সরেজমিনে ও অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার জিউধরা ইউনিয়নের সোমাদ্দারখালী গ্রামে দীর্ঘ ১’শ বছরের পুরাতন শ্রী শ্রী কালিমাতা মন্দিরটিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের পূজারিরা পূজা পার্বন করে আসছেন। বাংলা ১৩২৯ সালে মন্দিরটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন জমিদারি শাসন আমলে সেবায়েত সুরেন্দ্রনাথ রায় সরকার গুহ দাস কালী মন্দিরের নামে ২০ একর ২৯ শতক জমি দান করেন। পরবর্তীতে এস.এ রেকর্ড খতিয়ান নং ৫৫৭ অনুযায়ী কালিমাতা মন্দিরই ওই জমির মালিকানা হয়ে প্রতিবছর কয়েক গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ওখানে পূজাপার্বন করে আসছেন। বছরে দুই বারে ব্যাপক লোকসমাগমে রটন্তি, কালিপূজা ও শ্যামা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া দৈনন্দিন সময়ে সকাল সন্ধা দু’বেলা পূজা অর্চনা করে থাকেন মন্দিরের দায়িত্বরত পুরোহিত।
এ মন্দিরের মূল ভবনটি ৫৫শতক জমির ওপরে। বাকী বিলান জমিতে ২০বিঘা ও ৪ বিঘার দুটি মৎস ঘেরের বছরের আয় থেকে মন্দিরের পুরোহিতের মাসিক বেতনসহ সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। সম্প্রতি ওই ইউনিয়নের তহশীলদার গাজী শামীম আহসান মন্দিরের নিজস্ব সম্পতি ২০ বিঘা মৎস্য ঘেরটি নিয়ে ষড়যন্ত্র করে মন্দির কমিটির সভাপতি সম্পাদকসহ মন্দির কমিটির নেতৃবৃন্দকে নানা হয়রানি করে আসছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তহশীলদার নিজে মৎস্য ঘের করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। ভয়ভীতি ও দূব্যবহার করে মন্দির কমিটির সদস্যদের সাথে।
মন্দিরের সভাপতি অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুভাষ চন্দ্র হালদার, সাধারণ সম্পাদক শিক্ষক সঞ্জয় কুমার তালুকদার, বলেন, একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তার কর্মস্থলে কিভাবে মৎস্য ঘের করার চেষ্টা করছে। আমাদেরকেও নানা কৌশল করে মন্দিরের জমি বেহাত করার চেষ্টা করছে। ভয়ভীতি ও দূর্ব্যবহার করছে তহশীলদার। বিষয়টি স্থানীয় এমপি মহোদয়কে লিখিত আকারে অবহিত করা হয়েছে।
এদিকে মন্দির কমিটির সদস্য স্থানীয় বাসিন্দা ফনিভুষন হালদার, নির্মল মিস্ত্রি, শৈলেন্দনাথ হালদারসহ একাধিকরা বলেন, ১০০ বছরের পুরাতন এ কালি মন্দিরের জমির একটি অংশ কিভাবে খাস খতিয়ানে যায়। জমিদানকারি দাতা মৃতবরণ করেছে, মন্দিরতো আর অন্য কোথায় চলে যায়নি। সেখানো নিয়মিত পূজা পার্বন চলে আসছে। ৯৮সালে এ মন্দিরের পুরোহিতকে গুলি করে হত্যা করেছিলো সন্ত্রাসীরা। সে সময়ে বিআরএস রের্কডে অন্যায়ভাবে মন্দিরের কিছু অংশ জমি কেটে নিয়েছে। আমাদের জমি ফিরে পেতে আদালতে মামলা করেছি। এ তহশীল এখানে এসে জমি বেহাত করার জন্য ষড়ডন্ত্র করছে। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মন্দির কতৃপক্ষ প্রধান মন্ত্রীসহ উর্ধতন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।
মন্দিরের ওই জমির বর্তমান ঘের মালিক রানা খান বলেন, ১৪ বছর ধরে মন্দির কমিটির কাছ থেকে নগদ টাকায় রেখে মৎস্য ঘের করে আসছি। এ ঘের ব্যবসা থেকে বৃদ্ধ পিতামাতা সহ ৮ জনের পরিবার নির্ভরশীল। জমিতে পানি তুলতে দিচ্ছেনা তহশীলদার মাঠ ফেঠে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। পানি তোলার গোন চলে গেলে কিভাবে পানি তুলবো?।
এ বিষয়ে জিউধরা ইউপি চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদশা বলেন, তার ইউনিয়নের কয়েক গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন স্থানীয় তহশীলদার বহিরাগত লোকজন এনে মন্দিরের ওই ঘেরটি দেখাচ্ছেন। বিষয়টি তিনিও সংসদ সদস্যকে অবহিত করেছেন।
এ সর্ম্পকে জিউধরা ইউনিয়ন তহশীলদার গাজী শামীম আহসান তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি নিজে ঘের করতে চাননি। মন্দিরের সভাপতি সম্পাদকই তাকে ঘের করার প্রস্তাব দিয়েছে। শুধুমাত্র সরকারি সম্পত্তি রক্ষা করার দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
মোরেলগঞ্জ সহকারী কমিশনার (ভূমি). মো. রুহুল কুদ্দুস বলেন, বর্তমান রেকর্ড অনুযায়ী মন্দির কর্তৃপক্ষকে জমি দেয়া হবে। ১/১ খাস খতিয়ানের সরকারি কোন সম্পত্তি তাদেরকে দেয়া হবেনা। যদিও তারা এ বিষয়ে একটি মামলা করেছে আমরা জবাব দেবো।