জন্মভূমি ডেস্ক : ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীত উপক্ষো করে লাখো মুসল্লির পদভারে মুখরিত তুরাগ তীর। আজ শুক্রবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমা শুরু হবার কথা থাকলেও বুধবার রাতেই পুরো ইজতেমা ময়দান পরিপূর্ণ হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার সকালেও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে দল বেধে মুসল্লিদের আসতে দেখা গেছে ইজতেমা ময়দানে।
ইজতেমা ময়দানে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন খিত্তা অনুযায়ী ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নেয়া মুসল্লিরা তাদের মুরব্বিদের বয়ান শুনছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে মূল বয়ান শুরু হবে শুক্রবার বাদ ফজর থেকে।
জানা যায়, এখন ইজতেমায় আগত সকল মুসল্লিদের তাদের নিজ নিজ দলের আমীরের মাধ্যমে ইজতেমার যাবতীয় ইমান, আদব, আখলাক ও শৃঙ্খলা নিয়ে কথা বলছেন। ইজতেমায় তাদের দলের সদস্যদের কার কী কাজ, কে কী দায়িত্ব পালন করবে তা ভাগ করে দেয়া হচ্ছে।
বুধবার রাত থেকেই দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা দলবদ্ধ হয়ে ইজতেমা মাঠের নির্ধারিত খিত্তায় প্রয়োজনীয় মালামাল ও ব্যাগ নিয়ে অবস্থান করছেন। তিনদিন ব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব ১৫ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে। শুক্রবার দেশের সর্ববৃহৎ জুম্মার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে এই ইজতেমা ময়দানে। এতে প্রায় ১০ লাখ মুসল্লি এক জামাতে শরিক হয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী মুফতি জহির ইবনে মুসলিম বলেন, দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা ময়দানে এসে ইজতেমায় যোগ দেয়া শুরু করেছেন। বিদেশিরা ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে তাদের জন্য উন্নত তাবুতে অবস্থান নিচ্ছেন। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৬টি দেশের প্রায় দেড় হাজার বিদেশি মেহমান এসে ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের পাশাপাশি একই সময়ে দেশের প্রায় সব জেলা থেকে লাখো মুসল্লি এসে ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় হাজির হয়েছেন। পুরো ইজতেমা ময়দানকে মুরুব্বীদের পরামর্শে সাজানো হয়। ময়দানে জেলাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থান, রান্না-বান্না করার স্থান, টয়লেট, অজুখানা, গোসলখানা সবই সুর্নিদিষ্ট করা থাকে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ইজতেমার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার পুলিশ ও র্যাবসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। কয়েকটি স্তরের এ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ইজতেমা ঢেকে রাখা হবে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন ঘটতে না পারে সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। বাদ জোহর ইজতেমা ময়দানে তাদের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মৃত ব্যক্তিরা হলেন- গাজীপুর শহরের ভুরুলিয়া এলাকার বাসিন্দা আবু তৈয়ব ওরফে আবু তালেব (৯০) এবং সিলেটের জৈন্তাপুর থানার হরিপুরের হেমুবটে পাড়া এলাকার মো ফজলুল হকের ছেলে মো. নুরুল হক (৬৩)।
ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আব্দুন নূর জানান, বার্ধক্যজনিত রোগে তাবলীগ জামাতের গাজীপুর মারকাজের সুরা সদস্য আবু তৈয়ব সকাল ১০টার দিকে মারা গেছেন। আর নুরুল হক ভুগছিলেন এ্যাজমা রোগে। সকালে ইজতেমা ময়দানের ৬২নম্বর খিত্তায় অবস্থানকালে নুরুল হকের শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় এবং কিছু সময়ের মধ্যেই তিনি মারা যান। দুপুরে ইজতেমা ময়দানে জানাযা শেষে লাশ দুটি তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরুর আগের দিন পুরো ময়দান মুসল্লিতে পূর্ণ হয়ে গেছে। মাঠের মূল অংশে মুসল্লিরা ঠাঁই না পেয়ে কামারপাড়া ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থান নিয়েছে।