রঞ্জন কুমার মল্লিক, মাদারীপুর : মাদারীপুরের রাজৈরের ২০১৫ সালে একটি চাঁদাবাজির মামলার সাক্ষী হওয়ায় ফল ব্যবসায়ী বাবুল হাওলাদারকে কুপিয়ে হত্যা মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। এসময় প্রত্যেক এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরো এক বছরের সশ্রম করাদন্ড ভোগ করতে হবে ৫ আসামীকে। এদিকে এই মামলায় দোষ প্রমাণ না হওয়ায় ১৯ আসামীকে খালাস দেয়া হয়েছে।
বুধবার বিকেলে জেলার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারত নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবির এই রায় দেন। রায়ে ক্ষুব্ধ হওয়ায় উচ্চ আদালতে যাবার কথা জানিয়েছে বাদী ও আসামিপক্ষ।
মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালে একটি চাঁদাবাজি মামলায় সাক্ষি করা হয় মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার শাখারপাড় গ্রামের ফল ব্যবসায়ি বাবুল হাওলাদারকে। এরই জেরে ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি ফল ব্যবসায়ী বাবুল হাওলাদারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার দুইদিন পর ৬ জানুয়ারি ৪২ জনের নামে রাজৈর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহতের বড় ছেলে ইমরান হাওলাদার। মামলা দায়েরের পর ইমরানকে বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখায় আসামীপক্ষ। পরে সে বিদেশ চলে যায়। এরপর উচ্চ আদালদের নির্দেশে মামলা পরিচালানার দায়িত্ব পায় নিহতের ছোট ছেলে আসাদুল হাওলাদার। সর্বশেষ তৃতীয় দফায় ২০১৬ সালের ২৪ মে ২৭ জনের মধ্যে আদালতে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান ফকির। মামলা চলাকালীন সময়ে চার্জশিটভুক্ত তিন আসামির মৃত্যুও হয়। এরপর যুক্তিতর্ক, দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া ও ১২ জনের সাক্ষ্য নেয় আদালত।
বুধবার বিকেলে সাহেবালী মুন্সি, খোকন মুন্সি, সাহাবুদ্দিন মুন্সি, লাবলু মুন্সি ও হান্নান মুন্সি এই ৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড দেন আদালত। একইসাথে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়। জরিমানার অর্থ প্রদানে ব্যর্থ হলে আরো এক বছর করে কারাদন্ডের আদেশ দেয়া হয়। এছাড়া দোষ প্রমান না হওয়ায় বাকি আসামিদের খালাস দেয়া হয়েছে। মামলার রায়ের সময় হান্নান মুন্সি ছাড়া সাজাপ্রাপ্ত ৪ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাদের কড়া নিরাপত্তায় জেল হাজতে পাঠানো হয়। এদিকে রায়ে ক্ষুব্ধ হওয়ায় উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানিয়েছে উভয়পক্ষ।
নিহতের ছোট ছেলে ও মামলার বাদী আসাদুল হাওলাদার বলেন, ‘আমার বাবা একজন নিরহ মানুষ ছিলেন। তাকে নির্মম ভাবে আসামীরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমরা অন্তত ৫ জন আসামীর ফাঁসি ও অন্যদের বেশ কয়েকজনের যাবজ্জীব সাজার আশা করেছিলাম। কিন্তু আদালত যে রায় দিয়েছে এতে আমরা ও আমাদের পরিবার সন্তুষ্ট নই। এদিকে একই কথা জানালে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবি এমারত হোসেন। তিনি বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপীল করবে।’
এদিকে আসামী পক্ষের আইনজীবি ফজুর রহমানর হিরু বলেন, ‘আমরা আসামীপক্ষ ন্যায় বিচার পাইনি। আমাদের সকল আসামী নির্দোষ ছিল। তাই আমরা ৫ জন আসামীর সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবো।’