ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রগামী ব্যক্তি হিসেবে মহাত্মা গান্ধীকে ভাবতে হতো সমগ্র ভারতবর্ষের কথাই। আলাদা করে বাংলা, কিংবা খুলনা অঞ্চলের প্রতি তার বিশেষ অনুরক্তি ছিল, তেমনটি হয়তো দাবি করা কঠিন। কিন্তু দুঃসময়ে খুলনার মানুষের ব্যাপারে তিনি ভাবিত হতেন ঠিকই। এই অঞ্চলের মানুষের অসহায়ত্বের কথা বারবার উচ্চারিত হতো তার মুখে।
বিশেষত ১৯১৯ ও ১৯২০ সালে পরপর দুই বছর অনাবৃষ্টির কারণে ১৯২১ সালে খুলনার দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে, এখানকার মানুষের জন্য প্রচÐ চিন্তিত হয়ে পড়েন গান্ধীজি। কী কারণে খুলনার মানুষের এই দুর্দশা, কীভাবে এ থেকে উত্তরণ সম্ভব এবং এক্ষেত্রে তার নিজস্ব দর্শন ও আন্দোলন কতটুকু কার্যকর হতে পারে, সে বিষয়ে অনেকের সাথেই আলোচনা করতেন তিনি। বিষয়গুলো উঠে আসত তার লেখনীতেও। যেমন ১৯২১ সালের ১৩ অক্টোবর ইয়ং ইন্ডিয়ায় প্রকাশিত রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে প্রবন্ধের এক জায়গা তিনি লেখেন, “খুলনার মানুষ না খেয়ে আছে এই কারণে নয় যে তারা কাজ করতে পারে না। বরং এই কারণে যে তারা কাজ পাচ্ছে না।”
এমনকি ওই ১৯২১ সালেই যে তিনি জাঁকালো গুজরাতি পোশাক ছেড়ে ঝোঁকেন সাদাসিধে ধুতি ও চাদরের দিকে, যাতে তার শরীরের খুব কম অংশই আবৃত হতো, এক্ষেত্রেও খুলনার দুর্ভিক্ষেরই ছিল একটি বড় ভ‚মিকা।
১৯২১ সালের ২ অক্টোবর নিজের ৫২তম জন্মদিনে গুজরাতি পত্রিকা ‘নবজীবন’-এর জন্য একটি প্রবন্ধ লিখতে গিয়ে গান্ধীজি স্বীকার করেন, প্রথমবার নিজের পোশাক পরিবর্তনের কথা তার মাথায় আসে খুলনা দুর্ভিক্ষের পরিপ্রেক্ষিতেই। বরিশালে অবস্থানকালে তার মনে হয়েছিল, খুলনার মানুষ যেখানে অভাবে-অনাহারে, না খেতে পেয়ে, অর্ধনগ্ন অবস্থায় মারা যাচ্ছে, সেসব চিন্তা করে তিনি অহেতুক কাপড় পুড়িয়ে চলেছেন। তাই তিনি ভাবেন, নিজে লজ্জাস্থান ঢাকার মতো কয়েক টুকরো কাপড় গায়ে জড়িয়ে, বাকি কাপড় পাঠিয়ে দেবেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের কাছে, খুলনার মানুষের জন্য।
অবশ্য ঠিক তখনই পোশাক পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা তার হয়ে ওঠেনি, কেননা পরে তার মনে হয় এই কাজও হবে নিছকই নিজের অহংবোধকে সন্তুষ্ট করা। আদতে খুলনাবাসীর কোনো লাভ এতে হবে না। তাদের বাস্তবসম্মত সাহায্য যা করার তা তো করা হচ্ছেই। শেষ পর্যন্ত পোশাক পরিবর্তনের পরিকল্পনা গান্ধীজি বাস্তবায়িত করেন মাদ্রাজ সফরে গিয়ে, মাদুরা জেলায় বসে।
২.
