যশোর প্রতিনিধি : অডিট আপত্তির মুখে পড়তে যাচ্ছে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নিয়মবর্হিভূতভাবে ৫ টাকার টিকিটের দাম বাড়িয়ে ১০ টাকা ও আইসিইউতে ভর্তি এবং ভাড়ার টাকা নেয়ার অভিযোগে আপত্তি জানাবেন অডিট টিম। গত(২০ ফেব্রুয়ারি )মঙ্গলবার হিসাব নিকাশ খতিয়ে দেখার সময় বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের কর্মকর্তাদের কাছে কৈফিয়ত চান টিমের সদস্যরা। অবৈধভাবে আদায় করা অর্থ কোন খাতে ব্যয় করা হচ্ছে সেটিও খতিয়ে দেখেছে অডিট টিম। তারা বলছেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া টিকিটের দাম বাড়ানো ও আইসিইউ ভাড়া নেয়ার সুযোগ নেই। অথচ দুই খাত থেকে বছরের পর বছর অবৈধভাবে টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জানিয়েছেন, জেলা হাসপাতাল স্বাস্থ্য ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্তে রোগীদের কাছ থেকে ৫ টাকার টিকিট ১০ টাকা ও আইসিইউ ভাড়া নেয়া হয়। এসব টাকা স্বেচ্ছাসেবীদের বেতন ও উন্নয়নের কাজে ব্যয় করেন।
সুত্র জানায়,২০২২ সালের জানুয়ারি মাসে জেলা হাসপাতাল স্বাস্থ্য ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বর্হিঃবিভাগের টিকিটের দাম ৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা এবং আইসিইউতে রোগী ভর্তি বাবদ ১ হাজার টাকা ও প্রতিদিন ৫শ’ টাকা করে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। সভায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও জেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি স্বপন ভট্টাচার্য্য উপস্থিত ছিলেন।
প্রস্তাবটি দিয়েছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাসপাতালের চারপাশে নির্দেশনাপত্র ঝুলিয়ে দেয়া হয়। এদিকে, পরের মাসে হাসপাতালে অডিট টিম আসলে ৫ টাকার টিকিট ১০ টাকা করার বিষয়টি নজরে আসে। তখন অডিট আপত্তিও জানানো হয়। পরে টিকিটের মূল্য ফের ৫ টাকা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়নি।
এর আগে ২০২১ সালের মে মাসে করোনা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক হয়ে ওঠার কারণে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ১০ শয্যার আইসিইউ ওয়ার্ড করার উদ্যোগ নেয়া হয়। পরে ১০টি ভেন্টিলেটর চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় কর্তৃপক্ষ। জুন মাসে মন্ত্রণালয় ৬টি ভেন্টিলেটর বরাদ্দ পায়। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ৬টি ভেন্টিলেটর হাসপাতালে এসে পৌঁছায়। পরে দক্ষ চিকিৎসক, সেবিকা, ৬টি শয্যা, মনিটর, অক্সিজেন, পাইপ লাইনসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি বরাদ্দের ব্যাপারে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়। নভেম্বর মাসে ৫টি বেডের বরাদ্দ পাওয়া যায়। অন্যান্য যন্ত্রপাতির অনুমোদন না মেলার কারণে কবে আইসিইউ কার্যক্রম শুরু হবে তা নিয়ে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে কর্তৃপক্ষ। পরে বেসরকারি উদ্যোগে আইসিইউ চালু করা হয়। পরে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সেখানে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসাসেবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে স্বাস্থ্য ও ব্যবস্থাপনা কমিটি। এরপর থেকে প্রতি রোগী ভর্তি বাবদ ১ হাজার টাকা ও প্রতিদিন ৫শ টাকা বেড ভাড়ার বিনিময়ে সাধারণ রোগীরা চিকিৎসাসেবার সুযোগ পাচ্ছে। তবে অডিট টিমের সদস্যরা বিষয়টি নিয়মবর্হিভূত বলে জানিয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ৩ সদস্যের অডিট টিম গত ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের হিসাব-নিকাশ খতিয়ে দেখা শুরু করেছেন। আজ ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের কার্যক্রম শেষ হয়েছে। অডিট টিমের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা ছাড়া সরকারি হাসপাতালে ৫ টাকার টিকিট ১০ টাকা ও আইসিইউ বাণিজ্য করার কোন নিয়ম নেই। এই দুই খাতে রোগীদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, নিয়মবর্হিভূতভাবে নেয়া লাখ লাখ টাকা রাখার জন্য নিদিষ্ট কোন ফান্ড নেই। আবার সরকারি কোষাগারেও জমা দেয়া হচ্ছেনা। তাহলে এসব টাকা কোথায় যাচ্ছে। বিষয়টি খোঁজ নেয়া হচ্ছে। তিনি জানান, মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের কর্মকর্তাদের কাছে কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে। বাড়তি অর্থ আদায়ের বিষয়ে মন্ত্রনালয়ের কোন আদেশ দেখাতে পারেননি। টিকিট ও আইসিইউ বাণিজ্যের বিষয়ে মোটা অংকের অডিট আপত্তি জানানো হবে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা.হারুন অর রশিদ জানান, করোনার আইসিইউতে সামান্য টাকার বিনিময়ে সাধারণ রোগীরা চিকিৎসা সুযোগ পাচ্ছে। এজন্য মানুষের খুলনা অথবা ঢাকায় ছুটতে হচ্ছেনা। আবার লাখ লাখ টাকা ব্যয় করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দারস্ব হতে হচ্ছে না। অডিট আপত্তি জানালে আইসিইউ চালু রাখা কঠিন হয়ে যাবে। তিনি আরও জানান, ৫ টাকার ১০ টাকা ও আইসিইউ থেকে আয়ের টাকা স্বেচ্ছাসেবকদের সম্মানী ও হাসপাতালের বিভিন্ন উন্নয়নে ব্যয় হয়। অডিট টিমের সদস্যদের বিষয়টি অবগত করা হয়েছে।