জন্মভূমি রিপোর্ট : চলমান কারফিউ ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকার কারণে শুল্কায়ন না হওয়া মোংলা সমুদ্র বন্দরে নিত্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য আটকা পড়েছে। এর পাশাপাশি ব্যাংক বন্ধ থাকায় ব্যবসার জন্য লেনদেন করা যাচ্ছেনা। এছাড়া অনলাইনে শুল্কায়ন করা সম্ভব না হওয়ায় পণ্য খালাসের পাশাপাশি প্রতিদিন ১৬কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে মোংলা কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মোংলা বন্দর ও চট্রগ্রাম বন্দরে আমদানি হওয়া গাড়ি খালাস করতে না পারায় গাড়ি আমদানিকারকদের প্রতিদিন ৪০কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় আমদানি-রপ্তানিকারকরা এই মোটা অংকের টাকার ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
আমদানি-রপ্তানিকারকরা বলছেন, মোংলা বন্দরে পণ্য খালাস আটকে যাওয়ার কারণ আমদানি পণ্যের শুল্কায়ন না হওয়া। মূলত ইন্টারনেট না থাকায় অনলাইনে শুল্কায়ন হচ্ছেনা। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করার আগে যেসব পণ্যের শুল্কায়ন শেষ হয়েছিল, এমন পণ্যই এখন খালাস করা যাচ্ছে। নতুন করে পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় বন্দরে পণ্যের জটলা জমছে, যার মধ্যে নিত্যপণ্যও রয়েছে।
তবে মোংলা বন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক (বোর্ড ও জনসংযোগ বিভাগ) মোঃ মাকরুজ্জামান। তিনি জানান, আমদানি-রপ্তানিকারকরা বন্দরে আসলে তাদের পণ্য ডেলিভারি নিতে পারবেন-এজন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ সব রকমের প্রস্তত রেখেছে।
মোংলা কাস্টমস হাউস কর্তৃপক্ষের কমিশনার কে,এম মাহাবুবুর রহমান জানান, স্বাভাবিক পরিস্থিতে তাদের প্রতি মাসে রাজস্ব আয় হয় ৩০০ কোটি টাকা। আর প্রতিদিন রাজস্ব আদায় হয় ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকা। তবে চলমান উদ্ভুত পরিস্থিতির কারণে গত রবি, সোম, মঙ্গলবার ও বুধবার এই তিন দিনে মোংলা কাস্টমস হাউজ ৬৬ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, শুধু কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নয়, এই পরিস্থিতিতে আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীরাও চরম বিপাকে পড়ে মোটা অংকের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। ইন্টারনেট না থাকায় অনলাইনে শুল্কায়ন করা সম্ভব হচ্ছেনা। তবে পচনশীল পণ্য যাতে খালাস করা যায়, সে জন্য সনাতন পদ্ধতি ‘লোকাল এরিয়া ইন্টারনেট’ চালু রাখা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা চাইলে তাদের পচনশীল পণ্য খালাস করতে পারবে। কিন্তু এই তিনদিনে আমদানি-রপ্তানিকারকদের কেউ আসেননি বলেও জানান তিনি।
মোংলা বন্দর সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লিয়কত হোসেন বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় কাস্টমসে ‘বিল অব এন্ট্রি’ করা যাচ্ছেনা। ব্যাংক ট্যাক্সের টাকা জমা দেওয়া যাচ্ছেনা। মোংলা বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। ট্রাকে বন্দরে পণ্য আনা-নেওয়া করা যাচ্ছেনা।
এছাড়া মোংলা বন্দরে পণ্য খালাস আটকে যাওয়ার কারণ আমদানি করা পণ্যের শুল্কায়ন না হওয়া। মূলত ইন্টারনেট না থাকায় অনলাইনে শুল্কায়ন হচ্ছেনা। ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করার আগে যেসব পণ্যের শুল্কায়ন শেষ হয়েছিল, এমন পণ্যই এখন খালাস করা যাচ্ছে। নতুন করে পণ্য খালাস বন্ধ থাকায় বন্দরে পণ্যের স্তুপ জমছে, যার মধ্যে নিত্যপণ্যও রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে কারফিউ এবং ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন গাড়ি আমদানিকারকরা। বাংলাদেশ রিকন্ডিশন বেহিক্যাল ইমপোটার্স অ্যান্ড ডিলার এ্যাসোসিয়েশনের (বারবিডা) সভাপতি মোঃ হাবিবুল্লা ডন বলেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রতিদিন মোংলা ও চট্রগ্রাম বন্দর দিয়ে গাড়ি খালাস করতে ১২০ থেকে ১৫০টি রেজিস্ট্রন হয়। সে হিসেবে তাদের প্রতিদিন ৪০ কোটি টাকা আয় হয়। কিন্তু দেশের চলমান পরিস্থিতি গত বুধবার থেকে ঝুঁকি নিয়ে এই দুই বন্দর থেকে একটি গাড়িও খালাস করতে না পারায় চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন তারা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, ‘চলমান পরিস্থিতিতে মোংলা বন্দরকে ঘিরে নাশকতা এড়াতে নৌ বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। স্বাভাবিক রয়েছে বন্দরে অবস্থান করা দেশি-বিদেশি জাহাজের কার্যক্রম। গাড়ি আমদানিকারকরা চাইলে মোংলা বন্দর থেকে গাড়ি খালাস করতে পারত। সে ক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষ সড়ক-মহাসড়কে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার বেষ্টনী দিয়ে তাদের সহযোগিতা করত’।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী এক জেষ্ঠ্য ব্যবসায়ী বলেন, চলমান এই পরিস্থিতিতে বন্দর সংশ্লিষ্ট সব ধরণের ব্যবসায়ীদের দৈনিক প্রায় ১০০ কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। এছাড়া সরকারও মোটা অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে। ইন্টারনেট পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত আমদানি-রপ্তানিতে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত এই পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সমস্যা আরও ঘনীভূত হবে বলে এই ব্যবসায়ী জানান।