খুলনার সাথে গান্ধীজির আরো গভীর এক যোগাযোগও রয়েছে, যা ব্যক্তিগতভাবে তার মনোজগতে বিশাল প্রভাব ফেলেছিল, অনেকটাই বদলে দিয়েছিল জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি। কেননা দীর্ঘদিনের সুহৃদ, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের মৃত্যুর খবর যে তিনি শুনেছিলেন এই খুলনার মাটিতে দাঁড়িয়েই।
সেটি ১৯২৫ সালের ঘটনা। ১ মে বোম্বে থেকে কলকাতায় আসেন গান্ধীজি এবং ৭ মে থেকে শুরু হয় এক লম্বা পূর্ববঙ্গ সফর। একে একে তিনি যান গোয়ালন্দ, লোহাগঞ্জ, মালখানগর, চাঁদপুর, মহাজনহাট, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা, ময়মনসিং, দিনাজপুর, বগুড়া, পাবনা। এরপর ২৪ মে ফের কলকাতায় ফিরে তিনি চিত্তরঞ্জন দাশের বাড়িতে যান। সেখান থেকে বর্ধমান, হুগলি, শান্তিনিকেতন, বোলপুর হয়ে তারা হাজির হন দার্জিলিংয়ে। ৩ থেকে ৬ জুন চিত্তরঞ্জন দাশের সাথে কাটান গান্ধীজি। ওই সময়টায় দেশবন্ধুকে খুব কাছ থেকে জানতে পারেন তিনি, তার প্রতি শ্রদ্ধাবোধও অনেক বেড়ে যায়।
অথচ দার্জিলিং থেকে জলপাইগুড়ি এবং সেখান থেকে নওয়াবগঞ্জ, বোজেশ্বর, উপসী, মাদারিপুর, বরিশাল হয়ে ১৭ জুন স্টিমারে চেপে খুলনায় পৌঁছানোর পর তিনি একটি টেলিগ্রাম পান, যেখানে তাকে জানানো হয় দেশবন্ধুর আকস্মিক মৃত্যুর খবর।
দেশবন্ধুর মৃত্যুর খবর গান্ধীজির জন্য ছিল অনেকটা বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো। তিনি এতটাই হতবিহŸল হয়ে পড়েন যে, রীতিমতো সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে শুরু করেন। তিনি বুঝে উঠতে পারেন না, তার কি খাওয়া-দাওয়া করা উচিত হবে, নাকি তিনি দেশবন্ধুর আত্মার শান্তি কামনায় উপোস করবেন। আরো বুঝতে পারেন না, সরাসরি কলকাতায় রওনা দেবেন, নাকি পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী খুলনার সম্মেলনে অংশ নেবেন।
অবশ্য শেষ পর্যন্ত গান্ধীজি ঠিক করেন, তিনি খাবেন এবং সম্মেলনেও অংশ নেবেন। কেননা নিজের দায়িত্বের প্রতি তিনি ছিলেন সদা অবিচল। তবে এর আগে খুলনায় বসেই তিনি অন্তত নয়টি টেলিগ্রাম পাঠান। সেগুলোর প্রাপক ছিলেন মাওলানা মুহাম্মদ আলি, বাসন্তী দেবী দাশ, সাতকড়িপতি রায়, উর্মিলা দেবী, মোনা দাশ, বল্লবভাই প্যাটেল, সরজিনী নাইড়–, শওকত আলি এবং ভাইকমের সত্যাগ্রহ আশ্রম।
৩.
সেদিন খুলনা মিউনিসিপ্যালিটি পার্কে বক্তব্য রাখেন গান্ধীজি। তবে তার আগে আগতদের সামনে কথা বলেন আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। তিনি সবাইকে অবহিত করেন দেশবন্ধুর মৃত্যু সম্পর্কে। এরপর গান্ধীজি তার বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন:
“আপনারা আচার্য রায়ের মুখ থেকে শুনেছেন কী ভয়াবহ এক বিপর্যয় নেমে এসেছে আমাদের উপর। কিন্তু আমি জানি যে আমরা যদি এই দেশের সত্যিকারের অনুগত সেবক হয়ে থাকি, তাহলে যত বড় বিপর্যয়ই আসুক না কেন, আমাদেরকে মনোবল হারালে চলবে না। আজ সকালে আমি আমার পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে এক উভয়সঙ্কটে পড়েছিলাম। একদিকে যেমন আমার দায়িত্ব প্রথম ট্রেনেই কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেওয়া, তেমনই আপনারা আমার জন্য যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন সেখানেও অংশগ্রহণ আমার কর্তব্য। শেষ পর্যন্ত আমি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হই যে আগে আমাকে এখানকার কাজ শেষ করতে হবে, দূর-দূরান্ত থেকে যারা আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন তাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে হবে। তবে আজকের এই বক্তৃতায় আমি চিরাচরিত কংগ্রেস বিষয়ক আলাপের বদলে, এটিকে উৎসর্গ করব দেশবন্ধুর স্মৃতির উদ্দেশ্যে। আমি নিশ্চিত, কলকাতায় ছুটে যাওয়ার পরিবর্তে আমার এখানে থেকে গিয়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্তে তার বিদেহী আত্মা শান্তি পাবে।”
উল্লেখ্য যে, পরেরদিন ‘দ্য হিন্দু’ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশবন্ধু প্রসঙ্গে কথা বলতে গিয়ে একপর্যায়ে গান্ধীজি কান্নায় ভেঙে পড়েন। ফলে পরবর্তী কয়েক মিনিট তিনি কথা বলতে পারেন না। একই তথ্য আমরা জানতে পারি ওইদিন সম্মেলন শেষে খুলনা বসেই তৃতীয় পুত্র রামদাস গান্ধীকে লেখা গান্ধীজির একটি চিঠি থেকে। সেখানে তিনি লেখেন, “বক্তৃতার একপর্যায়ে আমি প্রচÐ ভেঙে পড়ি, যদিও আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছিলাম স্বাভাবিক থাকার।”
এখান থেকেই বোঝা যায়, ১৯২৫ সালের সেই খুলনা সফর গান্ধীজির জন্য কতটা বেদনাদায়ক ছিল।
৪.
