জন্মভূমি রিপোর্ট : সন্ধ্যায় যা ছিল একশ টাকা তা রাত পোহালেই সকালে ১৮০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে পেয়াঁজ। এক রাতের ব্যবধানে মোংলায় পেঁয়াজের কেজি বেড়েছে ১০০টাকা থেকে ১৮০টাকা পর্যন্ত। এরপরেও আরো বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও জানায় ব্যাবসায়ীরা।
যদিও এ পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের কেনা রয়েছে দাম বৃদ্ধি ও সিন্ডিকেটের কৃত্রিম সংকটের আগেই। নানা অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা আগের দামে কেনা পেঁয়াজ তারা যে যার মত করে ১২০টাকার জায়গায় ১৩০, ১৪০, ১৫০, ১৬০, ১৭০ ও ১৮০ টাকা দরে বিক্রি করছেন।
ক্রেতারা জানায়, শনিবার সকালে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে মোংলার বাজারে। গতকাল শুক্রবার যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১১০টাকায়, সেই পেঁয়াজ রাতের ব্যবধানে শনিবার সকালে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ১৮০ টাকা পর্যন্ত। শনিবার সকালে বাজারে এসে পেঁয়াজের দাম শুনে চোখ যেন মাথায় উঠে গেছে ক্রেতাদের। বাড়তি দাম শুনে কেউ পেঁয়াজ না নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন, আবার কেউ সাধ্যমত স্বল্প পরিমাণ পেঁয়াজ কিনে বাড়ী ফিরছেন। যদিও পেঁয়াজ নিত্যপ্রয়োজনীয় তাই দাম বাড়লেও বাধ্য হয়েই আবার ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে। এনিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ, দাম দর নিয়ে বাকবিতন্ডাও ঘটছে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে। ক্রেতারা বলছেন, এখন নতুন পেঁয়াজ উঠছে ও উঠবে, তাহলে দাম বাড়বে কেন?
ক্রেতা দিমজুর জোবায়েত হোসেন বলেন, ১০০ টাকার পেঁয়াজ এখন ১৬০/১৮০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। আমরা গরীব মানুষ কিভাবে এতো বেশি দামে পেঁয়াজ কিনে খাবো। অন্যান্য মালামালের দামও বেশি, আমাদের পরিবার চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে।
ক্রেতা জাহাজ শ্রমিক আকবার আলী বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে আধা কেজি পেয়াজ কিনেছি ১১০টাকা দরে। আজ শনিবার বাজারে পেঁয়াজ কিনতে এসে দেখি ২০০টাকা কেজি। আজ (শনিবার) আর পেঁয়াজ কিনতে পারিনি। ব্যবসায়ীদের বরাত দিয়ে তারা বলছেন, আমদানী বন্ধের কারণে নাকি দাম বেড়েছে।
ক্রেতা বাদল মিয়া বলেন, ১০৫/১১০টাকার পেঁয়াজ এখন ১৫০ থেকে ১৮০টাকা হয়েছে, যা মুলত আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে।
আর বিক্রেতারা বলছেন, এলসি বন্ধ, সরবরাহ কম তাই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা আরো বলছেন, খুলনার মোকামে পেঁয়াজ নেই, যা আছে তারও দাম বেশি, আমরা কি করবো!
পেঁয়াজ ব্যবসায়ী/বিক্রেতা রহিম হাসান বলেন, দাম বাড়ায় পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছিনা, ক্রেতারা বলছেন ডাকাতি করছি নাকি। তিনি আরো বলেন, খুলনায় পেঁয়াজের কেজি ১৬০টাকা, আর খরচ মিলিয়ে আমাদের বিক্রি করতে হচ্ছে ১৭০/ ১৮০ টাকায়।
পেঁয়াজ বিক্রেতা মোঃ সেলিম বলেন, গতকাল শুক্রবার খুলনার মোকামে খোঁজ নিলে মহাজনেরা বলেছেন পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪০/৫০টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। মহাজনেরা আমাদেরকে বলেছেন ভারত থেকে নাকি পেঁয়াজ আসা বন্ধ রয়েছে। সেই কারণে দাম বেড়েছে। দাম বাড়ায় গতকাল শুক্রবার খুলনা থেকে মোংলায় কোন পেঁয়াজ আসেনি। ফলে আজ শনিবার বাজারেও পেঁয়াজ কম, তাই দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা আগের পেঁয়াজই ১৫০থেকে ১৮০টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।
এদিকে বাজারে পেঁয়াজ থাকলেও দাম বাড়ার অজুহাতে সেগুলো গোডাউনে মজুদ রেখে কম কম বের করে বেশি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা এমন অভিযোগ স্থানীয় ক্রেতা সাধারণের। ক্রেতাদের অভিযোগ, বাড়তি দামের পেঁয়াজ এখনও মোংলার বাজারে আসেনি, কিন্তু ব্যবসায়ীরা আগের কম দামে কেনা পেঁয়াজ এখন খামখেয়ালীভাবে আমাদের জিম্মি করে চড়া দামে বিক্রি করছেন।
এক রাতের ব্যবধানে নানা অজুহাতে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির ঘটনাটি সিন্ডিকেটের কারসাজি উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছেন উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি এইচ এম দুলাল। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখেই হয়তো সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতেই একটি চক্র এমন কারসাজি করছেন। এটি সরকারের খতিয়ে দেখার প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
পেঁয়াজের দামের এ উর্ধ্বগতিতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠেছে। পেঁয়াজসহ সকল পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ রাখতে এবং সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম বন্ধে স্থানীয় প্রশাসনসহ সরকারের প্রতি জোর দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সাধারণ ক্রেতারা।