যশোর প্রতিনিধি : যশোরের চুড়িপট্টিতে স্কুলছাত্র ও দোকানকর্মী রাজিম হাসান ওরফে সাজেদ (১৭) হত্যাকান্ডের ঘটনায় সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্ত হওয়া ৫ দুর্বৃত্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ঘটনার সময় ব্যবহৃত রক্তমাখা চাকুসহ অন্যান্য আলামত। শুক্রবার রাতে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয় ,বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার দিনব্যাপী শহরের বিভিন্ন স্পটে অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করা হয়েছে। হত্যাকান্ডের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে শহরের চুড়িপট্টিস্থ মেসার্স জাহিদ এন্টারপ্রাইজ এর সামনে ঝুমঝুমপুর টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের ছাত্র ও চুড়িপট্টি এলাকার ভাই ভাই হোশিয়ারির কর্মী রাজিম হোসেনকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। শহরের চুড়িপট্টি এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে ডেকে তারই পূর্ব পরিচিত ৫/৬ জনের চিহ্নিত উঠতি দুর্বৃত্ত দল এই হত্যাকান্ডর ঘটনাটি ঘটায়। ওই রাতেই আশপাশের বাসা ও দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে হত্যাকান্ডের দৃশ্য ভাইরাল হয়ে যায়। দেখা যায় ৫/৬ জনে ধাওয়া করে তাকে ছুরিকাঘাত করছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও আটকে অভিযান শুরু করে পুলিশ। ঘটনার রাতেই স্থানীয় সূত্র থেকে পুলিশ প্রাথমিক তথ্য পায়, বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টায় ৬/৭ জনের উঠতি দুর্বৃত্ত চুড়িপট্টির দোকানে এসে রাজিমকে ডেকে নিয়ে যায়। প্রথমে বাকবিতন্ডা ও পরে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। রাজিম ওরফে সাজেদকে তার পূর্ব পরিচিত পায়েল, ইয়ামিন, রায়হানসহ ৬/৭ জনের একটি গ্রুপ হত্যাকান্ড ঘটিয়ে চলে যায় বলেও তথ্য দেয়া হয়।
ওই তথ্যে ও সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে মাঠে নামে যশোর কেতোয়ালি থানা পুলিশ ছাড়াও আরো কয়েকটি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার টিম। সিসিটিভির ফুটেজে রাতেই শনাক্ত হয়ে পড়ে হত্যায় জড়িতরা। নিহতের পরিবারের সদস্যদের সাথে ও ঘটনাস্থল এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে শুরু হয় জড়িতদের শনাক্ত ও আটক অভিযান।
থানা সূত্রের তথ্যমতে, এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার সারাদিন বিভিন্ন স্পটে অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো শহরের পূর্ব বারান্দিপাড়া (মোল্লাপাড়া)’র মোঃ রাইজ এর ছেলে মোঃ রায়হান (২০), ইয়াছিন আলীর ছেলে মোঃ পায়েল (১৯), বিপ্লব @ চাকমা বিপ্লব এর ছেলে মোঃ ইয়ামিন (১৯), রুস্তম গাজীর ছেলে শিমুল (২৫) ও ঝুমঝুমপুর (চান্দের মোড়) এর আবু বক্কর সিদ্দিকির ছেলে মোঃ রায়েব সিদ্দিক (১৭)।
এ ব্যাপারে শুক্রবার রাতে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, চুড়িপট্টি এলাকায় রাজিম হোসেন হত্যাকান্ডে জড়িত সবাই শনাক্ত হয়েছে। আর সবাইকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার পেছনে কেউ থাকলে তাকেও আটকের আওতায় আনা হবে। এ ঘটনায় পরিবারের পক্ষে মামলা দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, গতকাল (১০ নভেম্বর) শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সময় আসামী মোঃ রায়হান (২০) কে ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। আসামীকে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করে ঘটনার সময় ব্যবহৃত রক্তমাখা চাকুসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও ঘটনায় জড়িত আসামী মোঃ রায়েব সিদ্দিক (১৭) কে রাতে শহরের ঘোপ সেন্ট্রাল রোড হতে গ্রেফতার করা হয় এবং ঘটনার সময় আসামী মোঃ রায়েব সিদ্দিক (১৭) এর পরিহিত রক্তমাখা শার্ট উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়। মামলাটি সদর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই মো এমরানুর কবীর তদন্ত করছেন।
এদিকে, নিহতের বাবা বাদল খান ও বড় ভাই হাফিজুর রহমান ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছেন। ঝুমঝুমপুর টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজে পড়াশুনায় মনোনিবেশ করেছিল রাজিম । তারা ভেবেছিলেন এখন নিরাপদে থাকবে রাজিম। কিন্তু দুর্বৃত্তরা তাকে প্রাণে মেরে ফেললো।