খুলনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, একুশে পদক প্রাপ্ত প্রথিতযশা সাংবাদিক মানিক চন্দ্র সাহা হত্যা মামলায় নয় জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলেও নেপথ্যের পরিকল্পনাকারী ও অর্থযোগানদাতা কারা ছিল? এ প্রশ্নের উত্তর আজও মেলেনি।
গত ২০০৪ সালের ১৫ জানুয়ারি প্রকাশ্য দিবালোকে খুলনা প্রেস ক্লাবের নিকটতম দূরত্বের সড়কে ঘাতকেরা মানিক চন্দ্র সাহাকে বোমা হামলা করে হত্যা করে। তার পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের না করায় ১৭ জানুয়ারি খুলনা থানার উপ-পরিদর্শক রণজিত কুমার দাস হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে পৃথক দু’টি মামলা দায়ের করেন। হত্যাকাণ্ডের চতুর্থ দিনে ১৯ জানুয়ারি একটি লিফলেটের মাধ্যমে পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি (জনযুদ্ধ) নামক নিষিদ্ধ ঘোষিত একটি চরমপন্থী সংগঠন হত্যার দায় স্বীকার করে।
২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারক এম এ রব হাওলাদার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রায়ে তিনি ৯ আসামির যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরো এক বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। তবে, বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণে সমর্থ না হওয়ায় তারা খালাশ পান। একই দিনে এই মামলাটির রায় ঘোষিত হয়। হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলার আসামিরা একই।
খুলনা জেলা কারাগারের একটি সূত্র জানান, সাজাপ্রাপ্ত আকরাম হোসেন ওরফে বোমারু আকরাম ওরফে ফাটা, বুলবুল ওরফে বুলু এবং সুমন ওরফে নূরুজ্জামান কারাগারে আছে। বেল্লাল যশোর জেলা কারাগারে আছে। গত ২০১৯ সালে তাকে সেখানে স্থানান্তর করা হয়। সে ভারতে পলাতক ছিল। দেশে ফেরার পর তাকে র্যাব-৬ সদস্যরা গ্রেফতার করে। দণ্ডিত ছাত্তার ওরফে ডিস্কো ছাত্তার, সাকা ওরফে শওকাত হোসেন, সরো ওরফে সরোয়ার হসেন এবং আকবর শিকদার ওরফে শাওন উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে মুক্ত হয়েছেন।
সূত্রমতে, ৫ নং ঘাট এলাকার নতুন বস্তির সেই সময়কার বাসিন্দা আব্দুল লতিফ সরদারের ছেলে মিঠুন ওরফে মিঠুল সাজা পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পলাতক আছে।
ইতিপূর্বেকার মানিক সাহার হত্যাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় সাংবাদিক নেতারা বলেছেন, ঘাতকের বোমার আঘাতে প্রাণ হারানোর আগে তিনি বুঝেছিলেন অপশক্তি তাকে টার্গেট করেছে। তার বাসার সামনে অপরিচিত লোক ঘোরা-ফেরা করত। ফোনে হুমকি দেয়া হতো। তিনি ঢাকায় চলে যাওয়ার কথা বলতেন। তিনি সাংবাদিকতা পেশার প্রতি কমিটেড ছিলেন। তার কলকাতায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি আওয়ামীলীগের সম্মেলন দেখে যেতে চেয়েছিলেন। সম্মেলন শুরু হতে দেরি হওয়ায় তিনি প্রেস ক্লাবে এসছিলেন। সেখান থেকে রিক্সা যোগে বাসায় যাওয়ার পথে কেউ তাকে ডাক দেয়। তিনি থামা মাত্রই তার মাথায় বোমা নিক্ষেপ করা হয়। ঘটনাস্থলের আশ-পাশের কেউ ঠিকমত সাক্ষ্য দেয়নি। হত্যা মামলায় ৯ আসামীর সাজা হলেও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলার আসামীরা খালাস পেয়েছে। হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের পরিকল্পনাকারী ও অর্থযোগানদাতারা কেউই আইনের আওতায় আসেনি। তিনি কেন খুন হলেন? তা এখনও অস্পষ্ট রয়ে গেছে।
বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-এর তৎকালীন পাবলিক প্রসিকিউটর এনামুল হক দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, আসামিদের মধ্যে একজন আদালতে অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছিল। তার স্বীকারোক্তি, সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ ও পারিপার্শিক অবস্থা বিবেচনা করে আদালত মামলাটির বিচার সম্পন্ন করেছিলেন।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি’র খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমএম রুহুল আমিন দৈনিক জন্মভূমিকে বলেন, সাংবাদিক মানিক সাহা হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী ও অর্থযোগানদাতারা তৎকালীন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সাথে কোনো না কোনোভাবে সম্পর্কিত ছিল। যে কারণে পুলিশ প্রশাসন তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে ব্যর্থ হয়।