সেদিনের সেই বক্তৃতার প্রায় পুরোটা জুড়েই গান্ধীজি কথা বলেন দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশকে নিয়ে। তবে দেশবন্ধুর সূত্র ধরেই চলে আসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা তৎকালীন অবিভক্ত ভারতবর্ষের প্রেক্ষাপটে তো বটেই, এমনকি আজ ২০২০ সালে দাঁড়িয়েও সমান প্রাসঙ্গিক। তিনি বলেন, “দার্জিলিংয়ে থাকতে একাধিকবার তিনি (দেশবন্ধু) আমাকে বলেছিলেন, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা নির্ভর করছে অহিংসা ও সত্যের উপর। এদেশের হিন্দু ও মুসলমানদের জানা প্রয়োজন, তার হৃদয়ে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ ছিল না। আমি ভারতবর্ষের ইংরেজদেরকে বলতে চাই, দেশবন্ধু কখনোই তাদের অমঙ্গল চাইতেন না। কিন্তু দেশমাতৃকার প্রতি তার শপথ ছিল, ‘আমি যদি বাঁচি তবে আমি বাঁচব স্বরাজের জন্য; আমি যদি মারা যাই তবে আমি মারা যাব স্বরাজের জন্য।’
তার স্মৃতিকে চিরস্থায়ী করে রাখার জন্য আমরা কী করব? চোখের জল ফেলা তো খুব সহজ। কিন্তু আমাদের চোখের জলে তার নিকটজন বা আপনজনদের কোনো লাভ হবে না। যদি আমরা, যারা নিজেদেরকে পরিচয় দিই হিন্দু, মুসলমান, পারসি কিংবা খ্রিষ্টান হিসেবে, সবাই মিলে নিজেদেরকে ভারতীয় বলে পরিচয় দিই, তার দেখানো পথ অনুসরণ করে কাজ করায় ব্রতী হই, তাহলেই তার জন্য আমাদের কিছু করা হবে।”
তৎকালীন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্ববঙ্গের হিন্দুপ্রধান খুলনায় দাঁড়িয়ে গান্ধীজি এভাবেই দেশবন্ধুর আদর্শকে উপস্থাপন করতে গিয়ে সব ধর্মের মানুষদের মাঝে অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাণী ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। সুতরাং তার এই বক্তৃতা আর দশটা সাধারণ বক্তৃতার মতো না হলেও, এই বক্তৃতার তাৎপর্য কোনো অংশে কম ছিল না।
সেদিন তিনি আরো বলেন, “আসলে আমার আর নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই তিনি (দেশবন্ধু) হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে একতা সৃষ্টিতে কতটা অবদান রেখেছেন, কিংবা অস্পৃশ্যদের প্রতি তার ভালোবাসা কী অসীম ছিল। আমি আপনাদেরকে শুধু এটুকুই বলব, যা আমি গতরাতে বরিশালের এক নমশূদ্র নেতার মুখ থেকে শুনেছি। তিনি বললেন, প্রথম তিনি যে মানুষটির কাছ থেকে অর্থ সহযোগিতা পেয়েছেন সেই মানুষটি হলেন চিত্তরঞ্জন দাশ। আর তারপরই প্রফুল্ল চন্দ্র রায়। আসলে আপনারা সবাই হয়তো কাউন্সিলে যেতে পারবেন না, কিন্তু আপনারা তার পছন্দের কাজগুলো করতে পারেন।”
৫.
