, গাবখান সেতু, শিকারপুর ও দোয়ারিকা সেতু এবং ভৈরব নদ সেতু। সমগ্র বাংলাদেশকে একটি যোগাযোগ নেটওয়ার্কের আওতায় আনাই ছিল তার সরকারের প্রচেষ্টা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মধুমতি সেতু ও নারায়ণগঞ্জে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু দুটিই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত করার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।’
শেখ হাসিনা তার সরকারের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘একের পর এক সেতু ও সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণের ফলে এখন মোংলা বন্দর আমাদের খুব কাছে এসে গেছে। সেই সঙ্গে আমাদের স্থলবন্দর বেনাপোল, ভোমরাসহ কুষ্টিয়া অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে।’
এই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে আমাদের এসব অবহেলিত অঞ্চল আরও উন্নত হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগের পথপরিক্রমায় তার সরকারের প্রচেষ্টা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আন্তর্জাতিক হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হলে আমাদের চট্টগ্রাম এবং মোংলা সমুদ্রবন্দর একটি আন্তর্জাতিক হাব হিসেবে গড়ে উঠবে।’
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে ৯৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে মধুমতি নদীর উপর ৬৯০ মিটার দীর্ঘ মধুমতি সেতু নির্মিত হয়েছে যা স্থানীয়ভাবে কালনা সেতু নামে পরিচিত। এটি নড়াইল, গোপালগঞ্জ, খুলনা, মাগুরা, সাতক্ষীরা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর এবং ঝিনাইদহ জেলাকে সংযুক্ত করেছে।
প্রকল্প কর্মকর্তাদের মতে, সেতুটি চালু হওয়ার মাধ্যমে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ দ্রæত সড়ক যোগাযোগ সুবিধা পাবে। এরফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১০টি জেলার মানুষ কম সময়ে বিভিন্ন এলাকায় যাতায়াত করতে পারবেন। এটি দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোল, যশোর থেকে ঢাকা পর্যন্ত ভ্রমণের সময়ও কমিয়ে আনবে।
২৭ দশমিক ১ মিটার চওড়া সেতুটিতে চারটি উচ্চ গতির লেন ৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক এবং দুটি সার্ভিস লেনসহ ছয়টি লেন রয়েছে।
এদিকে ৩য় শীতলক্ষ্যা সেতু, যা বীর মুক্তিযোদ্ধা একেএম নাসিম ওসমানের নামে নামকরণ করা হয়েছে, এটি নারায়ণগঞ্জ শহরকে বন্দর উপজেলার সঙ্গে সংযুক্ত করবে।
১ দশমিক ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে চট্টগ্রাম অঞ্চলগামী যানবাহন এবং একইভাবে চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলগামী যানবাহন যানজট এড়াতে এবং সময় বাঁচাতে নারায়ণগঞ্জ শহরকে বাইপাস করতে সক্ষম করবে।
এই সেতু নির্মাণে ৬০৮ দশমিক ৫৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। এর মধ্যে ২৬৩ দশমিক ৩৬ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের তহবিল থেকে এবং ৩৪৫ দশমিক ২০ কোটি টাকা সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) থেকে এসেছে।
ওয়াকওয়েসহ সেতুটিতে ৩৮টি স্প্যান রয়েছে। পাঁচটি নদীতে এবং ৩৩টি পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে। হাঁটার পথসহ সেতুটির প্রস্থ ২২ দশমিক ১৫ মিটার। এছাড়া, ছয়লেনের টোল প্লাজা এবং দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ সংযোগ সড়ক ও নির্মাণ করা হচ্ছে।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে আমরা সবাই মিলে নিরলস পরিশ্রম করে যাবো, এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’
মধুমতি ও তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর উদ্বোধন
Leave a comment