রিপনচন্দ্র মল্লিক, মাদারীপুর : মাদারীপুরে বিভিন্ন ধনিয়া ক্ষেতে এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ধনিয়া ফসল। এতে লোকসানের মুখে পড়েছে ধনিয়া চাষীরা। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা জানালেন, ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে, জেলার শীর্ষ কৃষি কর্মকর্তা বললেন, ধনিয়া ক্ষেতে কোন ধরনের ছত্রাকের ঘটনার খবর তিনি জানেন না। এই এলাকায় মাটি ধনিয়া চাষের উপযোগী হওয়ায় ভাল ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের বলাইরকান্দি গ্রামের ধনিয়া চাষী আবদুল গফুর মোল্লা। তিনি চলতি বছর তার ৫ বিঘা জমিতে মসলা জাতীয় ফসল ধনিয়া চাষ করেছেন। তার ধনিয়া ক্ষেত এখন ফুলে ফুলে ভরে গেছে। গাছেও এসে গেছে ফল। এমন সময় হঠাৎ করে তার ক্ষেতে এক প্রকার ছত্রাকের আক্রমণে ধনিয়া গাছ মরতে শুরু করেছে। বাজার থেকে বেশ কিছু ছত্রাক নাশক ঔষধ ছিটিয়ে পাচ্ছেন না কোন সুুফল। এতে তিনি লোকসানের আতঙ্কে চিন্তিত হয়ে পড়েছে।
আবদুল গফুর মোল্লা বলেন, গত কিছু দিন আগে প্রচন্ড শীত পড়েছিল। তাই এক সপ্তাহ ধনিয়া ক্ষেতে আসতে পারিনি। কিন্তু এখন হঠাৎ করে ক্ষেতে এসে দেখি ধনিয়া গাছের ডালপালা শুকিয়ে যাচ্ছে। কোকরা দিয়ে যাচ্ছে। কোন কোন গাছ সম্পূর্ণ মরে গেছে। বাজার থেকে ঔষুধ এনে স্প্রে করেছি। কিন্তু তাতে তেমন সুফল পাচ্ছি না। একই অবস্থা এই গ্রামের আরো বেশ কয়েকজন ধনিয়া চাষীর।
একই গ্রামের অলিল গৌড়া বলেন, আমি দুই বিঘা জমিতে ধনিয়া চাষ করছি। এতে আমার এবছর গত বছরের চেয়ে বেশি উৎপাদন খরচ পড়ে গেছে। বিঘা প্রতি এবছর ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হয়ে যাবে, ফলস তুলতে তুলতে। এখন আবার ধনিয়া গাছ ভাইরাসে ধরে মরতেছে। আল্লাহ ভালো বলতে পারবে কতটাকা এবার লোকসান গুনতে হবে।’
আরেক ধনিয়া চাষী সামসু তালুকদার বলেন, ‘গত বছর আমার ক্ষেতে ভালো ধনিয়া হয়েছিল। তাই এবারও ধনিয়া চাষ করেছি। কিন্তু হঠাৎ করে ক্ষেতে ভাইরাস ধরছে। এখন কী করবো বুঝতে পারছি না। রুবেল হোসেন নামের আরেক ধনিয়া চাষী বলেন,‘আমাদের ক্ষেতে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। কিন্তু কৃষি অফিসের কোন লোকজন আমাদের কাছে আসেনি। আপনারা সাংবাদিকরাই প্রথমে আসলেন। দেখেন কী অবস্থা হইছে ধনিয়া ক্ষেতের, এখন আমরা কী করবো বুঝতেঠি না।
একই ধরনের সমস্যা জেলার শিবচর, রাজৈর কালকিনি উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ধনিয়া ক্ষেতে দেখা যাচেছ। তবে এসব ধনিয়া ক্ষেতের চাষীদের ছত্রাক আক্রমনের হাত থেকে ফসলের ক্ষেত রক্ষা করার প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন মাঠ পর্যায়ের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা।
মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম মিন্টু বলেন, ‘আমি ধনিয়া ক্ষেতগুলোতে গেছি। কৃষকদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিচ্ছি। তবে একই জমিতে বার বার একই জাতের ফসল চাষ করা ঠিক না। এতে জমির ফসলের ক্ষতি হয়। তাই ফসল চাষের আগে মাটিতে ভাইরাস নাশক ঔষধ দিয়ে মাটি তৈরী করে তারপর যদি ফসল বোনা হয়, তাহলে ফসলে ছত্রাক আক্রমণ করতে পারে না। আমি সব সময় কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে যাচিছ। তারপরও যেসব ধনিয়া ক্ষেতে ছত্রাক আক্রমণ করেছে, আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে ক্ষতিগ্রস্ত ধনিয়া চাষীদের পরবর্তীতে করনীয় জানাবো। তবে আমার দায়িত্বে কোন অবহেলা নেই।’
এই বিষয়ে মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সন্তোষ চন্দ্র চন্দ বলেন, মাদারীপুরের মাটি ও আবহাওয়া ধনিয়া চাষের জন্য খুবই উপযোগী। তাই ধনিয়ার ফলন খুব ভালো হয়েছে। তবে কিছু ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণের খবর আপনাদের কাছ থেকে জেনেছি। আমি এসব ধনিয়া ক্ষেতের খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
মাদারীপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, জেলায় চলতি বছর ধনিয়া চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ হাজার হেক্টর জমি। সেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৪ হাজার ২’শ ৯৫ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধনিয়া চাষ করা হয়েছে। যা থেকে প্রতি হেক্টরে ১.৪ মেট্রিক ধনিয়া উৎপাদন হবে।
মাদারীপুরে ধনিয়া ক্ষেতে ছত্রাকের আক্রমণ
Leave a comment