গান্ধীজির বক্তব্যে উঠে আসে রাজনৈতিক অঙ্গনে মতাদর্শের পার্থক্য সত্তে¡ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার গুরুত্বের বিষয়টি। তার নিজের সাথেই দেশবন্ধুর মতানৈক্যের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “কাউন্সিলে প্রবেশের ব্যাপারে আমাদের মধ্যে মতভেদ সবসময়ই ছিল। কিন্তু আমাদের হৃদয় ছিল এক ও অভিন্ন। রাজনীতিতে বিভিন্ন বিষয়ে মতের পার্থক্য সবসময়ই থাকবে। কিন্তু এই পার্থক্যগুলো যেন কখনোই রাজনীতিবিদদের মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি না করে, কিংবা তাদেরকে পরস্পরের শত্রæতে পরিণত না করে। যে দেশপ্রেমের ফলে আমি একভাবে এগোতে চেয়েছি, সেই একই দেশপ্রেমের কারণেই হয়তো তিনি অন্য কোনোভাবে এগোতে চাইতেন। এই সৎ পার্থক্যগুলো কখনোই দেশের স্বার্থকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না। প্রকৃতপক্ষে পদ্ধতিগত পার্থক্য নয়, কপটতাই হলো অভিশাপ।”
৬.
এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই যে খুলনায় গান্ধীজির সেদিনের সেই ভিন্নধর্মী বক্তৃতা তৎকালীন পূর্ববঙ্গের এই অঞ্চলে তার উপস্থিতিকে অনেক বেশি মহিমান্বিত ও তাৎপর্যমÐিত করে তুলেছিল। বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত মানুষ ঠিক যে ধরনের কথা শুনতে চেয়েছিলেন গান্ধীজির মুখ থেকে, সেগুলো শোনা না হলেও, পরিবর্তে আরো শ্রেয়তর শিক্ষা নিয়েই সেদিন তারা বাড়ি ফিরেছিলেন। তাই তো খুলনার ইতিহাসে গান্ধীজির সেই বক্তৃতা সবসময়ই একটি উল্লেখযোগ্য জায়গা দখল করে থেকেছে। এমনকি তার সম্মানার্থে খুলনা মিউনিসিপ্যাল পার্কের নাম বদলে গান্ধী পার্কও রাখা হয়।
যদিও কালের স্রোতে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পার্কটির নতুন নামকরণ হয় জিন্নাহ পার্ক এবং সর্বশেষ ১৯৬৯ সালের ২১ ফেব্রæয়ারি গণঅভ্যুত্থানের সময় আইয়ুব বিরোধী মিছিলে পুলিশের গুলিতে নিহত শেখ হাদিসুর রহমান বাবুর নামে পার্কটির নতুন নাম হয় শহীদ হাদিস পার্ক। এই নামকরণের পেছনে বিশেষ ভ‚মিকা ছিল দৈনিক জন্মভ‚মি সম্পাদক মরহুম হুমায়ূন কবীর বালু, তৎকালীন ছাত্রনেতা ও দৈনিক পূর্বাঞ্চল সম্পাদক মরহুম আলহাজ্ব লিয়াকত আলী, মরহুম হেকমত আলী ভুইয়া প্রমুখের।
অর্থাৎ খুলনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শহীদ হাদিস পার্কটি গান্ধীজির স্মৃতিবিজড়িত। অবশ্যই পার্কের বর্তমান নামটিই বেশি যথাযথ, কেননা এর সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের স্বাধীনতা ইতিহাসের এক পরম শ্রদ্ধেয় শহীদের নাম। তবে এ কথাও অনস্বীকার্য যে গান্ধীজির স্মৃতি এই পার্কের ঐতিহ্যকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
৭.
জীবনের শেষভাগে খুলনার প্রতি গান্ধীজি কিছুটা মনঃক্ষুণœœই হয়েছিলেন। কেননা তিনি বরাবরই ছিলেন দেশভাগের বিরুদ্ধে। তিনি মনে করতেন, দেশভাগের বিষয়টি তার ভারতে সব ধর্মের মানুষের ঐক্যের ধারণার সাথে সাংঘর্ষিক। অথচ ১৯৪৭ সালে খুলনার নেতৃস্থানীয়রা পাকিস্তানের অংশ হওয়ায় উচ্ছ¡সিত হয়ে ওঠেন, যদিও এ অঞ্চলের হিন্দু জনগণ ছিল এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। ফলে দেশভাগ গান্ধীজির মনে যে প্রবল হতাশা ও মর্মযাতনার জন্ম দিয়েছিল, তার কিছুটা জায়গাজুড়ে ছিল খুলনারও অবস্থান।